লোকসভা ভোটের মুখে ফের শিল্পায়নকেই অস্ত্র করছে সিপিএম।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজ্যে শিল্পায়নের দুই মুখ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে এক জনসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “কলকারখানা না হলে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই হবে না। এখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” প্রায় একই ভাবে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে নিরুপমবাবুর বক্তব্য, “শিল্পায়ন নিয়ে রাজ্য সরকারের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিই নেতিবাচক।”
পঞ্চায়েত ভোটে স্বরূপনগরে ভাল ফল করেছে সিপিএম। পক্ষান্তরে, রঘুনাথপুরে তাদের ফল খারাপ হয়েছে। অথচ, দুই এলাকাতেই সিপিএমের দুই শীর্ষ নেতা একই সুরে শাসক দলের শিল্পায়নের ‘ব্যর্থতা’কেই হাতিয়ার করলেন। যা লোকসভা ভোটের মুখে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। তবে বুদ্ধবাবু-নিরুপমবাবুদের বক্তব্যকে কোনও গুরুত্বই দেননি রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীকে সমালোচনা করেপার্থবাবু বলেন, “ওঁদের কথা শুনে দুই হুজুরের গপ্পোর কথা মনে হচ্ছে। যাঁরা ৩৪ বছরে এই বাংলায় শুধু বেকারত্বের জ্বালা, কারখানার ধোঁয়া বন্ধ করেছেন, কৃষিজীবীর ভাতের থানায় লাথি মেরেছেন, তাঁদের মুখে এসব কথা মানায় না।” তাঁর কটাক্ষ, “ওঁরা আগে ভাত ঘুম দিতেন। এখন বাংলার মানুষ ওঁদের শীত ঘুমে যেতে বলছে।”
এ দিন স্বরূপনগরের মালঙ্গপাড়ার জনসভায় বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, “সরকার কেবল উৎসব ও জলসায় মেতেছে। ক্লাবগুলোকে টাকা বিলোচ্ছে। তাতে কি ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবে? ক্লাবের ছেলেদের বলব, আপনাদের চাকরির কী হবে, ভেবেছেন? কলকারখানা না হলে চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই হবে না। এখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” বামফ্রন্ট আমলের উল্লেখ করে তাঁর দাবি, “আমাদের সময়ে বাংলার গ্রামে কৃষক ও গরিব মানুষদের যে উন্নতি হয়েছিল, এখনকার সরকার তার ছিটেফোঁটাও করতে পারছে না। আমি বুঝেছিলাম, শুধু চাষ করলে হবে না, কলকারখানা তৈরির চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু এদের সে আগ্রহটুকুও নেই।” বামফ্রন্ট আমলে বুদ্ধবাবু এবং নিরুপমবাবু শিল্পায়নে জোর দিয়েছিলেন। সিঙ্গুরে মোটরগাড়ি কারখানা গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টাটা মোটরস। কিন্তু বিরোধী তৃণমূলের আন্দোলনের জেরে সেই প্রকল্প আর বাস্তবায়িত হয়নি। এ দিন বুদ্ধবাবু পুরনো দিনের কথা তুলে বলেন, “অনেকে ভেবেছিলেন, আমাদের সরিয়ে দিলে রাজ্যের অবস্থা ভাল হবে। কিন্তু এই সরকারের আড়াই বছরে শিল্প, চাষবাস সবেতেই রাজ্য পিছিয়ে পড়েছে। এই সরকারের নীতির জন্য একটা কলকারখানাও রাজ্যে আসছে না।” জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি, কৃষক আত্মহত্যার ঘটনার পিছনেও তিনি বর্তমান সরকারকেই দুষেছেন। সামনে লোকসভা মানুষের ভালর জন্য তাঁরা লড়াই করবেন বলে বুদ্ধবাবু উল্লেখ করেন। এ দিনের সভা ঘিরে মানুষের ভিড় ছিল দেখার মতো। যাতে খুশি বাম নেতারা।
এ দিন রঘুনাথপুরে ডিওয়াইএফের সভায় নিরুপমবাবু অভিযোগ করেন, “তৃণমূল দেশের অন্যতম বড় শিল্প সংস্থার মোটরগাড়ির প্রকল্পকে রাজ্য থেকে তাড়িয়েছে। এ বার যদি ডিভিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রঘুনাথপুর থেকে তাদের প্রকল্প গুটিয়ে নেয়, তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে গোটা দেশেই।” প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রীর দাবি, এই ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা না থাকলেও বর্তমান সরকারের শিল্পায়ন নিয়ে নূন্যতম আগ্রহ নেই বলেই সামান্য সমস্যা মেটাতে তারা ব্যার্থ হচ্ছে। স্থানীয় সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বলেন, “ডিভিসি-কে আমরা এই প্রকল্প সরিয়ে নিয়ে যেতে দেব না। এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামব।” তবে বৃহস্পতিবার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করার পরে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন জানিয়ে দেন, তাঁরা ওই প্রকল্প সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন না। শীঘ্রই শুরু করা যাবে বলে তিনি ও শিল্পমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
শিল্পায়ন নিয়ে বর্তমান সরকার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলছে বলে নিরুপমবাবু মন্তব্য করেছেন। বর্তমান শিল্পমন্ত্রী প্রাক্তনের মন্তব্য উড়িয়ে পাল্টা বলেছেন, “নিরুপমবাবুদের সময়ে ৩৪ বছরে রাজ্য ৪৭১০টি শিল্প অনুমোদন পেয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৮০০টা বাস্তবায়িত হয়েছিল। এটাই নেতিবাচক। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ২৭ মাসে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটা ইতিবাচক।”
|