|
|
|
|
বল পায়ে মাঠ দাপাচ্ছে তিন হাজার মেয়ে |
প্রশান্ত পাল • পুরুলিয়া |
এক সময়ে কলকাতার ময়দানেও দাপুটে উপস্থিতি ছিল তাঁদের। ছেলেদের পাশাপাশি সকাল-বিকেল বল পায়ে দেখা যেত তাঁদের। এমনকী, ইষ্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ক্লাবেও ছিল তাঁদের নিয়ে আলাদা দল। ভাল খেলে একটু নাম-ধাম হলেই আয়কর বিভাগের মতো জায়গায় মিলত চাকরিও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গিয়েছে সেই পরিস্থিতি। ফুটবল পায়ে মাঠ কাঁপাচ্ছে মেয়েরা, এই দৃশ্য এখন দেখা কচ্চিত-কদাচিৎ।
মেয়েদের ফুটবলে এ রাজ্যে এমন যখন পরিস্থিতি, তার উলট-পুরাণ পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে। ৮, ১০ বা ১৫টা নয়, একেবারে ২২৫টি মেয়েদের ফুটবল দলকে একটি প্রতিযোগিতায় নামতে দেখে অবাক পুরুলিয়া তো বটেই, রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের দুই প্রতিনিধি। |
|
কাশীপুরে মহিলাদের ফুটবল। সোমবার সুজিত মাহতোর তোলা ছবি। |
গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে তিন হাজারেরও বেশি কিশোরী ও তরুণীদের নিয়ে পুরুলিয়ার কাশীপুর বিধানসভা এলাকায় শুরু হয়েছে এই প্রতিযোগিতা। মাঝে বৃষ্টি ছন্দপতন ঘটালেও উৎসাহের খামতি নেই। তবে জেলা জুড়ে মেয়েদের ফুটবল মাঠে হাজির করানোর এই উদ্যোগ বছর দু’য়েক আগে শুরু করেছিলেন জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার সি সুধাকর। কিন্তু তা কয়েকটি থানা এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দলের সংখ্যা কোথাও ৪০ বা ৫০, তার চেয়ে কিছু বেশি ছিল। কিন্তু পুরুলিয়ার মতো একটি জেলায় একটিমাত্র বিধানসভা এলাকার কিশোরী-তরুণীদের নিয়ে এতগুলি দল গঠন এবং তাঁদের উৎসাহ দেখে বিস্মিত মহিলা ফুটবলের প্রাক্তন জাতীয় প্রশিক্ষক রঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এমনও হতে পারে, তা এখানে না এলে বিশ্বাসই করতে পারতাম না। একটিমাত্র এলাকা থেকে এতজন কিশোরী-তরুণীকে ফুটবল নিয়ে দৌড়তে দেখে মনে হচ্ছে না, পুরুলিয়া পিছিয়ে রয়েছে।”
কী ভাবে সম্ভব হল? প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা, তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া বলেন, “গ্রামের মেয়েরাও নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করতে চায়। বিভিন্ন জায়গায় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় গিয়ে আমার মনে হয়েছিল মেয়েরা সুযোগ চায়। সে জন্য কয়েকটি ক্লাবের কাছে প্রস্তাব রেখেছিলাম। ওই সব ক্লাবের সদস্যরা যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, আমিও অবাক। তারপর দেখি একাধিক এলাকা থেকে মেয়েদের দল প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে চায়। কাউকে নিরাশ করা হয়নি।” আজ, মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার ফাইনাল।
প্রতিযোগিতায় যে সমস্ত কিশোরী বা তরুণী যোগ দিয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশই আদিবাসী। বেশিরভাগই স্কুলে বা গ্রামের ক্লাবের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বা স্কুলে ফুটবল খেললেও দল গড়ে এমন প্রতিযোগিতার আসরে প্রথম। দেশের মহিলা ফুটবলকে কাছ থেকে দেখা আর এক প্রাক্তন জাতীয় প্রশিক্ষক প্রতিমা বিশ্বাস বললেন, “আদিবাসী মেয়েরা এগিয়ে আসায় আজ ওড়িশা জাতীয় ফুটবলে এক নম্বরে। এখানে এসে যা দেখলাম, একটি বিধানসভা এলাকায় ফুটবলে মেয়েদের এত উৎসাহ, তা যদি কাজে লাগানো যায় আমরাও এগোতে পারি।” রঞ্জনাদেবী ও প্রতিমাদেবীর কথায়, “আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে পাইকার জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নতুন প্রতিভার সন্ধানে আমরা এখানে হাজির হয়েছি। তবে এই ক’দিনে যা দেখলাম তা এক কথায় অভাবনীয়। যথারীতি ফুটবল মেলা বসেছে।”
এ দিকে, কাশিডি এভেন সাকওয়া গাঁওতা ক্লাবের সতীরাণী বেসরা, অঞ্জলি বেসরা, সুরজমণি হেমব্রম, সুস্মিতা মান্ডি বা টুপারডি নিউ ভুরকোওপিল গাঁওতা ক্লাবের পঞ্চমী মাঝি, সারথি মাঝি, দীপিকা মাঝি, অঞ্জনা মাঝি, পাহাড়পুর বিন্দু চান্দান উইহের গাঁওতার লসকি টুডু, সোনামণি সোরেনদের প্রতিক্রিয়া,কথায়, “আমরা দারুণ ভাবে খেলা উপভোগ করছি। মাস তিন-চার একসঙ্গে অনুশীলন করে নেমেছি। এখন বুঝতে পারছি আমাদেরও যদি ভাল প্রশিক্ষক থাকেন, তা হলে আমরাও ভাল খেলতে পারতাম।”
রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের দুই প্রতিনিধি বলেন, “এখানে একাধিক ফুটবল প্রতিভার সন্ধান পেয়েছি।
বেশ কয়েকজন রয়েছে যাঁদের ঘষামাজা করলে তাঁরা ভবিষ্যতে উঠতে পারবে। বেশ কয়েকজনকে চিহ্ণিত করা হয়েছে। ক্রীড়া পর্ষদের সচিবকে রিপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের কাছে আমরা এখানে মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি গঠনের প্রস্তাব দেব।” |
|
|
|
|
|