সীমান্ত লাগোয়া বাগান থেকে চা পাতা চুরি, ক্ষোভ |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকা ছোট চা বাগানগুলি থেকে প্রতি রাতে চা পাতা চুরির অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়িতে। জেলা সদর লাগোয়া নগর বেরুবাড়ি থেকে রাজগঞ্জ ব্লকের গাদরা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার জুড়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় অন্তত ১ হাজারটি ছোট চা বাগান রয়েছে। চলতি বছর চা-মরসুম অর্থাৎ মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ৬ মাসে ওই বাগানগুলি থেকে অন্তত ৭০ হাজার কেজি চা পাতা চুরি হয়েছে বলে জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির অভিযোগ। যার আর্থিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা।
সীমান্ত জুড়ে ফ্লাড লাইট রয়েছে। রাতভর বিএসএফের টহলদারিও রয়েছে। তবু সীমান্ত এলাকার ছোট চা বাগান থেকে প্রতিদিনই কেন চা পাতা চুরির ঘটনা ঘটছে সে প্রশ্ন তুলেছেন চা চাষিরা। চা পাতার সঙ্গেই, বাগানে জলসেচের সরঞ্জামও চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিএসএফ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ করে সোমবার জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় সমিতি। এ দিন জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের দফতরে সমিতির তরফে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সমিতির তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চুরির ঘটনা জারি থাকলে জলপাইগুড়ি জেলার সীমান্ত এলাকার চা বাগানগুলির কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে খোঁজ নিতে হবে। অভিযোগের বিষয়টি বিস্তারিত খতিয়ে দেখে, সীমান্তের ভৌগোলিক বিন্যাস পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে নিশ্চই পদক্ষেপ করা হবে।”
জলপাইগুড়ি জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় ৭ হাজার একর জুড়ে ছোট চা বাগান গড়ে উঠেছে। জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি জানিয়েছে, এই জমিগুলি সবই সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারের ভারতীয় ভূখণ্ডে। দু’দেশের সীমান্তের মাঝখানে থাকা জিরো পয়েন্ট থেকে কাঁটাতার পর্যন্ত দেড়শো গজ জমির মধ্যেই বাগানগুলি রয়েছে। এই বাগানগুলিতে কাজ করা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। জেলার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে বাগানগুলিকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি চুরির ঘটনা বেড়ে চলায় উদ্বেগে ওই চা বাগান মালিকেরা।
অভিযোগ, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা তো বটেই এ পারেরও কিছু ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে কাঁটাতারের বেড়া কেটে চা পাতা চুরির ঘটনায় জড়িত। রাতে বাসিন্দাদের পক্ষে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে যাওয়া সম্ভব না হলেও, বিএসএফের টহলদারি থাকে। একাধিকবার স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্পেও অভিযোগ করলে কোনও ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি সে প্রশ্নও তুলেছে সমিতি। যদিও, বিএসএফের নর্থবেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের মুখপাত্র নন্দীশ কুমার বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে হচ্ছে। ওই চা বাগান মালিকেরা নির্দিষ্ট ভাবে কোনও অভিযোগ করেছেন কিনা তা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী এ দিন বলেন, “প্রশাসন, বিএসএফ সকলকেই একাধিকবার এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনও ফল মেলেনি। বাধ্য হয়ে সীমান্ত এলাকার চা বাগানগুলি বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। নিজের দেশের জমিতে অনুমতি নিয়ে চাষ করার পরেও কেন এত প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হবে তা বুঝতে পারছি না।” |