সুগন্ধী চালের চাষ চায় সরকার
ফতানিযোগ্য সুগন্ধী চালের চাষ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের সমস্ত সরকারি কৃষি খামারে বিশেষ কয়েক প্রজাতির ধান চাষ শুরু করেছে তারা।
সোমবার বর্ধমানের কৃষি খামারে ওই ধরণের ধান চাষের হাল হকিকত দেখতে এসেছিলেন রাজ্য কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, বীজ সবরাহ খুব কম বলে এই ধানের চাষ এখনই জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে বর্ধমানের কালনা রোড কৃষি খামারে এক হেক্টর জমিতে আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে বাদশাভোগ, কালাভাত, তুলসিমুকুল, রাধাতিলক ও দুধেশ্বর প্রজাতির ধান চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে একমাত্র বাদশাভোগের বীজ আগামী খরিফ মরশুমে উৎসাহী চাষিদের বিক্রি করা হবে।
সফরকারী দলের সঙ্গে জেলায় এসেছিলেন রাজ্যের উপ-কৃষি অধিকর্তা মুরারী যাদব। তিনি জানান, মাটির গুণ অনুসারে নানা জেলায় এই সুগন্ধী দেশি ও লুপ্তপ্রায় ধানের চাষ ছড়িয়ে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্পের আওতায় এই চাষ হবে। একসময় প্রায় এক হাজার প্রজাতির সুগন্ধী ধানের চাষ হতো এই রাজ্যে। এখন অবশ্য মাত্র ৩৪০ প্রজাতির ধান খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তবে বাকি প্রজাতিগুলির জিন পরীক্ষার কাজ চলছে নদিয়ার ফুলিয়ার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে।
মুরারিবাবু বলেন, “কালাভাত ধান সাদা অথচ এর চাল কালো। এই চাল ভেষজগুণ সম্পন্ন ও এতে আয়রন-সহ অনেক ধরনের ভিটামিন রয়েছে। অন্যদিকে তুলসিমুকুল ধান কালো কিন্তু চাল সাদা। আর বাদশাভোগ প্রায় পাঁচ মাস ধরে চাষ করতে হয়। দীর্ঘমেয়াদী হলেও ওই চালের দাম বেশি বলে চাষিরা লাভ পান। এই প্রজাতিগুলির উৎপাদন অনেকটা আমনের মতই। বিঘে পিছু তুলসিমুকুল ১০, বাদশাভোগ ৯, রাধাতিলক ১০, কালাভাত ১৩ ও দুধেশ্বর ১১ মণ করে উৎপাদিত হয়। বাদশাভোগের মতো অন্যগুলিও চাষ করতে সময় লাগে প্রায় ১৪০-১৫০ দিন।”
কৃষি অধিকর্তাদের মতে, এ রাজ্যে সুগন্ধী চাল হিসেবে গোবিন্দভোগই টিকে রয়েছে। এই ধানের ব্যাপক চাষ হয় বর্ধমান, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া ও হুগলিতে। তাঁদের আশা, বাকি প্রজাতির চালগুলি বাজারে এলে মানুষ স্বাদবদলের আশায় সেগুলিকেও স্বাগত জানাবেন। বর্ধমান কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা (বীজ) দেবাশিস দত্ত বলেন,“বর্ধমানের উন্নত প্রজাতির গোবিন্দভোগ বিদেশেও রফতানি হয়। রায়নায় ওই চাষকে ঘিরে চালকল শিল্প গড়ে উঠেছে। বর্ধমানে অন্তত নতুন প্রজাতির চাল বাজারে এলে বাণিজ্যিক সাফল্য মিলবে।”
চলতি বছরের মাঝামাঝি নদিয়ার ফুলিয়া, বীরভূমের নলহাটি ও হুগলির চুঁচুড়ার ধান গবেষনা কেন্দ্র থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির ধান বীজ কিনে এনে বর্ধমান ও রায়নার সরকারি কৃষি খামারে চাষ শুরু করা হয়। অল্প জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে চাষের জন্য গবেষণাগার থেকে ওই বীজগুলি প্রথমে কোনওটি ১০০ গ্রাম আবার কোনওটি ২৫০ গ্রাম করে কিনে আনা হয়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষের মাধ্যেমে এগুলির বীজ তৈরি করে চাষিদের দেওয়া হবে। তবে আগামী খরিফ মরশুমে আপাতত বাগশাভোগের বীজ চাষিদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলেও জানানো হবে। রাজ্য কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা কমল ভৌমিক বলেন, “রাজ্যের তিনটি ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে আমরা যে সুগন্ধী ধানের বীজ কিনে এনে সেগুলিকে নানা সরকারি কৃষি খামারে চাষ করে বীজ তৈরির চেষ্টা করছি, সে কথা জানতে পেরেছেন চাষিরাও। প্রায়ই খামারে এসে তাঁরা খোঁজ় নিচ্ছেন কবে ওই ধানগুলির বীজ মিলবে।”
তবে উৎসাহী চাষিদের হাতে দ্রুত ওই সুগন্ধী ধান বীজ তুলে দেওয়ার কিছু সমস্যাও রয়েছে। কারণ, বীজ তৈরিতে অনেক সময় লাগছে। স্বল্প পরিমাণ বীজকে বারে বারে চাষ করে বাড়াতে হচ্ছে। এছাড়া বিশেষ প্রজাতির এই ধানগুলি বিশেষ এলাকায় উৎপন্ন হয়। ফলে জমির গুণাগুণ পরীক্ষা না করে এই পাঁচ প্রজাতির ধান চাষ সম্ভব নয় বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।

চাষে সমস্যা
লুপ্তপ্রায় এই ধানগুলির বীজ এমনিতে মেলে না।
বীজ তৈরিতে অনেক সময় লাগছে। বারবার চাষ করে বীজ তৈরি করতে হচ্ছে।
জমির গুণাগুণ পরীক্ষা না করে সুগন্ধী চালের চাষ সম্ভব নয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.