|
|
|
|
ভিড়ে টেক্কা দিচ্ছে মোদীর সভাই, উদ্বেগ কংগ্রেসে
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
ভোটে কী হবে জানা নেই। কিন্তু তার আগে জনসভায় ভিড় জোটানোয় বিজেপির কাছে পিছিয়ে পড়ে এর মধ্যেই মন ভারী কংগ্রেসের! এতটাই যে, সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর আসন্ন সব জনসভায় ভিড় জোটানোর ব্যবস্থা করতে এখন রীতিমতো কৌশল-বৈঠকে বসছেন কংগ্রেস নেতারা। দিল্লিতে কংগ্রেসের ওয়ার রুমে সেই সব বৈঠকে ডাকা হচ্ছে রাজ্য নেতাদের।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, ভিড় জোটানোয় বিজেপি যে টেক্কা দিচ্ছে, ঘরোয়া আলোচনায় তা স্বীকার করতে অসুবিধে নেই। এর জন্য কোনও গোয়েন্দা তথ্যেরও প্রয়োজন পড়ছে না। পটনা হোক বা ভোপাল, টিভির পর্দায় চোখ রেখেই বোঝা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সব জনসভাই রাহুলের সভাগুলির থেকে আড়ে-বহরে বড়। এমনকী আজ উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচেও মোদীর সভায় বহু মানুষের সমাবেশ হয়েছে। যদিও অনেকেই মনে করেন, জনসভায় ভিড় হওয়া মানেই যে ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়বে, এমন নয়। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের মধ্যেই আলোচনা হচ্ছে যে মোদীর সভায় এই ভিড় কি স্রেফ তাঁর জনপ্রিয়তার জন্য হচ্ছে? ও তুলনায় রাহুলের জনপ্রিয়তা কি কমছে? নাকি কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতাই এর নেপথ্যে বড় কারণ?
কংগ্রেসের ওই নেতা জানান, রাজ্যস্তরে দলীয় ব্যবস্থাপনায় যে ত্রুটি রয়েছে, সে ব্যাপারে দিগ্বিজয় সিংহ, জয়রাম রমেশ, শাকিল আহমেদ, অজয় মাকেন-সহ শীর্ষ সারির প্রায় সব নেতাই একমত। তাঁরা মনে করেন, কোনও নেতার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণে তাঁর জনসভায় ভিড় হয় ঠিকই, কিন্তু দলীয় সংগঠনের ভূমিকাও কম থাকে না। বরং অনেক বেশি থাকে। কারণ, সার্বিক ভাবে ইদানীং সাধারণ মানুষের জনসভায় যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। টিভির পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার দেখা যায়। তাই রাজনৈতিক সভাগুলিতে যে ভিড় হালফিলে দেখা যায়, তা মূলত সাংগঠনিক শক্তির মাধ্যমে জোগাড় করা ভিড়।
কংগ্রেস নেতৃত্বের কথায়, মোদীর সব জনসভায় একে তো বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছে বিজেপি, তার ওপর ভিড় জড়ো করার জন্য মোদীরও নিজস্ব টিম রয়েছে। যে টিম কোনও জনসভার এক মাস আগে থেকে সংশ্লিষ্ট সভাস্থলে জমি তৈরি করছে। জেলা, মহকুমা, ব্লক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে ভিড় জোটানোর ব্যবস্থা করছে। সেই সমন্বয়টাই কংগ্রেসে অমিল। নেতাদের আশঙ্কা, সনিয়া-রাহুলের সভায় তুলনামূলক ভাবে কম ভিড় হওয়াটা ভোটের আগেই গোটা দেশে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলছে। এই বার্তাই যাচ্ছে যে, কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা কমেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন টিম রাহুলের নেতারা। গত কাল রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়েছে। আগামিকাল উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠকে বসতে চলেছেন রাহুলের অন্যতম আস্থাভাজন, কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন মিস্ত্রি। হাইকম্যান্ডের তরফে মিস্ত্রি উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের ৮ জোনাল সভাপতিকে ডেকে ভোকাল টনিক দেওয়া মধুসূদনের লক্ষ্য। সেই সঙ্গে সনিয়া-রাহুলের সভাগুলিতে লোকসভা কেন্দ্রওয়াড়ি এক এক জন নেতাকে ন্যূনতম কত জন করে সমর্থক নিয়ে যেতে হবে, তা-ও বেঁধে দেবে হাইকম্যান্ড। সেই ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সব রকম সাহায্য করার আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা জানান, ভিড় জোটানোয় মোদীর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার বন্দোবস্ত চললেও সভাস্থল তথা মঞ্চ নির্মাণে বিজেপি যে ‘বাহুল্য’ করছে, তা করবে না কংগ্রেস। রাহুল ঘনিষ্ঠ নেতার কথায়, প্রতিটি জনসভায় স্রেফ মঞ্চ ও আনুষঙ্গিক সাজসজ্জাতেই কয়েক কোটি টাকা খরচ করছে মোদী বাহিনী। রাহুল সে ধরনের আয়োজনের বিরুদ্ধে। গ্রাম ও গরিবের সামাজিক সুরক্ষার জন্য যে ভাবে সওয়াল করছেন, সভা আয়োজনে বৈভব তার সঙ্গে বেমানান। তিনি এও ভাবছেন, কংগ্রেসের সভায় ভিড় জোটাতে দলীয় সংগঠনকে আরও আগ্রাসী হতে হবে। নইলে এই ঘাটতিই ভোট সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। |
|
|
|
|
|