প্রায় সাড়ে তিনশো আসনের হলঘর ভর্তি। ঘরের ছেলের ঐতিহাসিক লড়াই দেখার টান যতই থাক দাবার লড়াই ঘিরে এমন উৎসাহ এর আগে কখনও ভারতে দেখা গিয়েছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। শনিবারের চেন্নাই যেটা দেখল। আগাগোড়া দর্শকদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
অবশ্য বিশ্বনাথন আনন্দ আর ম্যাগনাস কার্লসেনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যুদ্ধ নিয়ে পারদ চড়লেও প্রথম গেম যদিও ড্র হল ১৬ চালেই। সব মিলিয়ে লড়াই হল এক ঘণ্টা ২২ মিনিটের। এ রকম তুমুল উৎসাহের পর প্রথম গেমের এমন ফল হতাশাজনক লাগতে পারে। অন্তত নরওয়ের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের পক্ষে তো বটেই। সাদা ঘুঁটি দিয়ে শুরু করার সুবিধে পেলেও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারল না কার্লসেন। আসলে আনন্দের দুটো তুখোড় চালের কাছে আটকে গেল ও।
আনন্দের এ দিনের খেলায় দুটো বিষয় কিন্তু খুব স্পষ্ট। দুরন্ত প্রস্তুতি আর ওর চালে টিমের সেকেন্ডদের ছাপ। বিশেষ করে পিটার লেকো। যে ওপেনিং (গ্রোনফিল্ড ডিফেন্স) দিয়ে আনন্দ শুরু করেছিল সেটা কেরিয়ারের শুরুতে ওকে খেলতে দেখেছি। ওর টিমের অন্যতম সেকেন্ড লেকোর সঙ্গে কাজ করার জন্য বোধহয় আবার সেই ভেরিয়েশনে ফিরে গেল। কারণ হাঙ্গারিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার লেকো এই ওপেনিংয়ে খেলতে ভালবাসে। |
আমার মনে হয় রেটি ওপেনিংয়ে শুরু করে কার্লসেন ড্র মেনে নিতে বাধ্য হল দুটো কারণে। প্রথমটা আনন্দের দুরন্ত ওপেনিং। যা দেখে আনন্দের প্রস্তুতিটা ও মেপে নিল। হয়তো পরের গেমগুলোয় যার পাল্টা দিতে দেখব কার্লসেনকে। দ্বিতীয় কারণটা আগেই বলেছিলাম কালো ঘুঁটি দিয়ে শুরু করাটা আনন্দের শুভ। সেটাই হল। দিনটা কার্লসেনের ছিল না। আনন্দের ৯ নম্বর আর ১২ নম্বর চালটাই মোক্ষম। তাতেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল কার্লসেনের পজিশন। ও যে রকম লম্বা গেম খেলে জিততে ভালবাসে তার কোনও সুযোগই আনন্দ ওকে দেয়নি। বরং পাল্টা চাপে ফেলে দিয়েছিল। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ড্র করার সিদ্ধান্ত নিতে কার্লসেন দেরি করেনি।
মোট ২৯ বার মুখোমুখি লড়াইয়ের বিচারে আনন্দ ৬-৩ এগিয়ে। দু’জনের মধ্যে এর আগে ২০টা ম্যাচ ড্র হয়েছে। ওরা শেষ বার মুখোমুখি হয়েছিল মাস পাঁচেক আগে। ম্যাচটায় দাপট ছিল নরওয়ের ছেলেটারই। সেই পারফরম্যান্সে আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে হয়তো কিছুটা এগিয়েই এ দিন শুরু করেছিল কার্লসেন। কিন্তু এ রকম সর্বোচ্চ পর্যায়ের ম্যাচে অতীতের পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়ে না। সেটা আনন্দের এ দিনের খেলাতেই পরিষ্কার। বরং এ দিনের গেমের পর সাংবাদিক বৈঠকে তো উল্টো ছবি ধরা পড়ল। আনন্দের চোখেমুখে তৃপ্তি আর আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট ছিল। মুখে যাই বলুক না কেন, কার্লসেনকে তুলনায় নিষ্প্রভই লেগেছে।
এখনও ১১টা গেম বাকি। প্রথম যে সাড়ে ছ’পয়েন্ট পাবে সে-ই চ্যাম্পিয়ন। সেই পথটা কে কতটা মসৃণ করে তুলতে পারে, সেটাই দেখার। তবে যে ভাবে আনন্দ শুরু করেছে, ওর খেলায় আরও অনেক নতুনত্ব দেখার আশায় রইলাম।
|