|
|
|
|
নাটকীয় শুনানিতে স্থগিত সিবিআই-রায় |
সংবাদ সংস্থা • নয়াদিল্লি |
হওয়ার কথা ছিল সোমবার। কিন্তু সিবিআই নিয়ে গৌহাটি হাইকোর্টের রায়ের জেরে ভণ্ডুল হতে বসেছিল সারা দেশে দুর্নীতি ও অপরাধের অসংখ্য মামলা। বিচার স্থগিত করতে মাঠে নেমেছিলেন অনেকে। কিন্তু কেন্দ্র তড়িঘড়ি শীর্ষ আদালতের শরণ নেওয়ায় আপাতত তা হচ্ছে না।
সোমবারের বদলে আজই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কেন্দ্র। প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের বাড়িতে নাটকীয় শুনানির পরে স্থগিতাদেশ পেয়ে আপাতত স্বস্তিতে তারা। ৬ ডিসেম্বর ফের এই মামলার শুনানি হবে।
অসমের সিবিআই আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন বিএসএনএল কর্মী নবীন্দ্র কুমার। পরে গৌহাটি হাইকোর্টে সিবিআইয়ের গঠন প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা করেন তিনি। তাতেই হাইকোর্ট রায় দেয়, সিবিআইয়ের তদন্ত বা গ্রেফতার করা ও চার্জশিট দেওয়ার অধিকার নেই। কারণ, কোনও আইন পাশ করে সিবিআই গঠন করা হয়নি। দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ এস্ট্যাবলিশমেন্ট (ডিএসপিই) আইনের অধীনে একটি প্রস্তাব এনে সিবিআই গঠন করা হয়েছিল। বিচারপতি ইকবাল আহমেদ আনসারি ও বিচারপতি ইন্দিরা শাহের বেঞ্চ জানায়, পুলিশ রাজ্য সরকারের অধীনস্থ। তাই কোনও রাজ্যের পুলিশের ক্ষমতা (এ ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশ) ধার করে গোটা দেশে তদন্ত চালানো বা গ্রেফতারির অধিকার সিবিআইয়ের নেই।
এই রায়ের ফলে সিবিআইয়ের হাতে থাকা অসংখ্য মামলার তদন্ত ও বিচার ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। গত কাল এই রায়ের কথা উল্লেখ করে বিচার স্থগিতের আর্জি জানান প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা -সহ টুজি কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্তরা। একই আর্জি জানান ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারও। আজ অবশ্য সজ্জন কুমারের কৌঁসুলি দাবি করেছেন, তাঁরা এই পদক্ষেপ করেননি। তবে দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত শিখদের কৌঁসুলি জানিয়েছেন, সজ্জনের আইনজীবী ঠিক কথা বলছেন না। তাঁরা গৌহাটি হাইকোর্টের রায়ের কথা উল্লেখ করেই স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন।
বিষয়টি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে তৎপরতা বাড়ায় কেন্দ্র। গত কাল বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীর। পরে নারায়ণস্বামী কথা বলেন সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিত সিন্হার সঙ্গেও। স্থির হয়, সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা চলবে না। তার দু’দিন আগে শনিবারই সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানানো হবে। সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হাতে থাকা কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দফতরের (ডিওপিটি) অধীন। ওই দফতরের তরফেই শীর্ষ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব।
এখন ছুটি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। তাই সরাসরি প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের কাছে ‘স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন’ পেশ করেন অ্যাটর্নি-জেনারেল জি ই বাহনবতী ও কেন্দ্রের অন্য কৌঁসুলিরা। আর্জিতে তাঁরা জানান, এই রায়ে দ্রুত স্থগিতাদেশ না দিলে বড় সঙ্কট দেখা দেবে। কারণ, সিবিআইয়ের হাতে থাকা ৯ হাজার মামলার বিচার চলছে। ১ হাজার মামলার এখন তদন্ত করছে ওই সংস্থা। গৌহাটি হাইকোর্টের রায় স্থগিত না হলে মনোবল হারাবেন তদন্তকারীরা। গোটা দেশে দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধের বহু তদন্তে কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে। গৌহাটি হাইকোর্টে আবেদনকারী নবীন্দ্র কুমারের কৌঁসুলি এল এস চৌধুরিও আজ হাজির ছিলেন প্রধান বিচারপতির বাড়িতে। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিচারপতির বাড়িতে শুনানি হয়। এই শুনানিতে তাঁদের বক্তব্যও যাতে শোনা হয় সে জন্য ‘ক্যাভিয়েট’ পেশ করেন চৌধুরি।
পরে প্রধান বিচারপতির অফিসের এক কর্মী জানিয়ে দেন, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়িতে বসেই এই আর্জি শুনবেন পি সদাশিবম। সঙ্গে থাকবেন বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাই। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। ফিরে এসে ওই আর্জি শুনবেন তিনি।
শুরু হয় প্রহর গোনা। সাড়ে চারটের সময়ে শুনানি শুরু করেন প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম ও বিচারপতি রঞ্জনাপ্রকাশ দেশাই। শুনানির শুরুতে বাহনবতী বলেন, “বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন ডিওপিটি আপিল করেছে। পরে সিবিআইও আলাদা আর্জি জানাবে।” আপত্তি জানান নবীন্দ্র কুমারের কৌঁসুলি। তিনি দাবি করেন, এই আপিল করতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বা সিবিআই। ডিওপিটি নয়। কারণ, হাইকোর্টে এই মামলায় ডিওপিটি পক্ষ ছিল না। সেই আপত্তি অবশ্য ধোপে টেকেনি। বেঞ্চ জানায়, ডিওপিটির এই আর্জি জানানোর এক্তিয়ার আছে। সিবিআই পরে আলাদা আর্জি
জানাবে। এই কারণে শুনানি থামানোর প্রশ্নই নেই।
সওয়ালে বাহনবতী জানান, হাইকোর্টের যুক্তি মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনিক আইনের ঠিক ব্যাখ্যা করা হয়নি। ডিএসপিই আইন সিবিআইয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এই বক্তব্য যুক্তিগ্রাহ্য নয়। মধ্যে এক বার তাঁকে থামিয়ে বেঞ্চ প্রশ্ন করে, “ডিএসপিই-র অধীনে প্রস্তাবের পরে সিবিআই নিয়ে আর কোনও পদক্ষেপও তো করা হয়নি?”
১০ মিনিট শুনানির পরে বিচারপতিরা জানান, এই রায় আপাতত স্থগিত থাকবে। অনেক অভিযুক্ত এই রায়ের কথা উল্লেখ করে বিচার স্থগিত করতে চাইছেন। সিবিআইয়ের অন্য মামলাগুলির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাঁরা। ৬ ডিসেম্বর ফের এই মামলার শুনানি হবে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের বক্তব্য খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। নবীন্দ্রকে দু’সপ্তাহের মধ্যে তাঁর বক্তব্য জানাতে হবে। তার জবাবও দেবে কেন্দ্র।
শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্তে দৃশ্যতই স্বস্তিতে কেন্দ্র ও সিবিআই কর্তারা। আপাতত সিবিআইয়ের তদন্ত বা বিচারের কাজ ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা আর রইল না। সিবিআইয়ের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, আগে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে সিবিআইয়ের মর্যাদায় সিলমোহর লাগিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তাই এ বারও শীর্ষ আদালতের রায় নিয়ে আশাবাদী তাঁরা।
আপাতত ৬ ডিসেম্বরের অপেক্ষা। |
|
|
|
|
|