|
|
|
|
পড়শি রাজ্যে আলু বন্ধে সায় কেন্দ্রের
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
ভিন্ রাজ্যের রসনা তৃপ্ত করতে গিয়েই আলু নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সম্প্রতি রাজ্যের বাজার থেকে আলু উধাও হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এমনটাই মনে করছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে ভিন্ রাজ্যে আলু যাওয়ার উপরে আপাতত নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তাকেও প্রকারান্তরে সমর্থনই করেছে দিল্লি।
কেন্দ্রের কাছে গোটা ঘটনায় খলনায়ক হচ্ছে ‘পিলিন’। এই ঘূর্ণিঝড়ে ওড়িশা-সহ দক্ষিণ ভারতে তো বটেই, প্রবল বৃষ্টি হয়েছে বিহার এবং ঝাড়খণ্ডেও। আর এই অসময়ের বৃষ্টিতেই মার খেয়েছে আলুর ফলন। ফলে বেড়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আলুর চাহিদা। রাজ্যে এ বার আলুর ফলনও ভাল হয়েছে। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক মনে করছে, তাই বাড়তি লাভের আশায় ওই সব রাজ্যে আলু পাঠাতে বেশি আগ্রহী পশ্চিমবঙ্গের আলু ব্যবসায়ীরা। আজ নাসিক থেকে ন্যাশনাল হর্টিকালচারাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা বি আর গুপ্ত বলেন, “গত মাসে ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আলু-সহ অন্যান্য সব্জির ফলন নষ্ট হয়েছে। এর ফলে এক দিকে চাহিদা তৈরি হয়েছে। আবার ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে বেশি লাভের আশায়ও আলু মজুত করার পথে হাঁটতে পারেন ব্যবসায়ীরা। সম্ভবত ওই দুই কারণেই রাজ্যের মানুষের পাতে বাড়ন্ত আলু।”
পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনও এই যুক্তিতেই ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করে। রাজ্যের বক্তব্য, বাড়তি লাভের আশায় ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ অন্য রাজ্যে আলু পাঠাতে উৎসাহী। তাই আলু ভর্তি কোনও ট্রাক যাতে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পার হতে না পারে, সে জন্য আন্তঃরাজ্য সীমানা সিল করার সাময়িক নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, সীমানা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত কি সঠিক?
এর বিরুদ্ধে সরব আলু ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য প্রশাসনের ওই নিয়ম অগণতান্ত্রিক। সিদ্ধান্তটি তোলার জন্য মমতার কাছে আর্জি জানিয়েছেন বিহার ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং নবীন পট্টনায়ক। তাঁরা বলছেন, তাঁদের রাজ্যে বাড়তি চাহিদা মেটানোর মতো আলুর ফলন হয়নি। তাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে এখনই আলু না এলে বড় সঙ্কট তৈরি হবে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও সীমানা বন্ধের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। বলেন, আলু অন্য রাজ্যে যেতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। তাঁর দাবি, আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক’জন তৃণমূল নেতার ষড়যন্ত্রের ফলেই রাজ্যে এই আলু-সঙ্কট।
পশ্চিমবঙ্গের সাময়িক সীমানা বন্ধের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক কী ভাবছে? কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানাচ্ছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে আলুর কথা বলা নেই। তাই মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, রাজ্য চাইলে সেই নিষেধাজ্ঞা আলুর উপরেও বলবৎ হতে পারে।
কমিশন ফর এগ্রিকালচার কস্ট অ্যান্ড প্রাইস-র চেয়ারম্যান অশোক গুলাটির বক্তব্য, “অত্যাবশ্যক পণ্য আইনটি কেন্দ্রীয় আইন হলেও তা রূপায়ণ করার দায়িত্বে থাকে রাজ্য সরকারগুলি। তাই কোনও রাজ্য চাইলে প্রয়োজনে কোনও পণ্যকে অর্ন্তভুক্ত করতে পারে বা বাদ দিতে পারে।” এই সূত্রে উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়, সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতের একটি রাজ্য চালের ক্ষেত্রে একই রকম বাধানিষেধ আরোপ করে।
রাজ্য সরকার আজ কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রককে জানিয়েছে, এত দিন উৎসবের মরসুম চলায় শ্রমিক অমিল ছিল। তাই হিমঘরগুলি থেকে মাল খালাসেও ভাটা পড়েছিল। বাজারে আলু পাঠাতে সমস্যা হচ্ছিল ব্যবসায়ীদের। তা ছাড়া বাজারে হঠাৎ করে যে আলুর চাহিদা তৈরি হবে, সে সম্পর্কে রাজ্যের কাছে কোনও পূর্বাভাস ছিল না। পচে যাওয়ার ভয়ে যে কোনও হিমঘরে প্রায় ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি তাপমাত্রায় আলু সংরক্ষণ করা হয়। সেখান থেকে আলুকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে তা বাজারে বিক্রি করতে হলে কয়েক দিন সময় লেগে যায়।
রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, সেই সময়টুকু পার হতেই বাজারে আলুর জোগান বাড়তে শুরু করেছে। আজ দিল্লিকে রাজ্য সরকার যে বার্তা পাঠিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, চলতি সমস্যাটির দেখভাল করছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর তত্ত্বাবধানে রাজ্য একাধিক পদক্ষেপ করেছে। ফলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে। |
পুরনো খবর: নেই তাই কুড়ি, পুলিশ এলেই লোকসান বাঁধা |
|
|
|
|
|