সিপিএমের ইন্ধনেই আলুর ট্রাক আটক ওড়িশায়, দাবি তৃণমূলের
ড়িশা সীমানায় পশ্চিমবঙ্গমুখী ট্রাক আটকে বিক্ষোভ নিয়ে এ বার শুরু হল রাজনৈতিক চাপানউতোর।
সিপিএমের উস্কানিতেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে রবিবার অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুবাবুর দাবি, “শনিবারের ওই ঘটনার পিছনে সিপিএমের ষড়যন্ত্র রয়েছে। ওড়িশার মানুষ কোনও বিক্ষোভ করেননি। এ রাজ্যে হালে পানি না পাওয়া সিপিএম কোনও রাজনৈতিক ইস্যু না পেয়ে ওড়িশা সিপিএমকে কাজে লাগিয়ে কৌশলে বিক্ষোভ তৈরি করেছে। এ জন্য সিপিএমকে রাজ্যবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
শুভেন্দুবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর রসিকতা, “ওড়িশায় সিপিএম এত শক্তিশালী, তা-ই জানতাম না! শুনলাম ওঁর কাছ থেকে!” সেই সঙ্গে সূর্যবাবুর মন্তব্য, “এক রাজ্যের পণ্য অন্য রাজ্যে যাওয়া আটকে দেওয়া সমাধানের রাস্তা নয়। এ রাজ্যের সরকার একটা নির্দেশ দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, বাংলা-ওড়িশা সীমানায় গাড়ি আটকে তার বদলা হয়েছে। এটা কোনও পথ নয়। কোনও পক্ষের দিক থেকেই নয়।”
‘আলু দাও, পেঁয়াজ নাও’ এই স্লোগান তুলে শনিবার ওড়িশা সীমানার জলেশ্বরে পশ্চিমবঙ্গমুখী শতাধিক ট্রাক আটকে দিয়েছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পাক্কা দু’ঘণ্টা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে লক্ষ্মণনাথ চেকপোস্ট গেটের কাছে এই ‘চাক্কা জ্যাম’ চলে। আটকে পড়ে মাছ, ডিম, পেঁয়াজ বোঝাই প্রায় দেড়শো ট্রাক। রাজঘাট ও সরোতেও পশ্চিমবঙ্গমুখী ট্রাক আটকে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে অবরোধ তুলে দিলেও বিক্ষোভকারীরা সাফ জানান, তাঁরা ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দেখবেন। তারপরেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওড়িশায় আলু না ঢুকলে ওড়িশা সীমানা দিয়ে এ রাজ্যে কোনও ধরনের পণ্যবাহী গাড়িই তাঁরা ঢুকতে দেবেন না।
—নিজস্ব চিত্র।
শনিবারের এই বিক্ষোভ হয়েছিল নতুন তৈরি হওয়া সংগঠন ‘সীমান্ত জনমঞ্চ কমিটি’র ব্যানারে।
কারা এই জনমঞ্চ কমিটি?
স্থানীয় নানা মহলে কথা বলে জানা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিজেপি, সিপিএম, ওড়িশার স্থানীয় দল ‘কলিঙ্গ সেনা’-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই ছিলেন। বিজেপির বালেশ্বর জেলা কমিটির সহ-সভাপতি অরুণ বেজ নিজে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। অরুণবাবুই জানালেন, সিপিএমের প্রাক্তন সরপঞ্চ (পঞ্চায়েত প্রধান) সুদাম পাত্র, কমল চক্রবর্তী, কংগ্রেস নেতা ভোলানাথ গিরিও বিক্ষোভে ছিলেন। অরুণবাবুর কথায়, “এই মুহূর্তে আলুর আকাল আমাদের রাজ্যের প্রধান সঙ্কট। তাই আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মিলে মানুষের স্বার্থে পথে নেমেছি।”
আলুর দামের বাড়বাড়ন্ত যাতে রাজ্যের আমজনতাকে সঙ্কটে না ফেলে সে জন্য কেজি প্রতি ১৩ টাকায় আলুর দাম বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো যাবে না। এই সিদ্ধান্তের জেরেই সপ্তাহখানেক হল ওড়িশার বাজারে আলু অগ্নিমূল্য হয়ে ওঠে বলে সেখানকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। ১০ টাকা কেজি আলুর দাম চড়তে চড়তে ৪০ টাকায় গিয়ে পৌঁছয়। সাধারণ মানের জ্যোতি আলুর দামও দাঁড়ায় কেজি প্রতি ৩০ টাকা। গত শুক্রবার সঙ্কট চূড়ান্ত আকার নেয়। ওড়িশার প্রায় সব বাজার আলু-শূন্য হয়ে পড়ে। বেশি টাকা দিয়েও আলু পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে।
জলেশ্বর বাসস্ট্যান্ডের ম্যানেজার প্রশান্ত বসু পূর্ব মেদিনীপুরের লোক। কাজের সূত্রে বেশ কয়েক বছর হল ওড়িশায় রয়েছেন। প্রশান্তবাবু বললেন, “শনিবার রাতে কাজ সেরে ফেরার পথে জলেশ্বর বাজারে গিয়েছিলাম। আলু পাইনি। দু’দিন আগে চড়া দাম হলেও পাওয়া যাচ্ছিল। এখন একেবারে উধাও।” ‘জলেশ্বর মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি রাধাশ্যাম সাহুর বক্তব্য, “পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি থেকেই ওড়িশার প্রয়োজনীয় আলুর বেশিরভাগটা আসে। ‘বাঙ্গাল’ সরকার তা আসতে দিচ্ছে না বলে যত সমস্যা। লোকজন আলু না পেয়ে ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও পর্যন্ত হচ্ছে।” রবিবার সকালেও আলুর দেখা নেই জলেশ্বর বাজারে।
ওড়িশায় আলুর উৎপাদন এমনিতেই কম। স্থানীয় সূত্রের খবর, পশ্চিবঙ্গের এই পড়শি রাজ্যে বছরে ১০ লক্ষ টন আলুর চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ২ লক্ষ টন ওড়িশায় উৎপন্ন হয়। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘পিলিন’-এর দাপটে সেই চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষক মোর্চার বালেশ্বর জেলা সভাপতি বৈরাগ্যি বেহেরা বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে ফসল নেই বললেই চলে। তার মধ্যে এই আলু-সঙ্কটে সকলের নাভিশ্বাস উঠছে।”
মাছ-ডিম-পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক শনিবারই ওড়িশা সীমানা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। এখন আলুর ট্রাক কবে এ রাজ্য থেকে ওড়িশা পৌঁছয়, সেটাই দেখার।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.