পথের কাঁটা ঝঞ্ঝাতেই দূর, রাজ্যের দোরগোড়ায় শীত
সূর্য ডুবতেই আলতো ঠান্ডার আমেজ। আর ভোরের দিকে ফ্যান চালানো তো দূর, গায়ে চাদর না-চাপিয়ে উপায় থাকছে না। দিনভর শুকনো হাওয়ায় টান ধরছে গায়ের চামড়াতেও!
সবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়েছে। তাতেই রাজ্য জুড়ে জাঁকিয়ে বসছে উত্তুরে হাওয়া! প্রলম্বিত বর্ষার জেরে শীতের রথ থমকে যাওয়ার যে আশঙ্কা দানা বাঁধছিল, তা-ও ক্রমশ ফিকে হতে শুরু করেছে। উত্তর ভারতে এরই মধ্যে জোরদার শীত-পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাওয়ায় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এ মরসুমে বাংলাকেও তা বঞ্চিত করবে না।
আবহবিদেরা বলছেন, কাশ্মীরে পরের পর পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আঘাত হানছে। সেখান থেকে তা নেমে আসছে উত্তর ভারতের দিকে। এবং তারই আঁচ এসে পড়ছে বঙ্গভূমিতে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে ইতিমধ্যে রাতের তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। রবিবার কলকাতা ও আশপাশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা কিনা স্বাভাবিকের তুলনায় ১ ডিগ্রি কম। উত্তরের তরাই-ডুয়ার্সেও এ দিন পারদ নেমেছে কোথাও স্বাভাবিকের দু’ডিগ্রি, কোথাও বা তিন ডিগ্রি নীচে!
তা হলে কি শীত এখন বাংলার দোরগোড়ায়? আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
“এমন নয় যে, শীত পড়ে গিয়েছে। তবে উত্তুরে বাতাস বইছে। অর্থাৎ শীত আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” এ দিন বলেছেন আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তাঁর ব্যাখ্যা, “শীত একেবারে আচমকা হাজির হয় না। একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে, ধীরে ধীরে আসে। সেই পরিবেশের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে।” আবহ-বিজ্ঞানীদের মতে, শীতের আগমন বহুলাংশে নির্ভর করছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার উপরে। কাশ্মীর-সহ উত্তর ভারতে যত বেশি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হানা দেবে, পশ্চিমবঙ্গে শীত আসার পথ তত প্রশস্ত হবে।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝা জিনিসটা কী?
আবহ-বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে বয়ে আসা বরফ-শীতল হাওয়া আফগানিস্তান-পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে ঢোকে। ফলে সেখানে বৃষ্টি হয়, কখনও তুষারপাত। সেই হাড় হিম করা বাতাস উত্তর ভারতে নেমে এসে সেখানকার তাপমাত্রা টেনে নামায়। এ বছর বর্ষা বিদায় নিতে না-নিতেই একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীর উপত্যকা পেরিয়ে উত্তর ভারত ছুঁয়ে ফেলছে। যার জেরে উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই মুহূর্তে রীতিমতো ঠান্ডার কামড়। মৌসম ভবনের তথ্য: দেহরাদূন-সহ উত্তরাখণ্ডের বহু জায়গায় রাতের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন স্বাভাবিকের তুলনায় ৩-৪ ডিগ্রি নীচে নেমে গিয়েছে। আবহ-বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস: আজ, সোমবার কাশ্মীরে ফের একটা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হাজির হওয়ার কথা। সেটিরও উত্তর ভারতে সরে আসার সমূহ সম্ভাবনা। ফলে আগামী ক’দিনের মধ্যে উত্তর, মধ্য ও পূর্ব ভারতের তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
বস্তুত ঠান্ডার এমন দরাজ মেজাজ গত বছরেও দেখেছে দক্ষিণবঙ্গ। গত বার নভেম্বরের গোড়াতেই ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছিল। ওই মাসেরই শেষ দিনে দশ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিল থার্মোমিটারের পারদ। কিন্তু এ বছর বর্ষা যথেষ্ট লম্বা ইনিংস খেলে গিয়েছে। খাতায়-কলমে সে দক্ষিণবঙ্গ থেকে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে বিদায় নিলেও অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলে নিম্নচাপের সুবাদে বানভাসি বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। বর্ষার এ হেন দীর্ঘ দৌড় শীতের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে কি না, আবহ-বিজ্ঞানীদের একাংশ সে সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। তাঁরা আশঙ্কা করছিলেন, বর্ষার ক্যালেন্ডার পিছিয়ে যাওয়ায় শীতের আগমন বিলম্বিত তো হবেই, উপরন্তু পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের মাত্রাধিক্য হয়তো তার তীব্রতাতেও লাগাম পরাবে।
তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে তাঁরা অনেকটাই আশ্বস্ত। কারণ, ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলে নিম্নচাপের প্রভাব কাটতেই আবহাওয়ার মতিগতি বদলে গিয়েছে। পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বাতাসে চলে এসেছে শুকনো হিম-হিম ভাব। চামড়ায় খড়ি উঠছে। অর্থাৎ, গত বছরের মতো এ বারও নভেম্বরের সূচনায় প্রায় শীতের মেজাজ। পুরোদস্তুর শীত পড়ার পক্ষে অনুকূল পরিবেশও দেখা যাচ্ছে। কী রকম?
আবহবিদেরা বলছেন, ভাল ঠান্ডা পড়তে হলে দিন ও রাতের তাপমাত্রায় যথেষ্ট ফারাক থাকা জরুরি। সঙ্গে চাই মেঘমুক্ত, পরিষ্কার আকাশ। রবিবার দিনভর কলকাতার আকাশ ছিল ঝকঝকে নীল। রাতেও তা-ই। পাশাপাশি শুকনো উত্তুরে হাওয়া ঢুকে বাতাসের অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প হটিয়ে দিচ্ছে। উপরন্তু দিনের বেলায় প্রখর সূর্যালোকে মাটির জলীয় বাষ্পও বাষ্পীভূত হয়ে যাচ্ছে। গোটা পরিমণ্ডলের আবহাওয়ার এই শুষ্কতা আবার আরও বেশি উত্তুরে হাওয়া প্রবেশের পথ খুলে দিচ্ছে। কুয়াশার সম্ভাবনাও বিশেষ নেই।
আবহবিদেরা এ-ও জানাচ্ছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সরাসরি এ রাজ্যের উপরে চলে এলে উল্টে বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়বে, তাতে ঠান্ডা কমবে ক’দিনের জন্য। পরের পর্যায়ে ফের শুকনো হাওয়ার দাপটে আবার ফিরবে ঠান্ডা। এ ভাবে দফায় দফায় ঠান্ডা-গরমের মধ্যে দিয়ে পাকাপাকি ভাবে শীতের আবির্ভাব হবে। আবহবিদেরা যে প্রক্রিয়াটিকে প্রাক-শীত পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করছেন। তবে সব মিলিয়ে আগামী কয়েক দিনে দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা কমবে বলে আলিপুরের পূর্বাভাস। “তরাই-ডুয়ার্সে ইতিমধ্যে শীতের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে,” বলেছেন অধিকর্তা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.