হিমশিম খাচ্ছেন নেতারাও
নেই তাই কুড়ি, পুলিশ এলেই লোকসান বাঁধা
বুধবারই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিপণন দফতরের ভার অরূপ রায়ের হাত থেকে নিজের হাতে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পোস্তা বাজার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে এসে মঞ্চের নীচে সামনের সারিতে বসে থাকা আলু ব্যবসায়ী গুরুপদ সিংহের দিকে আঙুল তুলে তিনি বললেন, “ওই তো গুরুপদ ওখানে বসে রয়েছে। তিন দিন আলু ছিল না। আলু না বেচে ও (গুরুপদ) ঘাটশিলায় পালিয়ে গিয়েছিল। তিন দিন ও যে লাভ করেছে, তাতে সাধারণ মানুষ, সরকার লোকসানে ছিল। আমি তিন দিন ওর লোকসান করাব।” গুরুপদবাবুর মতো বড় ব্যবসায়ী না হলেও ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবারই আলু বেচতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন সল্টলেকের ফাল্গুনী বাজারের জনা কয়েক খুচরো বিক্রেতা। এ দিন সকালে ২০ টাকা কেজি দরে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি করছিলেন তাঁরা। আচমকা পুলিশ এসে জানায়, ১৫ টাকা কেজি দরে বেচতে হবে। বিক্রেতারা বলেন, ‘‘আড়তদারদের কাছ থেকে ৫০ কেজির বস্তা কিনেছি ৮৫০ টাকা দিয়ে। মানে কেজি-পিছু ১৭ টাকা। ১৫ টাকায় বেচব কী করে?” অভিযোগ, সেই যুক্তি না শুনে ১৫ টাকাতেই আলু বেচতে বাধ্য করেছে পুলিশ। প্রায় দু’শো টাকা লোকসান দিয়ে ভেঙে পড়া বাসন্তী বিশ্বাস কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “পুলিশকে বললাম, আলু বিক্রি করব না। এখনই মাল নিয়ে ফেরত দেব আড়তদারের কাছে। এ বারের মতো ছেড়ে দিন। কিন্তু ওঁরা জোর করে বস্তা থেকে আলু ঢেলে বেচে দিলেন।” আর এক বিক্রেতা শিবদেবী সাউয়ের কথায়, “এ তো জুলুম! ভোর তিনটেয় উঠে বাজারে গিয়ে মাল কিনেছি। আমাদের মতো খুচরো বিক্রেতাদের মেরে কী লাভ? বড় ব্যবসায়ীদের তো কিছু করতে পারছে না সরকার!”
ফাল্গুনী বাজারে যখন পুলিশ ১৫ টাকা দরে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি করাচ্ছে, তখন ঢিল ছোড়া দূরের এফ ডি ব্লক বাজারে জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকায়। পুলিশের টিকিরও দেখা নেই। বাগুইহাটিতে যত ক্ষণ দোকানের সামনে পুলিশ হাজির, তত ক্ষণ জ্যোতি আলুর দর ১৩ টাকা কেজি। পুলিশ সরে যেতেই ২০।
আলুর আকালের মধ্যে হাওড়ার বাজারে পচা আলু নিয়েই পসরা দোকানির। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
পাড়ায়-পাড়ায় বাজারে-বাজারে নজরদারি যে কার্যত অসম্ভব, তা কবুল করছেন পুলিশ কর্তারাই। এক কর্তার কথায়, “সব কাজ ফেলে কত জায়গায় একসঙ্গে পাহারা দেব? আলু বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছি না।”
বিপাকে শাসক দলের নেতারাও। মনোহরপুকুর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ১০০ বস্তা আলু তুলেছিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। কিন্তু ওই এলাকায় কোনও সব্জি বাজার নেই। ফলে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় ক্লাবের ছেলেদের লাগিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হয়েছে তাঁকে। আর এক মেয়র পারিষদ সুশান্ত ঘোষ পড়েছেন আরও ফ্যাসাদে। কসবায় তাঁর এলাকায় চার-চারটি বাজার। আলু ঠিক মতো পৌঁছেছে কি না, দেখতে চারটি বাজারে চরকির মতো ঘুরতে হয়েছে তাঁকে। বস্তুত, শাসক দলের প্রায় সব কাউন্সিলরই এ দিন অন্য সব কাজ ফেলে আলু বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। নাম প্রকাশ না-করার শর্তে তাঁদের অভিযোগ, চাহিদার তুলনায় জোগান ছিল যৎসামান্য। প্রশ্ন উঠেছে সরকারি তত্ত্বাবধানে আসা আলুর গুণমান নিয়েও। এ দিন ভোররাতে হাওড়ার কালীবাবুর বাজার, শিবপুর বাজার, রামরাজাতলা বাজার ও কদমতলা বাজারে চার ট্রাক আলু আসে। পুলিশি পাহারায় তা ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন আড়তদাররা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, বেশির ভাগ আলুই পচা এবং প্রায় ছ’মাসের পুরনো। সে কথা স্বীকার করে হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, “এ দিন যে আলু এসেছিল তা ভিজে ছিল। তাই আমরা হুগলি থেকে শুকনো আলু আনার চেষ্টা করছি।”
এর পরেও অবশ্য আলু বিক্রি থেকে পিছিয়ে আসছে না সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার এ দিন বলেন, “যত দিন না বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন আমরা সমস্ত জায়গায় আলু সরবরাহ করব। আশা করছি, আজ, শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
আলু নিয়ে বেহাল পরিস্থিতির জন্য এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যেখানে হাত দিচ্ছেন, সেখানেই সমস্যা। মুখ্যমন্ত্রী আলুতে হাত দিয়েছেন। বাজার থেকে আলু হাওয়া হয়ে গিয়েছে।” আলু ব্যবসায়ীরা ভোটের সময় তৃণমূলকে টাকা দিয়েছে, তাই ওরা এখন বেশি দামে আলু বেচে সেই টাকা তুলছে এই অভিযোগ করে সূর্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আলু ব্যবসায়ীরা তাঁকে প্রতারণা করেছে। আবার ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার তাঁদের প্রতারণা করেছে। কে কাকে প্রতারণা করেছে বোঝা মুশকিল।” বাম আমলে ৪০০টি হিমঘর তৈরি হয়েছে দাবি করে সূর্যবাবুর অভিযোগ, তৃণমূলের আড়াই বছরে একটি হিমঘরও তৈরি হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, “বাম আমলে হিমঘরে কৃষি বিপণন দফতর আলু রাখত। কিন্তু তৃণমূল সরকার তা করেনি কেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.