দামে লাগাম দিতে বাজারে এ বার সরকারি সব্জি
লুর পরে শহরের পুর-বাজারে এ বার সব্জি বিক্রির ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। লক্ষ্য, ফড়ে ছাড়াই সরাসরি চাষির কাছ থেকে সব্জি ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া। তাতে দরেও সস্তা হবে এবং চাষিরাও কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন বলে মনে করছেন সরকারি কর্তারা। মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের উদ্যান পালন দফতর ও কলকাতা পুরসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সব্জির অগ্নিমূল্যের কথা ভেবেই সরকার-অনুমোদিত চাষি সমবায়কে শহরে সরাসরি সব্জি বিক্রি করার কাজে যুক্ত করার এই উদ্যোগ।
এ দিন পুরসভার বাজার দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার উদ্যান পালন অফিসার। সেখানে ঠিক হয়েছে, দিন চারেকের মধ্যেই শহরের ১৮টি বাজারে একটি করে সব্জির দোকান চালু হবে। সেখানে নানা ধরনের সব্জি বিক্রি করবেন চাষিরাই। পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ বলেন, “উত্তর কলকাতায় ৬টি এবং দক্ষিণ কলকাতার ১২টি বাজারে পুরসভা জায়গা দেবে। সেখানেই চাষিরা সব্জি বিক্রি করবেন।” উদ্যান পালন দফতরের দাবি, বাজারের অন্য ব্যবসায়ীদের চেয়ে ওই দোকানগুলিতে কেজি প্রতি অন্তত তিন থেকে পাঁচ টাকা কমে সব্জি পাবেন ক্রেতারা।
সম্প্রতি আলুর দর অস্বাভাবিক বাড়তে থাকায় রীতিমতো সমস্যায় পড়েন ক্রেতারা। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জ্যোতি আলুর দর কেজি প্রতি ১৩ টাকায় বেঁধে দেন। সেই নির্দেশ পালন করতে সরকার শহরের বাজারগুলিতে খুচরো ব্যবসায়ীদের হাতে ১১ টাকা কিলো দরে আলু তুলে দেয়। শর্ত, ১৩ টাকা কিলো দরে তা বিক্রি করতে হবে। সেই ব্যবস্থা এখনও চলছে। এ দিকে, আলুর পাশাপাশি অন্যান্য সব্জির দরও চরম বেড়েছে বলে ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ পৌঁছেছে সরকারের কাছে। টাস্ক ফোর্সের একাধিক সদস্য অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেননি। বরং বলেছেন, “একটু অপেক্ষা করুন। শীতের সব্জি বাজারে ঢুকলেই দাম কমবে।” উদ্যান পালন দফতরের এক কর্তা বলেন, “অন্য বছরের তুলনায় এ বার সব্জির দর অনেকটাই বেড়েছে। এবং সেই দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাতে লাগাম দিতে শহরের কয়েকটি বাজারে চাষিদের মাধ্যমে সব্জি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।”
কিন্তু এত দেরিতে কেন? ওই কর্তার কথায়, “সরকারি নির্দেশ মেনেই কাজ হচ্ছে। এ সব করতে হলে কিছুটা সময় লাগেই। এর বেশি আর কিছু বলা সম্ভব নয়।” যদিও পুরসভার এক অফিসার বলেন, “আলুর দর নিয়ন্ত্রণের সময়েই সব্জি বিক্রি শুরু হলে অনেকে উপকৃত হতেন।”
কারা বিক্রি করবেন ওই সব্জি?
উদ্যান পালন দফতর সূত্রের খবর, সরকারের উদ্যোগে রাজ্যের সাতটি জেলায় আগ্রহী চাষিদের নিয়ে সব্জি উৎপাদক সংগঠন (ভেজিটেবল প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন) গড়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ১০-১৫ জন চাষিকে নিয়ে এমন এক একটি সংগঠন হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়-২ নম্বর ব্লকে ১৭৫০ জন চাষি যুক্ত হয়েছেন। উত্তরে বারাসত-২, হাবড়া-২ ও আমডাঙায় ওই কাজে নেমেছেন ১২৫০ জন চাষি। এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত চাষিদের উদ্যান পালন দফতর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এমনকী চাষের কাজে ভতুর্কিও দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই নিজেদের জমিতে সব্জির চাষ করেন। সেই সব্জি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতে গাড়ি কেনার জন্যও ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। সেই গাড়িতেই সব্জি নিয়ে বাজারে সরবরাহ করেন চাষিরা। এমনকী, সব্জি সতেজ রাখতে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িও দেওয়া হয়েছে চাষিদের।
কী কী সব্জি মিলবে পুর-বাজারে?
উদ্যান পালন দফতর সূত্রের খবর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং, উচ্ছে, বেগুন, শিম, ঢ্যাঁড়স-সহ আলু ও পেঁয়াজও বিক্রি করবেন চাষিরা। দফতরের আধিকারিকদের দাবি, চাষিদের থেকে সরাসরি সব্জি বাজারে এলেই অন্য ব্যবসায়ীরাও কিছুটা দাম কমাতে বাধ্য হবেন। কিন্তু কম দরে বিক্রি করলে বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা তাঁদের বাধা দেবেন না তো?
এমন ঘটনা যে হয়নি তা নয়, জানালেন পুরসভারই এক কর্তা। তাঁর কথায়, “সম্প্রতি শ্যামবাজারে ওই চাষিরা একটা দোকান খুলেছিলেন। দু’দিন পরেই ওই বাজারের কয়েক জন ব্যবসায়ী তাঁদের ভয় দেখিয়ে তুলে দেন।” যদিও এ বার কেউ তা করলে পুর-প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তারকবাবু জানিয়েছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.