প্রবন্ধ ২...
কেউ মারা গেলেই ছুটি কেন
কোর্ট খোলার সময় হয়েছে। দূর দূরান্তর থেকে ঘর্মক্লান্ত নারী-পুরুষ কোর্ট চত্বরে হাজির। জজসাহেবরা নির্দিষ্ট কক্ষে। হঠাৎ একটা হায়-হায় রব উঠল, আজ কোর্ট ফুল ডে! অর্থাৎ, আজ পুরো দিন কোর্টে কাজ হবে না। গত কাল রাতে এক জন অ্যাডভোকেট মারা গেছেন। আজ শোকদিবস। অতএব কোর্ট বন্ধ। জজসাহেবরা তাঁদের কক্ষে পুরনো কেসের পাতাগুলো দেখবেন। অ্যাডভোকেটরা বার লাইব্রেরিতে স্বর্গীয় অ্যাডভোকেট সম্বন্ধে একটা সংক্ষিপ্ত মিটিং করবেন। কেউ কেউ বাড়ির পথ ধরবেন। বিচারপ্রার্থী নারীপুরুষরা আপন ভাগ্যকে দোষ দিয়ে আবার বাদুড়ঝোলা হয়ে বাড়ি ফিরবেন। অনেক সাধ্যসাধনা করে একটা তারিখ পাওয়া গিয়েছিল। তা-ও জলে গেল। পাহাড়প্রমাণ জমে থাকা কেসগুলোর সঙ্গে আর একটা কেস যোগ হল। এটা একটা কোনও বিরল ঘটনা নয়।
বেলা হয়েছে। কর্তাবাবুরা থলি হাতে বাজারের সামনে এসেছেন। কিন্তু এ কী! বাজারে প্রবেশের গ্রিল-গেট বন্ধ। কারণ, গতকাল এক ব্যবসায়ী মারা গেছেন। আজ পূর্ণ দিবস বাজার বন্ধ থাকবে। ব্যবসায়ীরা একটা মিটিং করে শোকপালন করবেন। গল্পগুজব চলবে। তাস খেলাও চলতে পারে।
আজকাল অনেকেই নিজের গাড়ির স্থায়ী চালক রাখেন না, প্রয়োজনের সময় ঘণ্টা হিসেবে পারিশ্রমিক দিয়ে চালক নিযুক্ত করেন। শহরে গড়ে উঠেছে গাড়ি চালকদের এজেন্সি। এই ধরনের একটা এজেন্সির আমি গ্রাহক। হঠাৎ এক দিন এজেন্সির থেকে ফোনে জানলাম, আজ কোনও চালক আসবেন না। কারণ, গতকাল তাঁদের এক জন চালক মারা গেছেন। আজ তাঁরা শোকদিবস পালন করবেন। পর দিন যখন চালক এলেন, তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, গতকাল তোমরা কী করলে? সে বলল, কী আর করব। রাত্রিবেলা ফুলমালা নিয়ে প্রয়াত চালকের বাড়িতে গিয়ে শোকজ্ঞাপন করলাম। দিনের বেলাটা বাড়িতে অথবা পাড়াতে সময় কাটালাম।
বললাম, দেখো, গতকাল তোমরা একটা পূর্ণ শ্রমদিবস নষ্ট করলে। এতে কারও কিছু লাভ হল কী? গতকাল যদি তোমরা সবাই গাড়ি চালিয়ে তোমাদের পারিশ্রমিকের টাকাটা একত্র করে মৃতের পরিবারকে দিয়ে শোকজ্ঞাপন করে আসতে, তা হলে ভাল হত না? কথাটা শুনে সে বলল, খুব ভাল বলেছেন তো। আমি আজই এজেন্সিতে গিয়ে বলব।
মাস ছয়েক পার হয়ে গেছে। হঠাৎ এজেন্সির পরিচালকের ফোন পেলাম। আবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে হঠাৎ এক জন চালকের মৃত্যু হয়েছিল। এ বার তারা গাড়ি চালানো বন্ধ না-করে, গাড়ি চালিয়ে প্রায় তিরিশ জনের টাকা একত্রিত করে মৃতের পরিবারকে দিয়ে এসেছে ও শোকজ্ঞাপন করে এসেছে। পরিবারের সকলে তাদের খুব নাম করেছেন। মৃতের বৃদ্ধা মা তাদের আশীর্বাদ করেছেন। তাদের এই পদক্ষেপ এত প্রচারিত হয়েছে যে, স্থানীয় বাজার কমিটির সম্পাদক আগামী মিটিঙে তাদের ডেকেছে ওই ব্যাপারটা আলোচনা করার জন্য।
আমি অতি সাধারণ নাগরিক। বার লাইব্রেরি, বার অ্যাসোসিয়েশন, এদের কী নিয়ম আমার জানা নেই। জানি না, কোনও নিয়ম পরিবর্তন করতে পারা যায় কি না। কিন্তু কোর্ট-কাছারির সঙ্গে যুক্ত যদি কেউ মারা যান, তা হলে কোর্ট-কাছারির কাজ পূর্ণ দিবস বন্ধ না করে সেই দিনই একটা শোকসভা করে বাকি দিনটা দিনের কাজ করলে কত ভাল হয়! উকিল বা কর্মীরা সে দিন তাঁদের উপার্জনের অর্থ মৃত ব্যক্তির পরিবারকে দেন, কিংবা, সেই পরিবার তা গ্রহণ না করতে চাইলে অনাথ আশ্রম বা সমাজসেবী সংগঠনকে মৃত ব্যক্তির নামে দান করে তাঁর আত্মার প্রতি সম্মান জানান, ভাল হয় না কি? বাজারের কোনও ব্যবসায়ী যদি মারা যান, তা হলেও কি এই পন্থা অবলম্বন করা যায় না?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.