যে জমি এক বার বিক্রি করে দিয়েছিলেন, ওই একই জমি পরে দুই আত্মীয়ার নামে লিখে দেন সেই জমির মালিক। প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনই অনুমান পুলিশের। আর জমির মালিকানা নিয়ে তৈরি হওয়া সেই বিতর্কের জেরেই সোমবার চলে গেল দু’টি প্রাণ।
পুলিশ জানাচ্ছে, ৯এ শর্ট স্ট্রিটে জমির পরিমাণ ১৭ কাঠা ১২ ছটাক ৩৫ বর্গফুট। ১৯৯৯ সালে এই জমি মুম্বইয়ের ‘হার্ট লাইন এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে এক সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেন শৈলবালা সেন। জানা গিয়েছে, শৈলবালার একমাত্র ছেলে মারা যাওয়ার পরে তিনি একেবারে একা হয়ে যান। শর্ট স্ট্রিটের জমিটি বিক্রি (১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায়) করে দেওরের ছেলে দ্বারিকানাথের সঙ্গে উত্তর কলকাতার একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি।
সোমবার কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা বলেন, “২০০৩ সালে শৈলবালা ওই জমি উইল করে দেন দ্বারিকানাথের দুই কন্যা রুমি ও রাখীর নামে। সেই বছরেই মারা যান শৈলবালা।” জানা গিয়েছে, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত শৈলবালার ওই জমিটির দেখভালের দায়িত্ব ছিল এক আইনজীবীর উপরে। তবে কি তিনি শৈলবালাকে না জানিয়েই তা বিক্রি করে দিয়েছিলেন মুম্বইয়ের ওই সংস্থাকে? মুরলীধর বলেন, “সেটা সম্ভব নয়। কারণ সেই জমি বিক্রির দলিলে সই ছিল শৈলবালার।”
এখানেই থেমে যায়নি জমি-জটের কাহিনি। ২০১০ সালে মুম্বইয়ের সংস্থাটি প্রায় তিন কোটি টাকায় সেই জমি বিক্রি করে দেয় সঞ্জয় ও স্বপ্না সুরেকা নামে এক দম্পতিকে। আবার ওই একই বছরে দ্বারিকানাথের দুই মেয়ের কাছ থেকে জমিটি প্রায় দেড় কোটি টাকায় কিনে নেন রতনলাল নাহাটা। তিনি এত দিন ওই বাড়িতেই ভাড়াটে হিসেবে থাকতেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মামলা শুরু হয়। দেখা যায় সঞ্জয়-স্বপ্নার নামে জমিটি কলকাতা পুরসভায় মিউটেশন করানো আছে। মুরলীধর জানান, নিম্ন আদালতে মামলা চলাকালীন শৈলবালার উইল নিয়ে হাইকোর্টে যান রতনলাল। হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, ওই উইল আদালতে নথিভুক্ত (প্রবেট) করা হয়নি। তাই আইনত ওই উইলের কোনও ভিত্তি নেই। হাইকোর্টে রতনলাল অভিযোগ করেন, মুম্বইয়ের ওই সংস্থা বেআইনি ভাবে জমি কিনেছে। সেই অভিযোগও হাইকোর্টে টেঁকেনি বলে এ দিন জানিয়েছেন মুরলীধর। এমনকী, মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য হাইকোর্ট রতনলালকে জরিমানাও করে। ব্যাস, ওই পর্যন্তই। ওই জমি যে আসলে কার, সে কথা হাইকোর্ট বলেনি। কারণ, সেই মামলা চলছে নিম্ন আদালতে।
এর পরেই শুরু হয় টানাপোড়েন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই জমির উপরেই করা বাড়িতে থাকতেন একা রতনলাল। তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নেই। এক সময়ে সেখানেই তিনি একটি রেস্তোরাঁ চালু করেন। কিন্তু তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। এর পরেই ওই জটে প্রবেশ ঘটে মমতা অগ্রবালের। তিনি এত দিন পাশেই ৯বি শর্ট স্ট্রিটে ভাড়া থাকতেন। তিনি এক বিদেশিনির সাহায্য নিয়ে সেখানে ছোটদের স্কুল চালাতে শুরু করেন। মুরলীধর জানান, এই বছরে সেই স্কুলেরও লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। তবু মমতাদেবী সেখানেই থাকতেন। সোমবার বাইরে থেকে লোক ঢোকার পরে প্রথমে তিনিই গুলি চালান বলে জানায় পুলিশ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৯এ শর্ট স্ট্রিটের যে স্কুল চত্বরে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই জমি লাগোয়া মমতাদেবীর দুই কামরার টালির চালের ঘর। দরজা ও কোল্যাপসিব্ল গেটে বড় তালা। স্থানীয়দের থেকে জানা গেল, রতনলালের সঙ্গে মমতাদেবীর পরিচয়ও দীর্ঘ দিনের। মমতাদেবী সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবার ভোরে সেখানে গুলি চলার পরে কেউই আর মুখ খুলতে চাইছেন না। |