রাজ্যের যে সমস্ত ব্লকে এখনও কোনও চালকল নেই, সেখানে চালকল বসালেই সরকারি ভর্তুকি পাবেন শিল্পোদ্যোগীরা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার ধান-চাল সংগ্রহ সংক্রান্ত বিশেষ গোষ্ঠীর বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। রাজ্যের ৩৪১টি ব্লকের মধ্যে ১৬৫টিতে এখনও কোনও চালকল নেই। ওই সমস্ত ব্লকে চালকল তৈরি করলেই সর্বাধিক ৫৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে। আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লকগুলিতে পাওয়া যাবে সর্বাধিক ৮০ লক্ষ টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বামফ্রন্ট ৩৫ বছর রাজ্য চালালেও এখনও ১৬৫টি ব্লকে চালকল নেই। সরকার প্রতিটি ব্লকে চালকল খুলতে চায়। দ্রুত বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দরখাস্ত চওয়া হবে।” অমিতবাবু জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মিশনের থেকে এই ভর্তুকির টাকার ৭৫ শতাংশ পাওয়া যাবে। বাকি ২৫ শতাংশ দেবে রাজ্য। এ ছাড়াও রাজ্যের তরফে চালকল-পিছু বাড়তি ৫ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়া হবে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কোনও কারখানা তৈরি হলে জাতীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মিশনের আওতায় বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ অথবা সর্বাধিক ৫০ লক্ষ টাকা ভর্তুকির ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্যের এক আধিকারিক জানান, যখন দেখা গেল ১৬৫টি ব্লকে কোনও চালকল নেই এবং নতুন চালকল বসানোর জন্য খাদ্য দফতরের তরফে কোনও প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সাহায্যের বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয়, তখন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই প্রস্তাবটি দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী তা শোনামাত্র মঞ্জুর করে দেন।
চালকল বসালে এমনিতেই ক্ষুদ্রশিল্পে লগ্নির জন্য রাজ্যের ঘোষিত উৎসাহ-ভাতা পান বিনিয়োগকারীরা। অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সেই উৎসাহ-ভাতার পাশাপাশি তাঁরা অতিরিক্ত ভর্তুকিও পাবেন। অর্থাৎ বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ অথবা সর্বাধিক ৫০ লক্ষ টাকার সঙ্গে আরও ৫ লক্ষ। শুধু তা-ই নয়, নতুন চালকল বসালে এই ভর্তুকির টাকাকে কার্যত পুঁজি হিসাবেই দেখাতে পারবেন আগ্রহী উদ্যোগপতিরা। অমিতবাবুর ব্যাখ্যা, প্রকল্প মঞ্জুর হলে সরকার ভর্তুকির দায়িত্ব নেবে। সে ক্ষেত্রে লগ্নিকারীরা ঋণের আবেদন করার সময় সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার অঙ্গীকার পত্রটিও দেখাতে পারবেন। যা ঋণ পেতে সহায়ক হবে।
এই প্রকল্পে বড় চালকল খোলায় জোর দেওয়া হচ্ছে। একটি আধুনিক বড় চালকল নির্মাণের জন্য ৪-৫ কোটি টাকা খরচ হয়। সরকারি ভর্তুকি এবং উৎসাহ-ভাতার সুযোগ পেলে চালকল বসিয়ে অন্তত এক কোটি টাকা সরকারি সাহায্য পেতে পারে বিনিয়োগকারীরা।
১৭৬টি ব্লকে এখন উৎপাদনক্ষম চালকলের সংখ্যা ১০১৮। অর্থাৎ ব্লক-পিছু গড়ে ৬টি। তা হলে আরও চালকলের প্রয়োজন কেন? খাদ্য দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, এর কারণ মূলত তিনটি।
এক, সরকার রাজ্যের সমস্ত ব্লক থেকেই ধান কেনে। কিন্তু যে সব ব্লকে চালকল নেই, সেখান থেকে সংগৃহীত ধান ভাঙাতে অন্যত্র নিয়ে যেতে বাড়তি খরচ হয়। কোনও জায়গা থেকে কেনা ধান সেই ব্লকেই ভাঙিয়ে চাল করা গেলে খরচ কমবে। দুই, বাড়ির কাছে চালকল হলে চাষিরা নিজেরাও সেখান থেকে ধান ভাঙাতে পারবেন। তিন, যে সব ব্লকে এখনও চালকল নেই, সেগুলি আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া। সেখানে চালকল বসলে অল্প হলেও কিছু কর্মসংস্থান হতে পারে। তাই ভর্তুকিতে জোর দিচ্ছে রাজ্য। |