সকলেই চাইছিলেন ভিড় এড়িয়ে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে। আর তাই পুজোর আগের দিনই গভীর রাত পর্যন্ত মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়ল ভিড়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রাস্তায় বেড়েছে মানুষের ঢল। পুজো উদ্যোক্তাদের মতে, বিগত বছর গুলির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দু’এক বছর ধরেই পুজোর দিনের ভিড় এড়াতে আগের দিনই ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে পড়ছেন।
ভিড় ঠেকাতে রীতিমত হিমশিম খেয়েছেন পুজো মণ্ডপ গুলির স্বেচ্ছাসেবকরা। কৃষ্ণনগরের পুর প্রধান অসীম সাহা বলেন, “এবারে ভিড় অন্য বারের সব রেকর্ডকে ভেঙে দিল। পুজোর আগের দিন এত ভিড় হতে আমি অন্তত দেখিনি। তাঁর সংযোজন, “আসলে এবার আবহাওয়াটা সুন্দর আছে। তার উপরে এবার দুর্গা পুজোয় বৃষ্টি ভাসিয়েছে। তাই জগদ্ধাত্রী পুজোয় কেউ আর যেন সামান্য ফাঁক রাখতে চাইছেন না।”
এ বার কৃষ্ণনগরে প্রায় দেড়শো পুজো হয়েছে। জায়গার অভাবে সব বারোয়ারি পুজো কমিটি থিমের পুজো করতে না পারলেও আলোর রোশনাইয়ে সেই খামতি পুষিয়ে দিয়েছেন। আবার কেউ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রতিমের সাজে। কোথাও কোথাও দেবীর ডাকের বা সোলার সাজ দেখতেই ভিড় জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা। বেথুয়াডহরি থেকে এসেছিলেন আনারুল মন্ডল। তিনি বলেন, “আমরা কৃষ্ণনগরে এসেছি আনন্দ করতে। গত বার পুজোর দিন এসেছিলাম। এবার তাই ভিড় এড়াতে আগের দিন চলে এসেছি।”
ঘুর্ণি এলাকায় থিমের পুজোর জৌলুস বেশি। আর তাই এই এলাকায় মানুষের ভিড়ও বেশি। ঘুর্ণি বারোয়ারির এক কর্মকর্তা বলেন, “ভোর পর্যন্ত মণ্ডপে ভিড় ছিল।” ভিড় যত বেড়েছে ততই খুশি হয়েছেন শহরের ব্যবসায়ীরা। রাস্তার পাশে ফুচকা বিক্রেতা থেকে বেলুনওয়ালা, এমনকী স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাও।
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টিজ এর সহ সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “সব চাইতে বেশি খুশি স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। এখানকার পুজোর বৈশিষ্ট্য হল দেবীর কাছে সোনার গয়না মানত করা। সেই মত প্রতিবারই উৎসবেরসবেরদিন গুলিতে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখেন ব্যাবসায়ীরা। বেশির ভাগ মানুষই তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন আকারের টিপ দেন দেবীকে।” অক্ষয় বাবু নিজেই একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “অন্যবারের থেকে এ বার যেহেতু বাইরের লোকের ভিড় বেশি হয়েছে তাই গয়নাও একটু বেশি বিক্রি হয়েছে।”
তবে সকলে খুশি হলেও স্বস্তিতে নেই জেলার পুলিশ কর্তারা। কারণ দিন কয়েক আগেই কালীপুজোর ভাসানের দিনে দুই ক্লাবের মধ্যে গণ্ডগোলে মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের। জগদ্ধাত্রী পুজোয় যাতে এমন কোনো অপৃতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছে জেলার পুলিশ প্রশাসন। সোমবার পুজোর দিনে শহরে কর্তব্যরত অবস্থায় ছিল ৭৫ জন মহিলা পুলিশ। ছিলেন ১৭৫ জন অফিসার ও ৪শো কনস্টবল। জেলার বাইরে থেকে এক জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও এক জন ডিএসপি পর্যায়ের অফিসার ছিলেন। জেলার বিভিন্ন থানার ওসি, আইসি, সিআই ও মহকুমা পুলিশ অফিসারদের এই শহরে নিয়ে আসা হয়। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “জগদ্ধাত্রী পুজো যাতে শান্তিতে কাটে তার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
|