|
|
|
|
ঝুলি ভরতে বাম ভরসা নীতীশ-নবীন-জয়া ত্রিভুজ |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
বাংলার ঘাঁটি ক্ষয়িষ্ণু। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে কল্কে পেতে গেলে লোকসভায় অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি আসন ঝুলিতে থাকতে হবে। এমতাবস্থায় তিন রাজ্যের বাইরে এ বার আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে আসন সমঝোতার রাস্তায় হাঁটতে চাইছে বামেরা।
বিহারে নীতীশ কুমার, ওড়িশায় নবীন পট্টনায়ক এবং তামিলনাড়ুতে জয়ললিতা এই ত্রিভুজের উপরে লোকসভা ভোটে ভরসা করতে চাইছেন বাম নেতৃত্ব। এর মধ্যে বিহার ছাড়া বাকি দুই রাজ্য থেকে বামেদের এখনই সাংসদ রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসন ঘাটতি হতে পারে বলে আগাম আশঙ্কা করেই ওই রাজ্যগুলি থেকে অঙ্ক মেলাতে তৎপর হয়েছে বামেরা। সিপিএমের চেয়েও এই দৌত্য প্রক্রিয়ায় আপাতত বেশি সক্রিয় সিপিআই। এবং তিন আঞ্চলিক দলের নেতৃত্বের দিক থেকেও প্রাথমিক কিছু সঙ্কেত তাঁরা পেয়েছেন।
এই মুহূর্তে লোকসভায় বামেদের আসন ২৪। তার মধ্যে সিপিএম ১৬, সিপিআই চার। দু’দলের এই ২০টি আসনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই ১১। কিন্তু রাজ্যের এখন যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে এই সংখ্যা আগামী বছর লোকসভা ভোটে ধরে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত নন সর্বভারতীয় বাম নেতৃত্ব। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের প্রাক্-নির্বাচনী জোট হবে না, বিজেপি কিছু কেন্দ্রে ভোট কাটবে এবং চতুর্মুখী লড়াই হবে বেশির ভাগ জায়গাতেই এত সব সম্ভাব্য ছবি মাথায় রেখেও এ রাজ্য থেকে এ বার ৭-৮টির বেশি লোকসভা আসন এখনই হিসাবে আনছেন না তাঁরা। বরং কেরল থেকে বাম নেতৃত্বের আশা বেশি। সেই রাজ্য থেকে অন্তত ১০-১২টি এবং ত্রিপুরা থেকে দু’টি আসন ধরে সংখ্যাটা কোনও ক্রমে ২০ ছাড়াচ্ছে। জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে এবং ভোটের পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার জন্য আরও কিছু আসন জেতা জরুরি বলে মনে করছে বামেরা। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন সংস্থার জনমত সমীক্ষা অবশ্য বামেদের ২৬ থেকে ৩২, এই পর্যায়ের আসন দিয়েছে।
সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “নীতীশের দলের সঙ্গে সমঝোতা চূড়ান্ত হলে এ বার আমরা বিহার থেকে আসন বার করতে পারব। ওড়িশাতেও বিজেডি-র সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে আমাদের ফল গত বারের চেয়ে ভাল হবে।” ওড়িশা থেকে এখন সিপিআইয়ের এক জন সাংসদ আছেন। নবীনের সাহায্য পেলে আরও একটি আসন তাঁরা জিততে পারবেন বলে আশাবাদী সিপিআই নেতারা। সদ্য এনডিএ ছেড়ে-আসা জেডিইউ-এর সঙ্গে এখনই আসন সমঝোতায় যাওয়া উচিত হবে কি না, সেই প্রশ্নে অবশ্য বামেদের মধ্যেই দ্বিমত আছে। শীর্ষ বাম নেতারা এ-ও বলছেন, শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হলে বিহার থেকে সিপিআই-ই আসন বার করার জায়গায় আছে। দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশে এ বার তেলঙ্গানা-প্রশ্নের জেরে সিপিএম এবং সিপিআই, দু’দলই পায়ের তলার মাটি হারানোর আশঙ্কা করছে। তেলঙ্গানা-প্রশ্নে দু’দলের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও। তবে আরও দক্ষিণে তামিলনাড়ুর ব্যাপারে দু’দলই আশাবাদী। ওই রাজ্যে সিপিএম এবং সিপিআইয়ের এখন একটি করে লোকসভা আসন আছে। এডিএমকে নেত্রীর সহযোগিতা নিয়ে আরও দু’টি আসন তাদের ঝুলিতে আনতে চান বাম নেতৃত্ব। তামিলনাড়ুর সিপিআই রাজ্য সম্পাদক ডি পান্ডিয়ানের সঙ্গে ‘আম্মা’র সম্পর্ক ভাল। তাঁকে সামনে রেখেই জয়ার সম্মতি আদায়ের চেষ্টায় আছেন সিপিআই নেতৃত্ব। পাশাপাশি, নিজেই গোটা বিষয়টি দেখভাল করছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। যে তিন আঞ্চলিক দলগুলিকে ধরে বামেদের এই প্রয়াস, তারা প্রত্যেকেই দিল্লিতে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল। আসন সমঝোতার ক্ষেত্রেও তারা আলোচনার প্রক্রিয়াতেই রয়েছে। তবে এই গোটা উদ্যোগকে ফের কোনও ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা হিসাবে মানতে রাজি নয় সিপিএম। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “জোড়াতালি দিয়ে আর কোনও তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্ট হবে না, আগের পার্টি কংগ্রেসেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। রাজ্যভিত্তিতে কিছু আসন সমঝোতার পথে যাওয়া হবে। রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনে যে কাজটা ইতিমধ্যেই হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনেও অন্যান্য রাজ্যে সেই রকম সমঝোতার চেষ্টা হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|