|
|
|
|
মোদীর মুখে মমতার প্রশংসা, গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
গোবলয়ে ভোট টানতে গিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন পাওয়ার চেষ্টা ছাড়লেন না নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
উত্তরপ্রদেশের বাহারাইচে আজ এক জনসভায় কংগ্রেসের পাশাপাশি মোদীর নিশানায় ছিলেন রাজ্যের দুই প্রতিপক্ষ মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহ যাদবও। আর সেখানেই নিজের বক্তব্যে এই দুই নেতা কী করে কংগ্রেসের হাত শক্ত করছেন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মোদী সুকৌশলে টেনে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মোদী বলেন, “মমতা দিদি নিজের রাজ্যের জন্য লড়াই করেন, আর্থিক প্যাকেজের জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করে রাজ্যের সাধারণ মানুষের উন্নয়নের চেষ্টা করেন। অথচ এ রাজ্যের এসপি, বিএসপি নেতারা দিল্লিকে বাঁচান, সিবিআইয়ের মামলার জন্য সাহায্য চান!”
উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদীর এই মন্তব্য কলকাতায় তৃণমূল নেতৃত্বের কানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব জানেন, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখে তাঁদের পক্ষে সরাসরি বিজেপি, বিশেষ করে মোদীর হাত ধরা স্বস্তিকর নয়। তাই তাঁরা মোদীর ওই মন্তব্যকে বিশেষ গুরুত্বই দিতে চাইছেন না। যে কারণে তৃণমূল নেতা মুকুল রায় বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের কারও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই।” তৃণমূলের এই প্রতিক্রিয়া আদৌ অপ্রত্যাশিত নয় মোদী কিংবা বিজেপির কাছে। কিন্তু বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, মমতাকে কাছে টানার এই চেষ্টা তাঁদের কৌশলেরই অঙ্গ। এবং দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মোদী সেই কাজটি লাগাতার করে যাচ্ছেন।
এর আগেও মোদী কলকাতায় গিয়ে নাম না করেও মমতার প্রশংসাই করেছিলেন। গত এপ্রিলের ওই সভায় কংগ্রেস ও সিপিএমকে দুষে মোদী বলেছিলেন, “গুজরাতে কংগ্রেসের বন্ধুরা যে গর্ত করে গিয়েছেন, তার জন্য আমাদের দশ বছর গিয়েছে! বাংলায় তো ৩৪ বছর ধরে গর্ত করা হয়েছে! মানুষ যাঁকেই এই দায়িত্ব দেবে, তাঁর না জানি কত বছর লাগবে। এখন যা হচ্ছে, আশা করি, গর্ত বোজানোর জন্যই করা হচ্ছে।”
কিন্তু মমতার তরফে কোনও ইতিবাচক সাড়া না পাওয়া সত্ত্বেও কেন মোদী তৃণমূল নেত্রীকে বারবার কাছে টানতে চাইছেন?
বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের পর মমতাকে এনডিএতে ফিরিয়ে আনার জন্যই এটা করা হচ্ছে। এনডিএতে এখন অকালি, শিবসেনার মতো কয়েকটি পুরনো শরিক দল থাকলেও তাদের শক্তি ততটা নয়। তা ছাড়া, ভোটের পরে পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা নিয়েও কিছুটা চিন্তায় বিজেপি নেতৃত্ব। এক সময় মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রেখে চললেও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা কিন্তু এখন বিজেপির থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন। শুধু তা-ই নয়, আগে মোদীর সব অনুষ্ঠানে নিজের প্রতিনিধি পাঠালেও এখন জয়া ‘সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী’ মঞ্চে নিজের প্রতিনিধিদের পাঠাচ্ছেন। যে মঞ্চ মোদী তথা বিজেপির সক্রিয় বিরোধী বলেই চিহ্নিত।
এই পরিস্থিতিতে মমতার মতো পুরনো এনডিএ শরিকদের আস্থা অর্জনের জন্য মরিয়া বিজেপি। তারা অবশ্য মমতার সংখ্যালঘু ভোটের বাধ্যবাধকতার কথাও জানেন। কিন্তু অন্য অঙ্কটিও মাথায় রাখছেন দলের নেতারা। মমতা বেশ কয়েক মাস ধরেই কংগ্রেস বিরোধিতার সুর চড়াচ্ছেন। তার উপর সিপিএমের সক্রিয়তায় অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে যে জোট তৈরির চেষ্টা চলছে, তাতে মমতার পক্ষে সামিল হওয়া কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই তাঁরা চাইছেন, ভোটের পর সরাসরি সম্ভব না হলেও অন্তত বাইরে থেকে যদি ইস্যুভিত্তিক সমর্থন করেন মমতা।
এর আগেও বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ হাওড়া উপনির্বাচনে প্রার্থী না দিয়ে মমতাকে বার্তা দিয়েছিলেন। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব মমতার প্রতি ‘রণং দেহি’ মনোভাব নিলেও কেন্দ্রীয় নেতারা বরাবরই নরম অবস্থান নিয়ে চলেন। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “মোদীকে নিয়ে মমতার মূল সমস্যা হল
রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট। অথচ মোদী কিন্তু দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হয়ে লাগাতার যে অবস্থান নিচ্ছেন, তাতে সম্প্রীতির কথাই বলছেন। বিভিন্ন সংখ্যালঘু নেতাও এখন প্রকাশ্যেই মোদীকে সমর্থনের কথা বলেছেন। এ সবের মাধ্যমে মোদী যেমন সব ধর্মের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন, তেমনই এর ফলে এনডিএ-র সম্ভাব্য শরিকদের কাছে টানার পথটিও সহজতর হবে।” |
|
|
|
|
|