পশ্চিমবঙ্গকে এক লপ্তে ৮২৯টি বাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল কেন্দ্র।
তিন দিন আগেই নতুন বাস চেয়ে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে লিখেছিল রাজ্য পরিবহণ দফতর। লাল ফিতের ফাঁসে যাতে বিষয়টি আটকে না থাকে তার জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উদ্যোগেরই সুফল পাওয়া গেল আজ। অনেকেই মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগে মমতাকে ইতিবাচক বার্তা দিতেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ।
কিন্তু বাসভাড়া না বাড়ায় লোকসানের জেরে এ রাজ্যে বহু বাস বসে গিয়েছে। তার সমাধান না হলে শুধু বাসের সংখ্যা বাড়িয়েই পরিবহণ সমস্যা মেটানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভাড়া না বাড়ায় বাস বসে যাওয়ার সমস্যার কথা এ দিন প্রকারান্তরে মেনেছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। এ দিনের বৈঠকে পরিবহণ ক্ষেত্রে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। তবে ভাড়াবৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে কথা হয়নি বলে জানান মদনবাবু। তাঁর আশা, ছ’মাসের মধ্যে নতুন বাসগুলি চলে এলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।
মন্ত্রী জানান, কলকাতার জন্য ৬৩২টি, দুর্গাপুর ও আসানসোলের জন্য ৯৭টি এবং শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির জন্য ১০০টি বাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। উত্তরবঙ্গের জন্য বরাদ্দ বাসের মোট দামের আশি শতাংশ অর্থ বহনেও রাজি হয়েছে তারা। এর আগে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ব্যক্তিগত মালিকানায় বাস চালানো হলেও, সম্প্রতি রাজ্য পরিবহণ দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী দিনে বিভিন্ন সরকারি নিগমকে দিয়েই বাস চালানো হবে। মদনবাবুর কথায়, “নতুন বাসগুলির মালিক হবে সরকার। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন না হওয়ায় ইচ্ছে মতো বাস বসিয়ে দিতে পারবে না কেউ।”
কিন্তু এতেই কি রাজ্যের বাসের সমস্যা পুরো মিটবে? পরিবহণ কর্তাদের একাংশের শঙ্কা, সরকারের চাপে পড়ে নিগম বাস চালাতে বাধ্য হয়তো হবে। কিন্তু ভাড়া না বাড়লে এক দিকে যেমন লোকসানে জেরবার নিগমগুলি আরও পঙ্গু হয়ে পড়বে, তেমনই অন্য দিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অচিরেই লজঝড়ে হয়ে পড়বে বাসগুলি। তাঁরা বলছেন, গত এক বছরে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের প্রায় ৩০০ বাস রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বসে গিয়েছে। ভাড়া না বাড়লে নতুন বাসগুলির ভবিষ্যৎও একই হতে পারে।
এক বছরে ডিজেলের দাম বেড়েছে আট বার। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যন্ত্রাংশের দাম, রক্ষণাবেক্ষণের খরচও। কিন্তু তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসভাড়া বাড়েনি। ভাড়া বাড়ানো নিয়ে কালীপুজোর পরে বাসমালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও এখনও সবুজ সঙ্কেত দেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে আজ যে ভাবে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্যের জন্য দরাজ-হস্ত হয়েছে, তাতে খুশি পরিবহণ কর্তারা। চলতি বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দেশে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় প্রায় নতুন দশ হাজার বাস চালু করা হবে বলে কথা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন রাজ্য যখন নিজেদের রিপোর্টই জমা দিয়ে উঠতে পারেনি, তখন রাজ্যের পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে তিন দিন আগে ওই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। তার পরে আজ জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। মন্ত্রকের বক্তব্য, আজ রাতেই বেশ কিছু দিনের জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন সচিব সুধীরকৃষ্ণণ। তাই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে আজই বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৈঠকে যা স্থির হয়েছে, তাতে এই প্রকল্পের জন্য মোট ৩৯২ কোটি টাকা খরচ হতে চলেছে। যার মধ্যে রাজ্য দেবে প্রায় ২৫০ কোটি। বাকি ১৪০ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র। মদনবাবু বলেন, “যে ভাবে উত্তরবঙ্গের জন্য বাড়তি অর্থ দিতে কেন্দ্র রাজি হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।” |