শেষ ফোনটা এসেছিল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায়। তার পরেই মোবাইল সুইচ্ড অফ হয়ে গিয়েছিল হাওড়ার ম্যাকেঞ্জি লেনের বাসিন্দা রণজিৎ সিংহের। সারারাত খোঁজাখুঁজির পরে শেষে তাঁর রক্তাক্ত মৃতদেহ মিলল হুগলির চণ্ডীতলা থানা এলাকার কাপাসহারিয়া ট্রাক স্ট্যাণ্ডের কাছে। টাকার লোভে তাঁকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে এক ট্রাক-চালক ও খালাসি।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত রণজিৎ সিংহ (৬০) হাওড়ার গোলাবাড়ি এলাকায় ম্যাকেঞ্জি লেনের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা। ঘুসুড়ির একটি বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজার ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও এক পুত্রবধূ বর্তমান। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, সোমবার রণজিৎবাবু একটি ছোট ট্রাকে চেপে তাঁর সংস্থার মালপত্র নিয়ে হুগলির দশঘরায় গিয়েছিলেন। মালপত্র পৌঁছিয়ে সেখানকার সংস্থা থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা আদায়ের পরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ওই ট্রাকেই ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সন্ধ্যায় ট্রাকের চালক ও খালাসি ফিরে এলেও তিনি ফেরেননি।
পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্তে নেমে ট্রাকের সন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যাতেই ট্রাকের চালক মহেন্দ্র সাউ এবং খালাসি কুন্দন রাম মালিকের কাছে ট্রাকটি জমা দিয়ে গিয়েছে। এই খবর শুনে ওই রাতেই প্রথমে কুন্দনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, কুন্দন প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সে জানায়, রণজিৎবাবুকে তাঁরা কোনা মোড়ে নামিয়ে দিয়ে চলে এসেছে। তার পরে কী হয়েছে তারা জানে না। কিন্তু গভীর রাতে চণ্ডীতলা থানা থেকে হাওড়া সিটি পুলিশ রণজিৎবাবুর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধারের খবর জানতে পারে। তার পরেই মঙ্গলবার সকালে লিলুয়া ও চণ্ডীতলা থানার পুলিশ কুন্দনকে নিয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে ট্রাক-চালক মহেন্দ্রকে। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, জেরায় ধৃতেরা স্বীকার করেছে, টাকার লোভেই তারা রাস্তার মধ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে রণজিৎবাবুকে। তার পরে সব টাকা লুঠ করেছে তারা।
মঙ্গলবার ম্যাকেঞ্জি লেনে গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকার পরিবেশ থমথমে। রণজিৎবাবুর বড় মেয়ে ঋতু সিংহ বলেন, “আজ সকাল ৮টায় আমরা পুলিশের কাছে জানতে পারি, বাবার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে হুগলির চণ্ডীতলায়। আমার ভাই গিয়ে দেহ শনাক্তও করেছে।” ঋতু আরও জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় তাঁর মায়ের সঙ্গে রণজিৎবাবুর শেষ কথা হয়। তার পর থেকেই রণজিৎবাবুর মোবাইল বন্ধ ছিল। রাত পর্যন্ত তিনি না ফেরায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, আজ, বুধবার ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হবে। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র ও লুঠ হওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মৃতদেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। |