প্রতারকের হাঁড়ি এ বার হাটে ভাঙবে ক্রেতা-সুরক্ষা
রাস্তার ধারে বড় বড় হোর্ডিংয়ে লেখা থাকবে প্রতারক সংস্থা ও প্রতারিত ব্যক্তির নাম। রেডিও-র এফএম চ্যানেলে হরবখত শোনা যাবে সেই সব গ্রাহক বা ক্রেতার সাক্ষাৎকার, যাঁরা ক্ষতিপূরণের মামলা জিতে এসেছেন।
এমনই বিবিধ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে চলেছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। উদ্দেশ্য: হাটে হাঁড়ি ভেঙে প্রতারকদের মুখ পোড়ানো, যাতে ভবিষ্যতে লোক ঠকানোর আগে কেউ দু’বার ভাবে।
সাম্প্রতিক কালে কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে মামলা করে গ্রাহকেরা জিতেছেন। আদালতের নির্দেশে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে বেশ কিছু সংস্থা। আবার ক্রেতা-সুরক্ষা দফতর নিজেও সালিশির মাধ্যমে প্রতারিত কয়েক জনকে ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিয়েছে। দফতর এ বার এ রকম বিভিন্ন মামলার উল্লেখ করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্রেতা-সুরক্ষার এক কর্তার কথায়, “যেমন, কোনও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে কিংবা কোনও সংস্থার কোনও পণ্য কিনে কেউ প্রতারিত হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট রোগী বা ক্রেতার নাম জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। আশা করছি, নিজেদের গাফিলতি এ ভাবে প্রকাশ্যে চলে এলে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিষেবাদান বা পণ্য বিক্রির ব্যাপারে আরও যত্নবান ও সতর্ক হবে।”
গ্রাহক হুঁশিয়ার
কী করবেন
খরিদকালে দেখে নিন পণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ
কোনও গ্যারান্টি কার্ড হারাবেন না
বাটখারায় সিল আছে কি না নজর রাখুন
প্রতারিত হলে
ফোন করুন
কিংবা জানান www.wbconsumers.gov.in
কিন্তু এ ভাবে কারও গায়ে ‘প্রতারক’ ছাপ্পা মেরে প্রচার চালালে তো মামলা হতে পারে?
রাজ্যের ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে এ নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন। “করে দেখুক না! আমাদের কাছে সব প্রমাণপত্র থাকবে! তা ছাড়া আমরাই তো পাল্টা মামলা করছি!” বলছেন তিনি। সাধনবাবুর দাবি, এ হেন বেশ কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। এদের চারটির বিরুদ্ধে সরকার নিজে থেকে মামলা শুরু করেছে।
মন্ত্রীর সঙ্গে কার্যত একমত আইনজীবী দীপনারায়ণ মিত্র। তাঁর বক্তব্য, “অবশ্যই এমন বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। কেননা গ্রাহকের দাবি চ্যালেঞ্জ করে সংস্থার যেমন উচ্চতম আদালত পর্যন্ত যাওয়ার অধিকার রয়েছে, তেমনই সংস্থাটি আদালতের রায় মেনে নেওয়ার পরে তার নাম করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার অধিকার রয়েছে সরকারের।” তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে যে সব সংস্থা, তাদের প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করতে হবে। বিজ্ঞাপনে বেছে বেছে কিছু সংস্থার নাম দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন দীপনারায়ণবাবু। ক্রেতা-সুরক্ষার অফিসারেরাও বলেছেন, ক্ষতিপূরণে বাধ্য হওয়া যাবতীয় সংস্থার নাম করেই তাঁরা প্রচার-বিজ্ঞাপন দেবেন। কোনও বাছ-বিচার হবে না।
ক্রেতা-কোর্টে মামলা
অর্থবর্ষ সংখ্যা
৪৪২১
৬৬৮৯
৩৭৯৮*
* এপ্রিল থেকে অগস্ট পাঁচ মাসের হিসেব
শুধু হাসপাতাল বা পণ্যের নির্মাতা-বিক্রেতা নয়। পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগ থাকলে মোবাইল সংস্থা থেকে শুরু করে তেল, পানীয় জল, প্রোমোটার কিংবা বিমা সংস্থাকেও ক্রেতা-আদালতে টেনে আনা যেতে পারে। দফতরের আধিকারিকদের মতে, পণ্যের ক্রেতা বা পরিষেবার গ্রাহকেরা প্রায়শ ঠকছেন। অথচ প্রতিকারের উপায় তাঁদের অনেকেরই জানা নেই। দু’-তিন বার সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে দরবার করে ব্যর্থ হয়ে তাঁরা হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। তাই ক্রেতাকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারে নামা হয়েছে বলে দাবি সাধনবাবুর। তিনি বলেন, “বিভিন্ন জেলার কোর্টে গ্রাহক-প্রতারণার বিস্তর মামলা চলছে। আমরা বলছি সেগুলো ক্রেতা-আদালতে নিয়ে আসতে। এতে কাজ হচ্ছে। অনেক মামলা চলে আসছে।”
ক্ষতিপূরণ মিলছে কী ভাবে?
ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রথমে অভিযোগকারী গ্রাহক আর অভিযুক্ত সংস্থাকে নিয়ে তাঁরা মধ্যস্থতায় বসেন। অনেক সময়ে দফতরের পরামর্শ মেনে সংস্থা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়, কিংবা পণ্য বদল করে দেয়। বহু ক্ষেত্রে অবশ্য মধ্যস্থতায় কাজ হয় না। তখন গ্রাহক বাধ্য হন ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হতে। ঘটনা হল, বহু গ্রাহকেরই আদালত পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য বা ধৈর্য থাকে না। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এঁদের স্বার্থরক্ষায় তাঁরা রাজ্যে পাঁচটি ‘ক্রেতা-সাহায্য কেন্দ্র’ পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করতে চলেছেন। কলকাতা, হাওড়া, বারাসত, দুর্গাপুর ও শিলিগুড়িতে কেন্দ্রগুলো চালানো হবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে। সেখানে আইন-বিশেষজ্ঞ থাকবেন। মামলার ফয়সালা না-হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রগুলি গ্রাহকদের হয়ে লড়াই করবে। যাবতীয় খরচ বহন করবে সরকার। দিল্লি যেতে হলে তার দায়িত্বও রাজ্য সরকারের।
এ সবের কারণেই বাড়ানো হচ্ছে বিজ্ঞাপনের ব্যয়। দফতরের তথ্য: ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে যেখানে ক্রেতা-সুরক্ষার বিজ্ঞাপন খাতে ২ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল, সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে তা ধরা হয়েছে ১০ কোটি। মানে, পাক্কা পাঁচ গুণ!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.