সম্মিলিত ভাবে বিরোধীদের দাবি, সর্বোচ্চ আদালতের শুনানিতে যে রুপোলি রেখা দেখা দিয়েছে, তারই সূত্র ধরে টাটার সঙ্গে আলোচনায় বসুক রাজ্য সরকার। চেষ্টা হোক শিল্প ফিরিয়ে আনার। কিন্তু যাকে ঘিরে এত আলোচনা, সেই সিঙ্গুর রয়েছে নির্লিপ্তই!
সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে টাটার আইনজীবী জানিয়েছেন, সিঙ্গুরে শিল্প গড়ার ভাবনা তাঁরা ছেড়ে দেননি। পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না বলে ন্যানোর প্রথম পর্যায়ের কারখানা ওখানে করা যায়নি। টাটার এই বক্তব্যে এখনই বিরাট আশার আলো দেখছেন না শিবুরাম ধাওয়া, বিফল বাঙাল, মহাদেব দাসের মতো সিঙ্গুরের জমির মূল মালিকেরা। আদৌ কারখানা হবে কি না, না হলে অন্য কী হবে দীর্ঘ টানাপোড়েনে এ সব প্রশ্নের উত্তর এখন স্পষ্ট নয় সিঙ্গুরবাসীর কাছে।
ঘটনাচক্রে, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবারই সিঙ্গুরের রতনপুরে এসেছিলেন কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার উদ্যোগে একটি জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে। মণ্ডপে বসে বহু ক্ষণ বাউল গান শুনলেও সিঙ্গুর নিয়ে কথা বলতে চাননি শিল্পমন্ত্রী। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা তথা রাজ্যের এক প্রথম সারির মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, “টাটারা কী চান, সেটাই ঠিক করে বোঝা যাচ্ছে না! আমরা তো আগে চাই, অনিচ্ছুক কৃষকদের হাতে ৪০০ একর জমি ফিরে আসুক।” |
‘অনিচ্ছুক’দের অনেকে অবশ্য জমি-আন্দোলনের স্মৃতি পিছনে ফেলে এখন তৃণমূল নেতাদের উদাসীনতায় ক্ষোভ গোপন করছেন না। প্রকল্প এলাকায় বিঘে চারেক জমি গেলেও প্রৌঢ় শিবুরাম যেমন ক্ষতিপূরণের চেক নেননি। ‘অনিচ্ছুক’ এই কৃষক এখন সরাসরিই বলছেন, “টাটারা যদি প্রস্তাব দেয় পুরনো দামের চার গুণ টাকা দেবে, তা হলে নিয়ে নেব। দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কথা আর শুনব না!” যদিও টাটাদের এ দিনের বক্তব্যে বিশেষ ভরসা নেই শিবুরামে। তাঁর কথায়, “এত সময় নষ্ট হল! এখন কারখানা হলেও আমাদের আর কিছু উপকার হওয়ার আছে কি?” এক কালের কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতা, খাসেরভেড়ির ‘অনিচ্ছুক’ মহাদেব দাস বলছেন, “আমরা টাটাকে সিঙ্গুরে আনিনি। তাড়িয়েও দিইনি! ওরাই এক এক রকম বলছে! আমরা শুরু থেকেই বলছি, ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দিয়ে বাকি জমিতে কারখানা করো। এখনও তা-ই বলছি।”
আবার টাটার প্রকল্পের জন্য জমি দিয়ে টাকা নিয়েও আফশোস করছেন গোপালনগর সাহানাপাড়ার বিফলবাবু। তাঁর দীর্ঘশ্বাস, “পুরোটাই যেন ছেলেখেলা! আমার ছেলে-ভাইপো প্রকল্পের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। কিছুই তো হল না!” টাটাদের এ দিনের বক্তব্যের কথা জেনে গোপালনগরের বিশ্বজিৎ হাম্বির মন্তব্য, “এ সব ঘোষণায় আর কিছু এসে যায় না!”
বিরোধীরা অবশ্য প্রস্তাব দিয়েছেন, আদালতে এ দিনের ঘোষণাকে কাজে লাগিয়েই এগিয়ে যাক রাজ্য সরকার। প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেনের কথায়, “এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে টাটার সঙ্গে কথা বলুক রাজ্য সরকার।” কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মতে, “জেদাজেদির স্তর থেকে সরে এসে কৃষকদের পাশাপাশি শিল্পের স্বার্থও দেখতে হবে। এই সুযোগ রাজ্য সরকারের ব্যবহার করা উচিত।” |