আলু দিলে তবেই মাছ-পেঁয়াজ, রাজ্যমুখী ট্রাক আটক ওড়িশায়
শ্চিমবঙ্গ থেকে আলু আসছে না। রাজ্যে তাই আলুর আকাল হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে শনিবার পশ্চিমবঙ্গমুখী মাছ, ডিম, পেঁয়াজ বোঝাই প্রায় দেড়শো ট্রাক আটকে দিয়ে ওড়িশা সীমানায় বিক্ষোভ দেখালেন সেখানকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ঘেঁষা ওড়িশা সীমানায় জলেশ্বরের লক্ষ্মণনাথ এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে সকাল ৯টা থেকে ওই অবরোধ চলে। পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বেলা ১১টা নাগাদ অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে তত ক্ষণে জাতীয় সড়কে যে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে, তা কাটতে-কাটতে বিকেল গড়িয়ে যায়।
এ দিনের মতো জট কাটলেও ওড়িশা সরকার যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তা স্পষ্ট তাদের প্রশাসনের কর্তাদের প্রতিক্রিয়াতেও। এ দিনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে কথা বলেন ওড়িশার মুখ্যসচিব যুগলকিশোর মহাপাত্র। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সূত্রে খবর, এ রাজ্যের সরকারের তরফে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সমস্যার আশু সমাধান চাইছে ওড়িশাও। সেখানকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দামোদর রাউতের কথায়, “আমরা পড়শি রাজ্য। পরস্পরের সুবিধা-অসুবিধা না দেখলে কী করে চলবে? পশ্চিমবঙ্গ থেকে যেমন আমাদের এখানে আলু আসে, তেমনই আমাদের এখান থেকে মাছ, সব্জি, পেঁয়াজ যায় ওই রাজ্যে। এই ভুল বোঝাবুঝি দ্রুত মিটিয়ে নিলেই ভাল।”
রাজ্যে সঙ্কট সামাল দিতে সাময়িক ভাবে ভিন্ রাজ্যে আলু না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র এই সিদ্ধান্তকে প্রকারান্তরে সমর্থন করলেও বাস্তবে যে তা অন্য সমস্যা ডেকে আনতে পারে, এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন অনেকে। ঘনিষ্ঠ মহলে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক প্রশাসনিক কর্তাও মানছেন, ওড়িশার মতো অন্য রাজ্যগুলিতেও যদি এই অবরোধ-আন্দোলনের প্রভাব পড়ে এবং ক্রমশ তার মাত্রা বাড়ে, তবে বিপাকে পড়বে পশ্চিমবঙ্গবাসী। কারণ, এ রাজ্যে বেশির ভাগ খাদ্যসামগ্রীই ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি করা হয়। যেমন, পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজনীয় মাছ-ডিমের অনেকটাই আসে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে, ডাল জোগান দেয় রাজস্থান, পেঁয়াজ আসে মহারাষ্ট্র থেকে। গাজর-ক্যাপসিকাম-ফুলকপি-বাঁধাকপিও অন্য রাজ্য থেকেই পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। ফলে ওড়িশার ঘটনার প্রভাব পড়লে সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ দিন অবরোধকারীরাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে ফের পথে নামবেন। স্থানীয় ‘সীমান্ত জনমঞ্চ কমিটি’র নেতা কার্তিকচন্দ্র পালের হুঁশিয়ারি, “দু’দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।” এ দিনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয় দল ‘কলিঙ্গ সেনা’র রাজ্য সভাপতি হেমন্ত রথের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ কী ভাবে আলু নিয়ে তাদের সমস্যা মেটাবে, সেটা সেখানকার সরকারের ব্যাপার। তার জেরে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব কেন? যদি ওড়িশায় আলু পাঠানো না হয়, তবে বুধবার থেকে আমরা ওড়িশা সীমানা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পণ্যবাহী গাড়ি ঢোকাই বন্ধ করে দেব।” একই বক্তব্য বালেশ্বরের বিজেপি নেতা অরুণ বেজের। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য মনে করে, ওড়িশার লোক অন্ধ্রের ট্রাক আটকে দিলে সেটা ওই দুই রাজ্যের সমস্যা। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ জড়াতে চায় না। মাছের ট্রাক ছাড়াতে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার চাইলে ওড়িশা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুক।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওড়িশায় বছরে ১০ লক্ষ টন আলুর চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ২ লক্ষ টন সে রাজ্যে উৎপন্ন হয়। বাকি আলুর প্রায় সবটাই আসে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ হল পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার জেরে ওড়িশার বিভিন্ন বাজার কার্যত আলু-শূন্য। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা-ও কিলোপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। সঙ্কট কাটাতে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে আপাতত জরুরি ভিত্তিতে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওড়িশা সরকার। কিন্তু সেই আলু এখন সে রাজ্যে ঢুকতে শুরু করেনি। এই পরিস্থিতিতে সেখানকার ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ‘সীমান্ত জনমঞ্চ কমিটি’ গড়ে এ দিন রাস্তায় নামেন। জলেশ্বরের কাছে পশ্চিমবঙ্গমুখী খাদ্যপণ্য বোঝাই একের পর এক লরি আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। দুই রাজ্যের সীমানায় ওড়িশার দিকে লক্ষ্মণনাথ চেকপোস্টে মাছ, ডিম, পেঁয়াজ বোঝাই লরি আটকে পড়ে।
অবরোধকারীদের তরফে মাইকে প্রচার করা হয়, ‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলু না পাঠালে কোনও জিনিসই সীমানা পেরিয়ে যেতে দেওয়া হবে না।’ ওড়িশা পুলিশের একটি সূত্রে খবর, শুক্রবার হুগলির তারকেশ্বর থেকে ২০০ বস্তা আলু নিয়ে লুকিয়ে ওড়িশা আসার পথে বিভিন্ন এলাকায় মোটা টাকা দিতে হয়েছিল এক ব্যবসায়ীকে। এ দিন ওড়িশার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সে কথা প্রচারিত হওয়ার পর ক্ষোভ চরমে পৌঁছয়। তার জেরে শুধু লক্ষ্মণনাথ নয়, অবরোধ হয় বালেশ্বর ও সরো এলাকাতেও। জলেশ্বরের সার্কেল ইনস্পেক্টর সুজিত প্রধান বলেন, “লক্ষ্মণনাথ চেকপোস্টে অবরোধের জেরে প্রায় দেড়শো ট্রাক আটকে পড়েছিল। তার মধ্যে গোটা কুড়ি ট্রাকে অন্ধপ্রদেশ থেকে আসা মাছ ছিল। আমরা বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দিই।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.