বাহারি থিম নিয়ে জগদ্ধাত্রী এলেন রিষড়ায় |
কন্যাভ্রূণ হত্যা এখন সামাজিক ব্যাধি, যার শিকড় বেশ গভীরে। তারই বিরুদ্ধে প্রচারে রিষড়ার জাগরণ তাদের পুজোমণ্ডপকেই হাতিয়ার করেছে। থিম হিসেবে তৈরি হয়েছে অসংখ্য কুঁড়ি। সেই কুঁড়ির মধ্যেই জেগে রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। কুঁড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে রয়েছে শিশুকন্যাদের কচি মুখ। সেই মুখের আর্তি যেন প্রতিটি দর্শককে বলে দিচ্ছে, শুরুতেই যেন শেষ করে না দেওয়া হয় মেয়েদের বাঁচার পথ।
হুগলির চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীর পরিচিতি জগৎজোড়া। এর পাশাপাশি হুগলিরই গঙ্গাপাড়ের আর এক জনপদ রিষড়াও এখন বিশেষ পিছিয়ে নেই। থিমে-আলোয় রিষড়া যেন এক ‘মিনি চন্দননগর’।
রিষড়া স্টেশনের পূর্ব এবং পশ্চিম দিক মিলিয়ে একশোটিরও বেশি পুজো হয়। স্বভাবতই ছোট এই শহরের অলিগলিতে এখন আলোর ঝর্ণা। কী নেই থিমের তালিকায়! সমাজ সচেতনতার পাশাপাশি কোথাও উঠে এসেছে রাজস্থানের মরুপ্রদেশ, আবার কোথাও ওড়িশার হারিয়া যাওয়া কুটিরশিল্প। রয়েছে বেলুড় মঠের আদল। কেদারনাথে সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের দৃশ্য। এ পর্যন্ত রাজস্থানের মরুভূমির সৌন্দর্য্য যাঁদের প্রত্যক্ষ করা হয়নি, তাঁরা অবশ্যই চলে আসতে পারেন তেঁতুলতলা রবীন্দ্রসঙ্ঘে। কাঠপুতুলকে বাদ দিয়ে রাজস্থানকে ভাবাই যায় না। বিভিন্ন আকারের সাড়ে তিন হাজার কাঠপুতুল দিয়ে মরু শহরের অনুষঙ্গ অবিকল তুলে আনা হয়েছে। বালি ছাড়া মরুভূমির অস্তিত্ব কোথায়! এখানেও তাই মরুভূমির স্বাদ দর্শকদের দিতে বালি পেরিয়েই মণ্ডপে ঢুকতে হবে। অজস্র সুদৃশ্য হাঁড়ি সাজিয়ে আবহ তৈরি করা হয়েছে। |
|
|
রিষড়ার তেঁতুলতলা রবীন্দ্র
সঙ্ঘের জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। |
পার্ক সম্মিলনীর
পুজো। |
|
শ্রীরামপুরের প্রখ্যাত প্রতিমা শিল্পী স্বপন পাল একটি সংস্থার বিচারক হিসেবে বিভিন্ন পুজোয় ঘুরছিলেন। রাখঢাক না করেই বললেন, “এখন তো থিমের জোয়ার। এর মধ্যে কন্যাভ্রূণ রক্ষা করার যে বার্তা রয়েছে, সেটা বেশ নজর কাড়ল।” লেনিন মাঠ যুবগোষ্ঠীর পুজো মণ্ডপ হিসেবে উঠে এসেছে কেদারনাথ। সারদামাতা ফরওয়ার্ড ক্লাবের পুজোটিও কম ঝলমলে নয়। এখানে উল দিয়ে রকমারি পুতুল তৈরি করা হয়েছে। পার্ক তরুণ দলের প্রতিমা নজরকাড়া। এখানকার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে চট দিয়ে। পার্ক সম্মিলনী, বাহাত্তরের আমরা, বিবেকানন্দ স্পোর্টিং-সহ অনেক পুজোই লোক টানছে।
ওড়িশায় যত্নের অভাবে অনেক কুটির শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। মোষের সিং দিয়ে আশ্চর্য সুন্দর কুটির শিল্প এক সময়ে তৈরি হত সেখানে। কিন্তু কালক্রমে তা-ও গতপ্রায়। সেই হারিয়ে যাওয়া শিল্পকেই মণ্ডপে হাজির করেছেন সাধনকানন অঙ্কুরের কর্মকর্তারা। স্টেশনের পশ্চিম পাড়ের এই পুজোয় মোষের সিং দিয়েই তৈরি করা হয়েছে ডলফিন, মৌমাছি, প্রজাপতি, ফড়িং, রুই মাছ, ময়ুর। মাথার উপরে দুলে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট পাখি।
এ বছর স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধ-শতবর্ষ। স্মরণীয় এই বছরে বিবেকানন্দের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করতেই ব্রহ্মানন্দ মাঠ বন্ধু গোষ্ঠীর কর্মকর্তারা থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন বেলুড় মঠ। মাঠ জুুড়ে মেলার আবহ। টয়ট্রেন থেকে ফুচকা, দোলনা থেকে ঝালমুড়ি সব কিছুই মিলবে হাতের কাছে। সূর্য ডুবলেই চতুর্দিক ভেসে যাচ্ছে চোখধাঁধানো আলোর স্রোতে। আলোর শামিয়ানার নিচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছনো যাবে লক্ষ্মীপল্লি অধিবাসীবৃন্দের পুজোয়। কোরাস ক্লাব কলাগাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে নানা দেবদেবীর মূর্তিতে সাজিয়েছে তাদের মণ্ডপ। কলাগাছের গুঁড়ি থেকে মোচা, থোড় সব কিছুই ব্যবহার করা হয়েছে মণ্ডপসজ্জার উপকরণ হিসেবে। ১ নম্বর যুবকবৃন্দের পুজোয় কাঁথির মণ্ডপশিল্পীদের কাজ নজরকাড়া। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই রিষড়ার রাস্তায় নামতে শুরু করেছে জনতার ঢল।
রিষড়ার পাশাপাশি গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনীর পুজোও মহা সমারোহে পালিত হচ্ছে। এই পুজোর জন্যই বাংলার বারোয়ারি পুজোর মানচিত্রে গুপ্তিপাড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, এই পুজোই বাংলার প্রথম বারোয়ারি। শিয়াখালার পশ্চিম তাজপুর বিবাদি সঙ্ঘের পুজোও হচ্ছে মহা সমারোহে।
|