বরাক-ব্রহ্মপুত্র এলাকায় আলু ৩৫-৪০ টাকা কেজি
গুয়াহাটির জন্য আসা ৩৫টি ট্রাক ১০ টন করে আলু নিয়ে বক্সিরহাটে দাঁড়িয়ে। অসমের বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আলুর দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সোমবার জানিয়ে দিয়েছে, ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে রাজ্যের নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকছে। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্য রাজ্যে আলুর ট্রাক যেতে পারে।
এ দিন শিলচরের ফটক বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিলোয় আলু বিক্রি হচ্ছে। গুয়াহাটিতে পুরোনো আলুর দাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা। নতুন আলুর ৪০ টাকা কিলো বিকোচ্ছে। বাজার সমিতির তরফে আলুর দামে রাশ টানতে না পারার দায় সরকারের উপরে চাপানো হয়েছে। গুয়াহাটির আলু ব্যবসায়ীরা জানান, সীমানায় আটকে থাকা ট্রাক ছাড়াতে সরকার সেই ভাবে ব্যবস্থা নেয়নি। গ্রাহক সুরক্ষা সমিতির বক্তব্য, বাজারের মূল্যে রাশ টানতে জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা আগে থেকে সঞ্চিত আলু বেশি দামে বাজারে ছাড়ছেন।
আলু, পেঁয়াজ কিনতে লাইন বালুরঘাটে জেলা প্রশাসনের দফতরে। সোমবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
খাদ্য ও গণবন্টনমন্ত্রী নজরুল ইসলাম অবশ্য বলছেন, “আলুর মূল্যবৃদ্ধি স্বাভাবিক হারেই হয়েছে।” শিলচর ফুড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুন্তল পাল জানিয়েছেন, সীমানায় আগরা থেকে আসা আলুর ট্রাকগুলি আটকে পড়াতেই বাজারে আলুর সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আলুর পাইকারি দাম এখন কুইন্টল প্রতি প্রায় ৩০০০ টাকা। সরকারি ভাবে গুয়াহাটির বাজারগুলিতে সুলভ মূল্যের দোকানে আলুর সর্বাধিক বিক্রয় মূল্য ২২ টাকায় বেঁধে দিয়েছে। গোলাঘাট ও উজানি অসমের কোনও কোনও স্থানে, ব্যবসায়ীরাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আলুর দাম বেঁধে দিয়েছেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ অবশ্য মনে করেন, কোথাও আলু-পিঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়েনি।
পশ্চিমবঙ্গ সীমানার নিকটবর্তী অসমের ধুবুরি জেলার ছাগলিয়ায় প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি গাড়ি এ রাজ্য থেকে ঢুকতো। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে গাড়ি আসা বন্ধ। তবে আগরা, হরিয়ানা, পঞ্জাবের আলু বোঝাই গাড়ি ঢুকছে। জেলা সদর ধুবুরির পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য রাজ্যের আলুই কেজি প্রতি ১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ওই আলু বিক্রি করছেন ১৭-১৮ টাকা দরে। আলু ব্যবসায়ী বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী বলেন, “বাংলা থেকে আলু আসা বন্ধ হওয়ায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বেশি দামে কেনাবেচা করতে হচ্ছে।”
খুচরো ব্যবসায়ীরা আলু ১৯ টাকা থেকে ২২ টাকায় কিনে কেজি প্রতি ২৬ টাকা থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি করছেন। খুচরো ব্যবসায়ী আসাদ আলি বলেন, “আলু মহাজনদের থেকে কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রিও করতে হচ্ছে। ক্রেতাদের সঙ্গে এ জন্য ঝামেলাও হচ্ছে।” ধুবুরি জেলা প্রশাসনের তরফে ২০ টাকা কেজি দরে রেশন দোকান থেকে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তাতে পচা আলুও থাকছে বলে অভিযোগ। আলু কিনতে এসে এক বাসিন্দা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া। এর মধ্যে আলুর দামও যদি এত বেড়ে যায় তবে সাধারণ মানুষের খুবই সমস্যা হবে।”
ধুবুরি জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুশীল রায় বলেন, “ইতিমধ্যে অসম সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা মিটে যাবে।” বিজেপির জেলা সভাপতি দীপক সাহা বলেন, “এটা অসমের তরুণ গগৈ সরকারের ব্যর্থতা।” অগপ-এর জেলা সভাপতি অমল সাহা বলেন, “এই পরিস্থিতির সমাধান করতে না পারলে এই সরকারের গদি ছাড়া উচিত।”
সোমবার থেকে আলুর পাশাপাশি সরকারি ভাবে পেঁয়াজ বিক্রিও শুরু হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরে। এদিন সকাল থেকে বালুরঘাটে জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বর থেকে আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। ৩৬ টাকা কেজি দরে ব্যক্তি পিছু ৫০০ গ্রাম করে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। দুপুরের মধ্যে পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেলেও ১৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে বালুরঘাটে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের লম্বা লাইন ছিল। তপন ব্লকের রামপুর এলাকার হিমঘরের মালিক ঈশ্বর সরকার বলেন, “সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সোম এবং মঙ্গলবার দু’দিন সস্তায় পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আগামী বুধবারও বালুরঘাটে প্রশাসনিক ভবন চত্বর থেকে ভর্তুকিতে পেঁয়াজ বিক্রির প্রস্তাব প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।”
জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “হিমঘর মালিক এবং অধিকাংশ ব্যবসায়ী সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সবরকম সরকারি সহায়তা দিয়ে আলু বিক্রির প্রক্রিয়া চালু রাখা হবে। সরকারি উদ্যোগে আলু বিক্রির পাশাপাশি সবজি বাজার সচল রাখতেও ব্যবসায়ীরা রাজি হয়েছেন।” রবিবার রাতে শহরের তহবাজারে পুলিশ প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীদের যৌথ বৈঠক হয়। চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক সুদীপ বাগচী বলেন, “আমরা প্রশাসনের পাশে রয়েছি। সরকারী সিদ্ধান্ত মেনেই সব্জি বাজারগুলিতে আলু বিক্রি চালু রাখা হবে।” বালুরঘাট সব্জি আড়তদার সমিতির প্রতিনিধি প্রদীপ সাহা বলেন, “আজ, মঙ্গলবার থেকে বাজার সচল রাখতে ১৩ টাকা কেজি দরে খুচরো আলু বিক্রি শুরু হবে। তারফলে ব্যবসায়ীরা ওই আলু কিনে সামান্য বেশি দরে বিক্রি করতে পারবেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.