সচিন তেন্ডুলকরের বিদায়ী সিরিজ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই দেশে খেলাধুলোর আরও একটা মেগা শো কিন্তু শনিবারই নিঃশব্দে শুরু হয়ে যাচ্ছে। চেন্নাইয়ে দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। চৌষট্টি খোপের যে বিশ্বযুদ্ধে আমাদেরই বিশ্বনাথন আনন্দ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এক জন। অবশ্য প্রথম গেমের প্রথম চালের আগেই একটা প্রশ্ন উঠে আসছে। দুই ধুরন্ধর সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের লড়াইয়ে অভিজ্ঞতা, না তারুণ্য, কীসের জয় হবে? পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আনন্দের অভিজ্ঞতা? নাকি বিশ্বের এক নম্বর (রেটিংয়ের দিক থেকে) নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসেনের তারুণ্য?
ভারতে দাবার সর্বোচ্চ লড়াই এই প্রথম। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও আনন্দ আর কার্লসেনের মতো রেটিংয়ে এত ফারাক অথচ দু’জনেই মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী, এ রকম দুই প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারটা আগে খুব বেশি দেখা যায়নি। রেটিংয়ের দিক থেকে কার্লসেনের সঙ্গে আনন্দের ফারাক ৯৫। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এতটা ব্যবধান ইদানীং দেখা যায়নি। যার জন্য কার্লসেন সুবিধেজনক জায়গায় আছে। |
দু’জন বিপরীত চরিত্রের। দু’জনের খেলার স্টাইলও আলাদা। কার্লসেন প্রত্যেকটা গেম, প্রত্যেকটা পজিশন সমান গুরুত্ব দিয়ে খেলতে খেলতে এগোয়। রগড়ে রগড়ে জিততে ভালবাসে। এত কম বয়সে এত ভাল এন্ড গেমের টেকনিক রপ্ত করার পাশাপাশি ‘লং গেম’ খেলার জন্যই কার্লসেনের এত নামডাক। মাত্র বাইশ বছর বয়সের জন্য এনার্জির দিক থেকেও ও কিছুটা এগিয়ে থাকবে আনন্দের থেকে। আনন্দের বয়স প্রায় দ্বিগুণ। তেতাল্লিশ।
আনন্দের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আবার অগাধ অভিজ্ঞতা। এ রকম সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্ট সম্পর্কে গভীর ধারণা। সেই সঙ্গে ওর ওপেনিং অসাধারণ। কার্লসেন যে জায়গায় একটু হলেও পিছিয়ে। আগাগোড়া খুব ঠান্ডা মাথায় খেলে আনন্দ। অনেকে বলতে পারেন, প্রথম গেমে সাদা ঘুঁটি নিয়ে শুরু করায় কার্লসেন এগিয়ে থাকছে। কিন্তু আমার মতে, কালো ঘুঁটি নিয়ে শুরু করাটা আনন্দের জন্য শুভ-ই। এর আগেও দু’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আনন্দ কালো ঘুঁটি নিয়ে ওপেন করে শেষ পর্যন্ত খেতাব জিতেছে। ২০০৮ আর ২০১০-এ। তা ছাড়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ যেহেতু ১২ গেমের, প্রথমেই কেউ অহেতুক ঝুঁকি নিতে চাইবে না। তাই সাদা ঘুঁটি-কালো ঘুঁটি নিয়ে খেলার মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই। সাদা নিয়ে শুরু করলেও কার্লসেন এগিয়ে থাকবে বলে আমার মনে হয় না।
শুনলাম গ্যারি কাসপারভ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এ বার জিতবে কার্লসেন। আনন্দকে বলেছেন ‘ওল্ড ম্যান’। গত বারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ চলার মধ্যেই কাসপারভ বলেছিলেন, আনন্দ জেতার মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেছে। আসলে বিতর্ক ভালবাসেন কিংবদন্তি রুশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তবে উনি যাই বলুন, আমার মতে ফেভারিট আনন্দ। পাহাড়প্রমাণ অভিজ্ঞতাই আনন্দকে এগিয়ে রাখবে। কাগজে-কলমে যতই তাই কার্লসেন ফেভারিট হোক না কেন, শেষ হাসি হাসবে আমাদের আনন্দ-ই।
|
পুরনো খবর: আনন্দের টিমে লেকো |