বাগানে অসাধু শ্রমিক নেতা, অসন্তোষ মন্ত্রীর |
বন্ধ বাগানে পাতা তোলার কাজ পরিচালনায় যুক্ত শ্রমিক নেতাদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। সোমবার ডুয়ার্সের রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে মন্ত্রী ওই অভিযোগ করেন।
ওই বন্ধ বাগানে চা পাতা তোলার কাজ করাচ্ছে একটি কমিটি। যার নাম অপারেটিং ম্যানেজমেন্ট কমিটি (ওএমসি)। শ্রমমন্ত্রীর অভিযোগ, “ওএমসি-র মাধ্যমে বাগানে অসাধু নেতাদের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। কারণ, কত টাকা দিয়ে চা পাতা বিক্রি করা হল ও কত টাকা শ্রমিকরা পান সেই হিসেব শ্রমিকদের দেওয়া হয় না।” সেই সঙ্গে রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানের ওএমসির কাছে পাতা বিক্রির হিসেবও চেয়েছেন মন্ত্রী। নতুন করে বাগানে ওএমসি তৈরির জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। |
বাগান শ্রমিকদের কথা শুনছেন মন্ত্রীরা। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
ওই বাগানে এখন অবশ্য ওএমসি নেই। এক মাস ধরে বন্ধ হয়ে থাকা রেড ব্যাঙ্ক-সহ একই মালিকানাধীন সুরেন্দ্রনগর ও ধরনীপুর বাগানে কাঁচা পাতা তোলা হচ্ছে না। তবে ডুয়ার্সের এক সিটু নেতার নাম করে শ্রমমন্ত্রী অভিযোগ করেন, “একটি বাগানের প্রধান করণিক তথা সিপিএম প্রভাবিত কো অর্ডিনেশন কমিটির নেতা দেবব্রত পাল ছিলেন ওই কমিটির অন্যতম এক জন।” দেবব্রতবাবু সরাসরি অভিযোগের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “যা হিসাব দেওয়ার তা সে সময় বিডিও-কে দিয়ে দিতাম। শ্রমিকরা তা জানতেন। প্রয়োজনে আবার সেই হিসেব দেব।” রেডব্যাঙ্কে নতুন করে ওএমসি তৈরি হোক তা চান না তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন। বাগানে গিয়ে তিনি বলেন, “এই বাগানে ওএমসি তৈরির আমরা ঘোর বিরোধী। আমরা চাই বাগানের অচলাবস্থা কাটাতে স্থায়ী সুরাহা হোক।” সিটুর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক জিয়াউল আলম অবশ্য দাবি করেন, বাম আমলে সরকার ওএমসি তৈরি-সহ নানা পদক্ষেপ না করলে বন্ধ বাগানগুলি শ্মশানে পরিণত হতো। নেতারা সেখান থেকে টাকা কামিয়েছেন বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
এ দিন রেড ব্যাঙ্ক বাগানের মালিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের পাঁচ কোটি টাকার বেশি টাকা পাওনা গণ্ডা না মেটানোর অভিযোগে শ্রমমন্ত্রী আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পাওনা গণ্ডা নিয়ে মালিককে বৈঠকে ডাকা হবে। সেখানে তার সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি না এলে আইনি ব্যবস্থা নেব আমরা।” রেডব্যাঙ্ক ও অপর দুই বাগানে গত এক মাসে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাবার পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার দুপুরে খাদ্যমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী-সহ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ওই বাগানে যান। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “এই বাগানে অন্ত্যোদয় যোজনার চাল ও গম দেওয়া হচ্ছে। যারা রেশন কার্ড পান নি এমন ৫৫০ জনকে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন কার্ড দেওয়া হবে।”
এ দিন বিকেলে ডুয়ার্সের বন্ধ বাগান নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। পরে জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, রেডব্যাঙ্ক চা বাগানে অনাহারে মৃত্যুর কোনও ঘটনা ঘটেনি। রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর রেডব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্রনগর এবং ধরণীপুর চা বাগানে শ্রমিকদের রেশনের বরাদ্দ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, রেডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে হাজির না হলে বাগান মালিককে কলকাতায় ডাকা হবে। গত শনিবার মালবাজারে বন্ধ হওয়া নিদাম চা বাগান নিয়ে আগামী বুধবার মালবাজারে সহকারি শ্রম দফতরে বৈঠক হবে।
|