|
|
|
|
মূক-বধিরদের এগিয়ে যেতে সাহস জোগাচ্ছে বিশেষ স্কুল |
অর্পিতা মজুমদার • দুর্গাপুর |
আর পাঁচটা শিশুর মতো শিক্ষার অধিকার রয়েছে ওদেরও, কিন্তু সেই ন্যূনতম শিক্ষা পেতেও কড়া নাড়তে হয় আইনের।
‘পার্সন উইথ ডিসেবিলিটি’ আইনে মূক ও বধির শিশুরাও স্কুলে ভর্তির যোগ্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই স্কুল তাদের ভর্তি নিতে চায় না বলে অভিযোগ। যেমন, আসামের হর্ষবর্ধন চান্ডক। জন্ম থেকেই সে বধির। তিন বছর বয়স পর্যন্ত কথাও বলতে পারত না। পরে মা-বাবার চেষ্টায় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে কানে বিশেষ যন্ত্র লাগিয়ে কথা বলতে শেখে। ২০১২ সালে আসামের শিলাপাথারের একটি বেসরকারি স্কুলে তাকে ভর্তি করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁর বাবা-মায়ের দাবি, ওই স্কুল থেকে সাফ জানানো হয়, এটা মূক-বধিরদের স্কুল নয়। হর্ষবর্ধনের বাবা-মায়ের নানা যুক্তি, পিডব্লিউডি আইনের উল্লেখ কোনও কিছুতেই তাকে স্কুলে ভর্তি নিতে চাননি কর্তৃপক্ষ। পরে চান্ডক পরিবারের তরফে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। শিক্ষার অধিকার আইনে, আদালতের নির্দেশে হর্ষবর্ধনকে স্কুলে ভর্তি নিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। |
|
চলছে প্রশিক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু স্কুলে ভর্তি হলেই যে সমস্যা মেটে তা নয়। শুরুর দিকে অসুবিধে না হলেও পরে ক্লাসের আর পাঁচটা বাচ্চার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারে না শিশুটি। ফলে হীনমন্যতা তৈরি হয়। সুস্থ জীবনে ফেরার বদলে আরও পিছিয়ে পড়ে শিশুটি। কিন্তু কিছু সংস্থা রয়েছে যাদের কাছে এ ধরণের মূক-বধির শিশুদের সুস্থ জীবনে ফেরানোটাই ব্রত। যেমন, দুর্গাপুরের ‘সাহস’। এই সংস্থার কর্ণধার মধুমিতা জাজোরিয়া ও শম্ভুনাথ জাজোরিয়া জানান, ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিতে দিতে এক সময় এই বাচ্চারাই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। যেমন, রঘুনাথপুরের অভিরূপ আচারি। মূক বধির হলেও ক্রমাগত প্রশিক্ষণ নিয়ে সে এখন শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেসু) ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। যেমন, রানিগঞ্জের মেঘা। হায়দরাবাদের ‘নিফট’-য়ে টেক্সটাইল ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছে। যেমন, মেদিনীপুরের বাসিন্দা তপন পাণ্ডব ও সাগরিকা পাণ্ডবের ছেলে শিবম। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে মেদিনীপুরের একটি নামী স্কুলে পড়ছে সে।
কিন্তু হঠাৎ জাজোরিয়া দম্পতি এ কাজে উদ্যোগী হলেন কেন? দুর্গাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা মধুমিতা জাজোরিয়া ও ব্যবসায়ী শম্ভুনাথবাবু জানান, তাঁদের একমাত্র সন্তান অংশুমান জন্ম থেকেই বধির। কথাও বলতে পারে না। ছেলেকে সুস্থ করার জেদ নিয়ে তাঁরা পাড়ি দিলেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও লস অ্যাঞ্জেলসে। সেখানকার ‘জন ট্রেসি ক্লিনিক’ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এলেন দেশে। সেই অভিজ্ঞতাই প্রয়োগ করলেন অংশুমানের উপর। বেশ কিছু দিন প্রশিক্ষণ চলার পরে একসময় অংশু সাড়া দিল। আর পাঁচটা বাচ্চার মতো কথাও বলতে শিখল। কিন্তু তাঁকে স্কুলে ভর্তি নিতে শহরের অনেক স্কুলই রাজি হয়নি। তবে একটি নামি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষ সাদরে তাকে কাছে টেনে নেন। সেই শুরু আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি অংশুমান জাজোরিয়াকে। এমএসডব্লিউতে মাস্টার ডিগ্রি করে এখন সে ব্যাঙ্গালুরুতে একটি বহুজাতিক সংস্থায় এইচআর বিভাগে উচ্চপদে কর্মরত। শম্ভুনাথবাবুর কথায়, “আমার ছেলে আর পাঁচজনের মতো হয়ে জন্মালেও এরকমই কিছু একটা করত। আমার কোনও খেদ নেই।” তবে হর্ষবর্ধনের মতো অনেকেই যে এখনও স্কুলে ভর্তি হতে সমস্যায় পড়ে সে কথা স্বীকার করেন তিনি। তবে তাঁর আশা, সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গী বদলাবে। ‘সাহসে’র সঙ্গে আরও অনেকেই সুস্থ জীবনে ফিরে আসবে। |
|
|
|
|
|