আত্মঘাতী ব্যবসায়ী, আলু লুঠ হাড়োয়ায়
লুর দাম নিয়ে কড়াকড়ি এবং তার জেরে বাজার থেকে আলু উধাও হওয়া নিয়ে তরজার মধ্যেই পরপর দু’টি ঘটনায় অস্বস্তি বাড়ল রাজ্য সরকারের।
প্রথমটি, বর্ধমানে আলু ব্যবসায়ীর ‘আত্মহত্যা’ যে সরাসরি দামের ওঠা-পড়ার সঙ্গেই যুক্ত প্রশাসন তা মানতে নারাজ। কিন্তু ঘটনাচক্রে সরকার আলুর দাম কমাতে ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়ার পরেই এই মৃত্যুতে প্রশাসন কিছুটা বেকায়দায়। দ্বিতীয়টি সরাসরি হাড়োয়ার বাজারে মজুত আলু লুঠের ঘটনা। আলুর আকালই যে তার এক মাত্র কারণ, তা কোনও মহলই অস্বীকার করতে পারছে না।
বুধবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আলু ব্যবসায়ী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় (৫০)। বাড়ি বর্ধমান থানারই বেরুগ্রামে। ৩ নভেম্বর বিষক্রিয়া নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিবারের দাবি, আলু ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় অবসাদের জেরে বাড়িতেই তিনি কীটনাশক খান। ঘটনাচক্রে, তার দিন দুয়েক আগেই রাজ্য সরকার ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। শুক্রবার আলুর দাম বেঁধে দেওয়া হয়। আলুর ট্রাক আটকানোর প্রতিবাদে শনিবার থেকেই তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু করে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি।
সুব্রতবাবুর ছেলে পুলক ও ভাই হেমন্ত জানান, এ বার হিমঘরে প্রায় দু’হাজার বস্তা (৫০ কেজির) আলু রেখেছিলেন তিনি। যে চাষিদের থেকে আলু কিনেছিলেন, তাঁদের কাছে কয়েক লক্ষ টাকা ধার ছিল। মহাজনের ঋণও শোধ করতে পারেননি। পরিবারের পরিচিত আলু ব্যবসায়ী জিতেন ডকাল বলেন, “এত ধার ছিল, পুজোর সময়ে মাত্র ২০০ টাকায় উনি ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করেন। পরে যখন ৬০০-৬৫০ টাকা দাম উঠল, সেই লাভের সুযোগটা আর নিতে পারেননি।” মৃতের স্ত্রী মায়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক দিন ধরেই নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। কেমন যেন মূহ্যমান হয়ে ছিলেন।” ঘটনাচক্রে, তখনই আসে সরকারের আলুর দাম বেঁধে দেওয়ার খবর। পরিবারের দাবি, এর পরেই সুব্রতবাবু কীটনাশক খান।
পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, পারিবারিক অশান্তির জেরেই এই আত্মহত্যা। কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকও বলেন, “ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট চড়া দামে আলু বিক্রি করছিলেন বলেই তো সরকারকে নিয়ন্ত্রণের রাস্তা নিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে, কেউ কেন আত্মহত্যা করবেন তার কারণ বোঝা যাচ্ছে না। বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।” জেলার আর এক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “আলু ব্যবসায়ীরা ক’দিন আগে পর্যন্তও প্রচুর লাভ করেছেন। আত্মহত্যা করার মতো পরিস্থিতি নেই।” সিপিএম প্রভাবিত কৃষকসভার জেলা সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল পাল্টা বলেন, “বিজয়া দশমী পর্যন্ত আলুর দাম রোজ কমছিল। তার পরে কী ঘটল যে বাজার আগুন হয়ে গেল? সেই রহস্যের সমাধান না করে রাজ্য সরকার চটক দেওয়ার রাস্তায় হাঁটছে। এই ভ্রান্ত নীতির ফলেই কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয় হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও আলু ব্যবসায়ীর আত্মহত্যাকে বিক্ষিপ্ত ঘটনা হিসেবে দেখা যায় না।”
ইতিমধ্যে রাজ্য জুড়ে আলুর আকাল অব্যাহত। বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় পশ্চিম বাজারে আলু বিক্রেতাদের ঘেরাও করে ফেলে জনতা। দু’পক্ষের তর্কাতর্কির মধ্যেই বেশ কয়েক বস্তা আলু লুঠপাট করা হয়। খবর পেয়ে হাড়োয়া থানার ওসি এবং বিডিও ঘটনাস্থলে যান। হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সঞ্জু বিশ্বাস বলেন, “কয়েক জন আলু ব্যবসায়ী রাজ্য সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে আলু বিক্রি করায় ক্রেতারা ক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। ওই সময়ে বেশ কয়েক বস্তা আলু লুঠ হয়ে যায়। এখন বাজারে আলু অমিল।” হাড়োয়ার ওসি সুমিত মণ্ডলের বক্তব্য, “বেশি দামে আলু বিক্রির খবর পেয়ে বিডিও এবং আমি কয়েকটি বাজারে যাই। অনেকেই আলু সরিয়ে রাখায় জোগানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে আলু লুঠ হয়েছে, এমন কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি।” জেলার নেতা তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.