এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্তারা বাজারে ঘুরলেও সব্জির দাম এখনও লাগামছাড়া। শনিবার শিয়ালদহের খুচরো বাজারে বেগুনের দর ছিল প্রতি কিলোগ্রাম ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা। পুজোর দিনগুলিতে ক্রেতার হাত পুড়েছে সব্জির দামে। অনেকেই ভেবেছিলেন পুজোর পর হয়তো দর কিছুটা কমবে। কিন্তু তার লক্ষণ নেই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, পুজোর সময় সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিন্তু তা কার্যকর করতে না পেরে গত সপ্তাহ থেকে শহরের বিভিন্ন বাজারে সব্জির দর নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযান শুরু করে এনফোর্সমেন্ট শাখা। ওই দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, “আমাদের উপস্থিতিতে সাময়িক ভাবে দাম কমাচ্ছে। বাজার থেকে চলে যাওয়ার পর ফের তা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।” অর্থাৎ এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্মীরা যতই অভিযান চালান, দাম নিয়ন্ত্রণ করা যে কঠিন কাজ, হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছেন তাঁরা। ওই কর্তাদের মতে, পাইকারি বাজারে দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেখান থেকে সব্জি কেনেন, সেই বাজারগুলিতে দর কমছে না। কেন কমছে না, তা জানতে এনফোর্সমেন্ট কর্তাদের সঙ্গে এ দিন বাজারে ঘোরেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের সচিব চন্দ্রমোহন বাচোয়াত। |
সব্জির দর নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বছর খানেক আগেই একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন। মাছ বা মাংসের দাম বাড়ার পরে একাধিক বার সক্রিয় হয়েছে ওই টাস্ক ফোর্স। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও টাস্ক ফোর্সের কাছ থেকে নিয়মিত সব্জি, মাছ ও মাংসের বাজার দর নিয়ে খোঁজ নেন। কখনও বা টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে হাজির থেকে দাম কমানো নিয়ে নানা নির্দেশ দেন।
কিন্তু পুজোর ঠিক আগে থেকে যে ভাবে সব্জির দাম বাড়ছে তাতে চরম অসুবিধায় পড়েছেন অনেকেই। এমনকী টাস্ক ফোর্সও কোনও মতেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের মতে, নভেম্বরে নতুন সব্জি না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভবনা কম। স্বভাবতই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
সব্জির দর নিয়ন্ত্রণে আনতে এ দিন প্রথম পথে নামলেন খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ দফতরের সচিব। তিনি বলেন, “দর নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিন ধরে তা চলবে। শহরের প্রতিটি বাজারে ঘুরবে এনফোর্সমেন্টের লোকজন।” টাস্ক ফোর্সের এক সদস্য জানান, কোনও সব্জি-বিক্রেতা বেশি দাম নিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চালু হলেই সব্জির বাজারে দর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন একাধিক সরকারি অফিসার।
এ দিন কোলে মার্কেটে ঘুরে সরকারি অফিসারেরা দেখেছেন, পাইকারি বাজার দরের চেয়ে খোলা বাজারের কোথাও কোথাও তিন-চার গুণ বেশি দরে সব্জি বিক্রি হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দেননি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সচিব। তবে সচিব ও অন্য সরকারি অফিসারেরা কোলে মার্কেট ঘুরে দেখেছেন, আদার পাইকারি মূল্য ছিল পাল্লা (৫ কেজি) প্রতি ৩৫০ টাকা (অর্থাৎ দর পড়ছে প্রতি কিলোগ্রাম ৭০ টাকা)। আর ওই বাজার লাগোয়া খোলা বাজারে পাঁচ কিলোগ্রামের দাম ৫০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোগ্রাম ১০০ টাকা। আবার সেই আদা মানিকতলা, বিধাননগরে বিকোচ্ছে প্রতি কিলোগ্রাম ১৮০ টাকায়। লঙ্কার দর কোলে মার্কেটে পাল্লা প্রতি ১২০ টাকা, অর্থাৎ কেজি প্রতি ২৪ টাকা। বাইরেই তা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৪০ টাকা দরে। শহরের কোনও কোনও বাজারে তার দাম হয়ে যাচ্ছে কেজি প্রতি ১০০ টাকাও। পেঁয়াজ (বড়) কোলে মার্কেটে যেখানে ৪৫ টাকা কেজি সেখানে ওই বাজারেরই বাইরে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। শহরের অন্য বাজারগুলিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। বেগুনের পাইকারি দর ছিল প্রতি কিলোগ্রাম ৫০ টাকা। খোলা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। |