হানা বারবার, তবু ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ
সিবিআই হানা দেয় বারবার। সাধারণ কর্মী থেকে আধিকারিক, দুর্নীতির অভিযোগে নানা সময়ে ধরাও পড়েছেন অনেকে। তবু ফের উঠেছে এই ধরনের অভিযোগ। এক দিকে যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে বেআইনি কয়লা কারবার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন, সেই সময়ে সেই এলাকায় কর্মরত রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলে বারবার সামনে এসেছে দুর্নীতির অভিযোগ।
গত ৭ নভেম্বর নরসমুদা কোলিয়ারির ম্যানেজার প্রভাতকুমার ঝা-কে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে সিবিআই। বদলির নির্দেশ রদ করে দেওয়ার জন্য কোলিয়ারিরই এক কর্মীর কাছ থেকে তিনি টাকা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি ওই কর্মী তাদের জানালে তাঁকে ঘুষ নেওয়ার সময়ে হাতেনাতে ধরা হয় বলে সিবিআই সূত্রে খবর। ইসিএলের দুর্নীতি দমন সচেতনতা সপ্তাহের শেষ দিনে গ্রেফতার হওয়ার পরে ওই আধিকারিক এখন ১৪ দিনের জন্য জেল-হাজতে রয়েছেন।
গত ১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন সচেতনতা সপ্তাহে নরসমুদায় কর্মীদের শপথগ্রহণ
করান প্রভাতকুমার ঝা। ৭ নভেম্বর গ্রেফতার হন তিনিই। —নিজস্ব চিত্র।
প্রভাতবাবুর আগেও অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআইয়ের জালে ধরা পড়েছেন সংস্থার বেশ কিছু কর্মী-আধিকারিক। ইসিএলেরই একটি সূত্রে জানা যায়, এ ভাবে বার দশেক সংস্থার নানা কোলিয়ারিতে অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। ২০০৮ সালে সোদপুর এরিয়ার পারবেলিয়া কোলিয়ারিতে এক ঠিকাদারের কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এরিয়া ইঞ্জিনিয়ার সহদেব মাজিকে। বরাত পাওয়া একটি কাজ শেষ করে জমা রাখা টাকা ফেরত চেয়েছিলেন ওই ঠিকাদার। সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সহদেববাবু তাঁর কাছে ঘুষ চান বলে অভিযোগ। গ্রেফতার হওয়ার কিছু দিন পরে জামিন পেয়ে ফের স্বপদে বহাল হন তিনি। অবসরও নিয়েছেন। মামলা এখনও চলছে। ঘটনাচক্রে, পারবেলিয়ায় এই কাণ্ডের সময়ে সেখানকার ম্যানেজার ছিলেন প্রভাতবাবুই।
২০০৭ সালে হরিপুর কোলিয়ারিতে পার্সোনেল ম্যানেজার শান্তনু চট্টোপাধ্যায় পছন্দ মতো জায়গায় বদলি করার জন্য কর্মীদের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে শান্তনুবাবুকে বদলি করা হয় ইসিএলের সদর দফতরে তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত বিভাগে। ঘুষের মামলা এখনও চলছে। ২০০৯ সালে রাজমহল এরিয়ার ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার অরুণ কুমারকে গ্রেফতার করে সিবিআই। নিম্নমানের সামগ্রী বেশি দামে কিনে সংস্থার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সেই মামলাও চলছে। অরুণবাবু এখন সংস্থার শোনপুর বাজারি প্রকল্পে একই রকম দায়িত্বে রয়েছেন। ওই বছরেই এক ঠিকাদারকে ন্যায্য বকেয়া পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় কুনস্তরিয়া এরিয়ার অ্যাকাউন্ট অফিসার সমর চক্রবর্তীকে।
বাড়ি থেকে হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তি মেলার অভিযোগে হরিপুর কোলিয়ারির কর্মী সুখময় রানা, ঝাঁঝরা প্রজেক্টের কর্মী শিশির মণ্ডলদের নানা সময়ে ধরেছে সিবিআই। ছাড়া পেয়ে একই পদে বহাল হন তাঁরা। ২০০৭ সালে কুমারডি-এ কোলিয়ারির পিএফ ক্লার্ক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে হাতেনাতে ধরে সিবিআই। কেন্দা এরিয়ার জিএম পুলকবরণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মাটি-পাথর মিশিয়ে মজুত কয়লার পরিমাণ বেশি দেখানোর অভিযোগে মামলা করে তারা। পরে পুলকবাবু ইস্তফা দিয়েছেন। শ্রীপুর এরিয়ায় এজেন্ট এস এন সিংহের বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
নরসমুদা কোলিয়ারি থেকে প্রভাতবাবুকে ধরার পরে তাঁর বিরুদ্ধে যে কর্মী অভিযোগ করেছিলেন, সেই সাগর মাজিকে রীতিমতো অনুষ্ঠান করে সংবর্ধনা দিয়েছেন সহকর্মীরা। কোলিয়ারির আইএনটিটিইউসি নেতা সঞ্জয় মাজির দাবি, ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কর্মীদের অনেক দিন ধরেই নানা ক্ষোভ ছিল। অভিযোগ, পদাধিকার বলে তিনি কর্মীদের দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত নানা কাজ করাতেন। তাঁর বাড়ির কাজ করলেও ওই কর্মীদের হাজিরা নথিভুক্ত হয়ে যেত খনির খাতায়। এ ছাড়া প্রাপ্য নানা সুযোগ-সুবিধা পেতে হলেও তাঁকে ঘুষ দিতে হত বলে কর্মীদের দাবি। ২০১০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে খনি কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও করা হয়েছিল বলে জানান সঞ্জয়বাবু।
সিবিআইয়ের হাতে বারবার খনির কর্মী-আধিকারিকদের ধরা পড়া প্রসঙ্গে সিটু নেতা মনোজ দত্তের মন্তব্য, “কয়লা কেলেঙ্কারিতে যেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানে ইসিএলে এমন হওয়ায় আশ্চর্যের কিছু দেখি না। তবে সংস্থা কর্তৃপক্ষের কড়া হাতে এর প্রতিকারে উদ্যোগী হওয়া উচিত।” আইএনটিইউসি অনুমোদিত কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “সংস্থার উচ্চ স্তরের একাংশ পরোক্ষে এ সবের সঙ্গে যুক্ত বলেই হয়তো সিবিআই বারবার হানা দেওয়া সত্ত্বেও ফের এমন ঘটছে। তা না হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মামলা চলাকালীন অভিযুক্তদের একই পদে রাখার ঘটনা ঘটত না।” আইএনটিটিইউসি নেতা গুরুপ্রসাদ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “যেখানে সরকার বেআইনি কয়লা পাচার বন্ধ করতে চাইছে, সেখানে ইসিএলের মধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সংস্থা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা উচিত।” আসানসোলের বাসিন্দা, কবি বিকাশ গায়েনেরও মতে, “সংস্থার তরফে কড়া পদক্ষেপ না করলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।”
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “সিবিআইয়ের কাছে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে সংস্থা ব্যবস্থা নেয়নি, এই অভিযোগ ঠিক নয়। এস এন সিংহ-সহ একাধিক কর্মী-আধিকারিকদের কম গুরুত্বের পদে বহাল করা হয়েছে। এখন যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সংস্থাও তা খতিয়ে দেখবে।” সংস্থার উচ্চস্তরের একাংশের পরোক্ষে এ সবের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে নীলাদ্রিবাবুর বক্তব্য, “নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের অভিযোগ করা উচিত নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.