হোসে ব্যারেটো বনাম ওকোলি ওডাফা লড়াইয়ে রবিবার বর্তমান বাগান অধিনায়কই জিতলেন। প্রাক্তন বাগান অধিনায়কের বিরুদ্ধে। তবু হতাশ ওডাফা। নিজে গোল পাননি যে!
মরসুমে নিজের প্রথম ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে অন্তত একটি গোল করতে চেয়েছিলেন ওডাফা। না পারায় ম্যাচের পরে আফসোস করছিলেন তিনি। টিম বাসে ওঠার আগে বলেই ফেললেন, “একটা গোলও করতে পারলাম না। গোল করেই মরসুম শুরু করতে চেয়েছিলাম। সেটা আর হল না।”
ওডাফার এই হতাশা আরও বাড়িয়ে দিলেন বাগান সমর্থকরাই। ম্যাচ শেষে যখন দু’দলের ফুটবলাররা ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছেন, তখন গ্যালারি জুড়ে একটাই নাম ধ্বনিত হচ্ছে ‘ব্যারেটো, ব্যারেটো’। বাড়িমুখো কিছু সবুজ-মেরুন সমর্থক যেমন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন, “আজ কিন্তু মন ভরিয়ে দিল ব্যারেটো। এই বয়সে পৌঁছেও এমন ড্রিবলিং, এমন টার্নিং, এক কথায় অসাধারণ।” এ দিন ৯০ মিনিটের লড়াই অনেকটাই ব্যারেটো বনাম মোহনবাগান হয়ে উঠেছিল। ভবানীপুর যেটুকু সুযোগ তৈরি করেছে, সবটাই বাগান ছেড়ে আসা সবুজ তোতা-র জন্যই। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মোহনবাগান কোচ করিম তো বলেই ফেললেন, “এখনও ব্যারেটোর মধ্যে যা খিদে রয়েছে, যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামে, সেটা দেখে শঙ্কর, রামের মতো জুনিয়রদের শেখা উচিত।” |
হেরেও জয়
|
জিতেও হার
|
রবিবারের ব্যারেটো আর ওডাফা। বারাসত স্টেডিয়ামে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়। |
কাতসুমি, ডেনসন থেকে রাম মালিক, সাইজু মন প্রত্যেকেই এ দিন ব্যারেটোদের থেকে তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে মরিয়া ছিলেন। শুরু থেকেই তাই আক্রমণের রাস্তা বেছে নিয়েছিল করিমের বাগান। কিন্তু কিছুতেই ভবানীপুর গোলের মুখ খুলছিল না। ওডাফা তখন রিজার্ভ বেঞ্চে বসে হাত কামড়াচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত বিরতির ঠিক আগে বক্সের মধ্যে ভবানীপুরের অবিনাশ রুইদাস ফাউল করে বসেন রামকে। পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। কিন্তু রেফারি অবিনাশকে কেন কোনও কার্ড দেখাননি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সবুজ-মেরুন শিবির। উল্টো দিকে ব্যারেটোর দাবি, ওটা পেনাল্টিই ছিল না। ম্যাচের পর বলেও দিলেন, “মাঠের ভেতর দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা দেখেছি। ওটা পেনাল্টি হতে পারে না। পেনাল্টি থেকে ওই গোল না হলে হয়তো ম্যাচের রেজাল্ট অন্য রকম হত।”
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই অবশ্য শঙ্কর ওঁরাও ব্যবধান বাড়ান। এই গোলটির পিছনে বড় অবদান রয়েছে রামের। এ দিন পুরো ম্যাচে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন রাম মালিক। নিজে গোল না পেলেও, মোহনবাগানের আক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে মূলত রামের পা ধরেই। ম্যাচের সেরাও তিনি। বর্ধমানের জৌ গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলেটির খেলায় এ দিন মুগ্ধ ব্যারেটোও। বলেও দিলেন, “রামই তো এ দিন ম্যাচের রং পাল্টে দিল। খুব ট্যালেন্টেড ফুটবলার।” ব্যারেটোর প্রশংসার কথা শুনে লাজুক রামের মুখেও তৃপ্তির হাসি। বললেন, “খুব ভাল লাগছে। ব্যারেটোর এই প্রশংসা আমাকে আরও উজ্জীবিত করবে।”
মোহনবাগান দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর নামেন ওডাফা। মোহন-অধিনায়ককে ঘিরে প্রত্যাশার চাপ ছিল অনেক বেশি। কিন্তু ‘কিং কোবরা’ যে এখনও পুরো ফিট নন, খেলা দেখে বোঝা গিয়েছে। ওডাফা অবশ্য বলছেন, “আমার আর কোনও সমস্যা নেই।” করিমও খুশি অধিনায়কের পারফরম্যান্সে। “ওর ড্রিবলিং, টার্নিং তো ঠিকই আছে,” বলছিলেন মরক্কান কোচ।
কিন্তু ২৪ নভেম্বর ডার্বির আগে কি পুরো ম্যাচ খেলার মতো ফিট হয়ে উঠতে পারবেন বাগানের গোলমেশিন? রবিবারের ম্যাচের পরেও কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই গেল!
মোহনবাগান: শিল্টন, ইচে (কিংশুক), রাওলসন, ডেনসন, শৌভিক, আদিল (পঙ্কজ), কাতসুমি, প্রীতম, সাইজু (ওডাফা), রাম, শঙ্কর। |