|
|
|
|
ফিরবে না বাবা, জন্মদিনের দুপুরেই খবর পেল ঝিলিক |
সুশান্ত বণিক • চিরকুন্ডা (ঝাড়খণ্ড) |
হ্যাপি বার্থ ডে মামনি..।
ফোনে বাবার গলায় কথাটা শোনার জন্য দিল্লিতে বসে আনচান করছিল মেয়ে।
ফোনটা আর এল না। বাবা যে তখন খনিগর্ভে চাঙড়ের তলায় চাপা।
ঝাড়খণ্ডের চিরকুন্ডায় বাসন্তীমাতা খনিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের (৫১) দেহ মিলল মঙ্গলবার বিকেলে। সোমবার জন্মদিনের দুপুরে বাবার দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরে এ দিন ভোরে বাড়ি ফেরেন তাঁর বছর আঠেরোর বড় মেয়ে ঝিলিক। ঘরে ঢুকে সেই যে দরজা দেন, দীর্ঘক্ষণ সাড়া মেলেনি।
খনির চাল থেকে গুঁড়ো ঝরছে, এ কথা শুনে ভূগর্ভে নেমেছিলেন অরূপবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন খনিকর্মী ওসমান সিংহ। তিনি বলেন, “হঠাৎ চাল ধসার বিকট আওয়াজ শুনে দৌড়তে শুরু করি। তখনও বুঝিনি, স্যার চাপা পড়েছেন।” দুর্ঘটনার দিনই উদ্ধার হয়েছিল খনিকর্মী হরি লালের দেহ। এ দিন ভোরে মেলে লিটু সাহু (৫০) ও সীতারাম মাজির (৫১) দেহ। বিকেলে যখন অরূপবাবুর দেহ তোলা হয়, কান্নার রোল ওঠে উপস্থিত শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যে।
অরূপ চট্টোপাধ্যায় |
কোলিয়ারি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বিসিসিএলের আবাসনে স্ত্রী ঝিনাইদেবী ও ছোট মেয়ে, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পায়েলকে নিয়ে থাকতেন অরূপবাবু। মাসখানেক আগে ঝিলিককে দিল্লির কলেজে ভর্তি করেন। কথা ছিল, সোমবার অরূপবাবু বাড়ি ফিরলে সকলে বড় মেয়েকে ফোনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন। তা আর হয়নি। এ দিন সকাল পর্যন্ত ঝিনাইদেবী জানতেন, খনিতে দুর্ঘটনার জন্য স্বামী বাড়ি ফেরেননি। কিন্তু তিনি প্রতিবেশীদের কাছে দুঃসংবাদ শোনার পর থেকে আর কথা বলছেন না। পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক, সম্পর্কে অরূপবাবুর জ্যেঠতুতো দাদা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওঁর স্ত্রী, মেয়েদের সামনে যেতে পারছি না।”
অরূপবাবুর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন সহকর্মী সুপ্রিয় বসু ও বিভাস রায়েরা। সুপ্রিয়বাবু বলেন, “১৯৯৩ সালে আমরা এক সঙ্গে এই খনিতে যোগ দিই। পরে আমি এরিয়া অফিসে বদলি হই। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে অরূপকেই ফোন করেছিলাম। লাইন পাইনি।”
এ দিন সন্ধ্যায় ময়না-তদন্তের জন্য অরূপবাবু-সহ চার জনের দেহ নিয়ে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স রওনা হয় ধানবাদের দিকে। বাড়িতে নির্বাক বসে মা-মেয়ে। |
|
|
|
|
|