সম্পত্তি কর বাবদ বকেয়া ৩২ লক্ষ টাকা। পুরসভার এমনটাই দাবি। আইনজীবীর নোটিশ ধরানো সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই টাকা পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের অসীম সাহার। তাই শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বরে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ সাফ করার ব্যাপারে হাত গুটিয়ে নিয়েছে পুরসভা। ফলে জমা আবর্জনার পাহাড় দূষণ ছড়াচ্ছে জেলা হাসপাতালের চৌহদ্দিতে। যদিও বকেয়া করের ব্যাপারে অন্ধকারে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অধীপ ঘোষের সাফ কথা, “বিষয়টা জানিই না। পুরসভা কীভাবে এত টাকা কর বাবদ পায় তা বুঝতেই পারছি না।” |
মাস চারেক ধরে লাল, হলুদ, নীল ও কালো প্যাকেটে জমা নোংরা ডাঁই হয়ে হাসপাতালের ক্যান্টিনের পাশে স্তূপে পরিণত হয়েছে। নোংরা ফেলার জন্য বরাদ্দ ঘর ভর্তি হয়েছে বর্জ্য পদার্থ ভরা প্যাকেট চলে এসেছে মিটার তিরিশেক দূরের রাস্তায়। সাধারণ নোংরা, আবর্জনা ফেলা হয় কালো প্যাকেটে। লাল প্যাকেটের ভিতরে থাকে ব্যবহৃত ব্যান্ডেজ, তুলো, প্লাস্টার, স্যালাইন, টিউব ইত্যাদি। হলুদ প্যাকেটের মধ্যে থাকে প্লাসেন্টা (গর্ভফুল), অস্ত্রোপচারের পর বাদ পড়া দেহাংশ। নীল প্যাকেট ধারালো সূচ, সিরিঞ্জে ভর্তি থাকে। ফেলে দেওয়া বর্জ্য পদার্থের সিংহভাগই সংক্রামক। হাসপাতালে রোগ ভাল করতে এসে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের নানা ব্যাধির সংক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থের ‘দৌলতে’। আবর্জনা স্তূপের কোল ঘেঁষে ক্যান্টিন। খাওয়াদাওয়া সারতে ক্যান্টিনে ভিড় করা রোগীর বাড়ির পরিজনেরা সমস্বরে জানালেন, “একটু দমকা হাওয়া দিলেই পচা গলা মৃতদেহের মত বোঁটকা গন্ধ নাকে আসে। খাওয়াটাই মাটি হয়ে যায়।” নোংরা পাশ দিয়েই হেঁটে যেতে হয় জেলা হাসপাতালের নার্সিং হস্টেলে। দিন কয়েক আগেই হাসপাতাল চত্বরে দেখা গেল দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে নাকে রুমাল বেঁধে নার্সিং-এর ছাত্রীরা হস্টেলের দিকে যাতায়াত করছেন।
দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল চত্বরে জমে থাকা নোংরা সরানোর ব্যাপারে পুরসভা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছে তরজা। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে পুরসভা ঢাকনাওয়ালা গাড়িতে করে দূষিত বর্জ্য পদার্থ সরাবে। কিন্তু পুরসভা এক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। কৃষ্ণনগর পুরসভার পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, “জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে কর বাবদ প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিষয়টি একাধিক বার তোলা হয়েছে। এমনকী আইনজীবীর নোটিশ পযর্ন্ত পাঠানো হয়েছে। তাই স্বাস্থ্য ক্ষেত্র জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়লেও আমরা বর্জ্য পদার্থ সরাতে পদক্ষেপ করছি না।” শক্তিনগর হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দত্ত পুরসভার দাবি অংশত স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “পুরসভা কর বাবদ বেশ কিছু টাকা পায়। তবে পরিমান ৩২ লক্ষ নয়। আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনকেও জানিয়েছি। টাকা মিললেই কর বাবদ পুরসভার প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’ পুরসভা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই টানাপোড়েন কবে মিটবে জানা নেই রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকজনের। তাই আপাতত বর্জ্য পদার্থের দুর্গন্ধের দাপট সহ্য করাই ভবিতব্য তাঁদের। |