সমর্থকরা ব্যবহার করছেন তাঁকে, সরব শর্মিলা চানু
নিজের সমর্থকদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুললেন ইরম শর্মিলা চানু। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে সামনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থে তাঁর ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে দমিয়ে রাখতে বাধ্য করছে ‘জাস্ট পিস ফাউন্ডেশন’-এর সদস্য-সমর্থকরা। এমনকী তাঁর খ্রিস্টান প্রেমিককে বিয়ে করলে তাঁকে খুন করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। অন্য দিকে, অভিযুক্ত সমর্থকরা শর্মিলার অভিযোগকে আসলে সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা বলে আওয়াজ তুলে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, সংবাদমাধ্যম নিজের স্বার্থে, শর্মিলার আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে ও তাঁর সমর্থকদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
অনশনের ১৩ বছর পূর্ণ হওয়ার পর আদালতে হাজিরা দিয়ে হাসপাতালে ফেরার ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে শর্মিলা অভিযোগ করেন, তাঁর হাত থেকে আন্দোলনের রাশ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর ‘তথাকথিত সমর্থক’-রা তাঁর ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার ধার ধারে না। শর্মিলা জানান, উত্তরাখণ্ডের মানুষের সাহায্যার্থে তিনি তাঁর পুরস্কারে পাওয়া অর্থের একটা অংশ রেডক্রসের হাতে তুলে দিয়ে চেয়েছিলেন। কিন্তু শর্মিলার হয়ে আন্দোলন চালানো সংগঠন তাঁকে সেই কাজ করতে দেয়নি।
নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শর্মিলা বলেন, “ওরা (মণিপুরের সমর্থকরা) প্রচণ্ড রক্ষণশীল। অনেকটা তালিবানের মতো। খ্রিস্টান প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে, ঘর বাঁধতে দেবে না। চেষ্টা করলে আমার কপালে ‘অনার কিলিং’ ঘটতে পারে।” উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিনের পত্রমিতালির পরে শর্মিলার প্রেমিক, ব্রিট্রিশ লেখক ও সমাজকর্মী ডেসমন্ড কুটিনহো ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইম্ফলে শর্মিলার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কিন্তু সমর্থকেরা দু’জনকে দেখা করতে দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। শেষ অবধি দু’দিনের অনশন-বিক্ষোভ চালাবার পরে ডেসমণ্ড শর্মিলার দেখা পান। সেই একবারই দু’জনের দেখা হয়েছিল।
সমর্থকদের প্রতি অভিমান জানালেও শর্মিলা আন্দোলনের সঙ্গে আপোস করবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, “ম্যান্ডেলার আন্দোলনের মাত্র অর্ধেক বছর আমি আন্দোলন করেছি। এখনও অনেক পথ চলা বাকি। এই আন্দোলনের জেরে সেনাবাহিনী এখন মানবাধিকার ভাঙার আগে দু’বার ভাবে।” তাঁর কথায়, “সব কিছুর সঙ্গে লড়াই করেই এগোতে হবে। তবে আমিও তো সাধারণ একটা মেয়ে। আমারও তো কিচ্ছু স্বাভাবিক ইচ্ছা থাকতে পারে। আমরা সমর্থকরা সে সব ভুলে গিয়েছে।”
এর আগে, ২০১১ সালে সংবাদমাধ্যমের সামনে একান্ত আলাপচারিতায় শর্মিলা নিজের প্রেম, চাওয়া-পাওয়ার কথা খুলে বলেছিলেন। সেবারও তিনি জানান, আন্দোলনের স্বার্থে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রেমের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দমিয়ে রাখা হচ্ছে সংসার গড়ার স্বপ্নও। কিন্তু সেই সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পরে শর্মিলা সমর্থকরা হিংস্র হয়ে ওঠেন। সংবাদপত্রের বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু হয়। দিনের পর দিন পুড়িয়ে দেওয়া হতে থাকে সংবাদপত্র। দু’বছর পরে ফের সরব শর্মিলা।
এ বারও শর্মিলার এই কথোপকথন প্রচারিত হওয়ার পরে মণিপুরে শর্মিলা-সমর্থকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। জাস্ট পিস ফাউন্ডেসন (জেপিএফ) জানায়, শর্মিলা ও তার সমর্থকদের মধ্যে ঘৃণা ছড়াবার দায়ে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো হবে। জেপিএফ-এর ম্যানেজিং ট্রাস্টি আনন্দী বলেন, “সংবাদমাধ্যম চক্রান্ত করে, আন্দোলন ভাঙার জন্য এমনটা করেছে। আমরা শর্মিলার ইচ্ছানুসারেই সব করেছি। তবে কোনও কোনও সময় তাঁর অযৌক্তিক আব্দার সঙ্গত কারণেই মানা সম্ভব হয়নি। তাই হয়তো শর্মিলার অভিমান হয়েছে।
কিন্তু আমরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করিনি।”
শর্মিলার আন্দোলনের সেনাপতি, তাঁর দাদা ইরম সিংহজিৎ বলেন, “ডেসমন্ড যখন শর্মিলার সঙ্গে দেখা করতে আসে তখন আমি শর্মিলাকে সাবধান করে চিঠি লিখেছিলাম। আমাদের সন্দেহ ছিল, সে ভারত সরকারের গুপ্তচর হতে পারে। সে শর্মিলাকে দুর্বল করে আন্দোলন ভাঙতে চাইছে। শর্মিলাকে বলি এমনটা হলে, আমাদের পরিবার, পাড়া, রাজ্যের সম্মান ধুলোয় মিশে যাবে। তা বলে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার কথা কখনওই বলা হয়নি।”
উত্তরাখণ্ডে অর্থ সাহায্য পাঠাবার বিষয়ে শর্মিলা যা অভিযোগ তুলেছেন, সেই বিষয়ে জেপিএফ-এর বক্তব্য, শর্মিলা রেডক্রসের মাধ্যমে টাকা দিতে চাইছিলেন। আমরা ট্রাস্টের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, রেডক্রসের অনেক টাকা। শর্মিলার পুরস্কারের সামান্য টাকায় ওদের তেমন সুবিধা হবে না। বরং মণিপুর থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের লড়াইয়ে অনেক সাহায্য প্রয়োজন। তাই রাজ্যের স্বার্থেই শর্মিলার অর্থ আফস্পা-বিরোধী আন্দোলনে কাজে লাগানো হয়।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.