নিকাশি খাল দখল করে অবাধ অবৈধ নির্মাণ
বর্ষার শেষেও জলবন্দি ফলতার চারটি পঞ্চায়েত
দোরগোড়ায় শীত। কিন্তু বর্ষার বৃষ্টির জল থেকে এখনও রেহাই মেলেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের।
টানা বৃষ্টির জেরে ফলতা ব্লকের ন’পুকুরিয়া, দেবীপুর, হরিণডাঙা এবং বঙ্গনগর পঞ্চায়েতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি জলের তলায় চলে যায় বহু দিন আগেই। আজও চাষের জমি থেকে সব্জি খেত, সর্বত্রই দাঁড়িয়ে রয়েছে কোমর সমান জল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষার চাষ তো গেলই, শীতকালীন চাষও কবে হবে বা আদৌ হবে কি না তা ভগবানই জানেন। জল সরানোর জন্য সেচ দফতরকে নিকাশির সুরাহা করতে বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি। ফলে জলবন্দি হয়েই কেটে গিয়েছে দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো আর দীপাবলি। যা অবস্থা তাতে শীতেও জলবন্দি হয়েই কাটাতে হবে তাঁদের।
এতদিন ধরে জল দাঁড়িয়ে থাকায় জল থেকে বেরোচ্ছে পচা-দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করেছে। মাঠের জল পুকুরের জলে মিশে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। কারণ অনেক গ্রামেই এখনও জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মাধ্যমে পাইপলাইনে পানীয় জল পৌঁছয়নি। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের পুকুরের জলই ব্যবহার করতে হয়। ফলে শিশু থেকে বড়, পেটের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
পুকুর বা দিঘি নয়, চাষের জমি। কাঁঠালখুলি গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
এতদিন পরও জল বের করা গেল না কেন? প্রশ্নের উত্তরে বাসিন্দারা কিন্তু দুষছেন একে অপরকেই। ওই এলাকায় জমা জল নিকাশির জন্য রয়েছে দোস্তপুর-ফলতা খাল। খাল মিশেছে হুগলি নদীতে। দোস্তপুর থেকে ফলতা প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই খাল শেষ করে সংস্কার হয়েছে তা বাসিন্দাদের অনেকেই বলতে পারলেন না। তার উপর অধিকাংশ জায়গায় খালের দু’ধার দখল করে কোথাও খালের উপরেই তৈরি হয়েছে বাড়ি, দোকান ঘর। যে অংশ ফাঁকা তাও মজে গিয়েছে কচুরি পানায়। বর্তমানে বহু জায়গাতেই খাল আর কৃষিজমি আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খালের এমন দূরবস্তার জন্যই জল সরছে না। ফলে চাষ তো বন্ধই, উপরন্তু জল জমে থাকায় বাড়ছে মশার উপদ্রব।
জলবন্দি চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, ন’পুকুরিয়ায় নবাসন হাইস্কুলে যাতায়াতের রাস্তা জলে ডুবে থাকায় সেখানে বালি ফেলে কোনওমতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওই পঞ্চায়েতের উত্তর কাঁঠালখুলি, দক্ষিণ কাঁঠালখুলি গ্রামের লাগোয়া মাঠে প্রায় কোমর সমান জল। উত্তর কাঁঠালখালির বাসিন্দা দেবেন মণ্ডল, মন্টু সর্দাররা বলেন, “আমাদের কারও ১০ বিঘা, কারও ২০ বিঘা জমি নষ্ট হয়ে গেছে জমা জলে। একমাত্র ভরসা সরকার যদি কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়।” একই বক্তব্য বঙ্গনগর-১ পঞ্চায়েতের কাশিরামপুর গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা কালিপদ মহিষের। তাঁর কথায়, “আট বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জল জমে থাকায় অন্য সব্জিও চাষ করা যাবে না। কী করব বুঝতে পারছি না।”
এই অবস্থায় কি ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন?
ফলতার বিডিও দেবতোষ দত্ত চৌধুরী বলেন, “খাল জুড়ে যত্রতত্র অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। ফলে নিকাশি সমস্যা থাকায় জল বের করা যায়নি। খালের উপর অবৈধ নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত সমস্ত স্লুইসগেটগুলি সংস্কার করে জমা জল বের করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
স্থানীয় বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ বলেন, “খালের দখলদারদের ওঠাতে জেলা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোকান বা বাড়ি উচ্ছেদ না করে কি ভাবে খালের সংস্কার করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।” ডায়মন্ড হারবার মহকুমা সেচ দফতরের সহকারি বাস্তুকার প্রদীপ হালদার বলেন, “সমস্ত স্লুইস গেট তুলে দেওয়া হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই সমস্ত জল নেমে যাবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.