সামি-র বলে স্যামি আউট।
দুপুর তখন তিনটে বেজে চার মিনিট। আনন্দে আত্মহারা ইডেন।
জামশেদপুর থেকে উড়ে এসে প্রায় একই সময়ে বেহালায় নামলেন ক্যাপ্টেন এ কে মোহন। বিমানে তাঁর সঙ্গী ক্যাপ্টেন সঞ্জীব ঝা। বেহালায় নেমে ম্যাচের স্কোর শুনে তাঁদের মুখে মেঘ ঘনিয়ে এল। ইডেনে সচিনের মাথায় পুষ্পবৃষ্টির স্বপ্ন তা হলে অধরাই থেকে গেল!
মহম্মদ সামির ওই ওভারে ক্যাপ্টেন ড্যারেন স্যামি ছাড়াও আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরও দুই খেলোয়াড় শিলিংফোর্ড ও পেরমল। আর মাঝপথ থেকে বেহালামুখী ১২০ কিলোগ্রাম গোলাপের পাপড়ি গুদামে ফেরত যাওয়ার রাস্তাও পাকা হয়ে গেল। কিন্তু ইডেনের আকাশ থেকে ফুল ফেলার জন্য জামশেদপুর থেকে ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট উড়ে বেহালায় নেমে পড়েছেন অ্যালকেমিস্ট অ্যাভিয়েশনের দুই পাইলট। সঙ্গে চার আসনের সেসনা বিমান।
ঠিক ছিল, শনিবার যখনই খেলা শেষ হোক, তার কিছু আগে বার্তা যাবে বেহালায়। সকাল থেকেই সেখানে ট্রান্স-ভারত সংস্থার মুখ্য পাইলট ক্যাপ্টেন পরাগ দাস জামশেদপুর থেকে আসা দুই পাইলটকে নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন ওড়ার জন্য। সঙ্কেত পেলেই তিনটি ছোট ছোট বিমানে ১২০ কিলোগ্রাম ফুল নিয়ে তাঁরা উড়ে যাবেন ইডেনের দিকে।
কিন্তু কোথায় কী? শুক্রবারের বিকেল না গড়াতেই একের পর এক উইকেট পতন। তিন দিনেই শেষ সচিন তেন্ডুলকরের ১৯৯ তম টেস্ট। তবু শেষ চেষ্টা করেছিলেন সিএবি-র অন্যতম কর্তা বিশ্বরূপ দে। মহম্মদ সামির ওই বিধ্বংসী ওভার (দিনের ৪৯ তম)-এর পরেই বুঝেছিলেন খেলা শেষ হল বলে! কার্ট এয়ারের কর্তা সঞ্জয় আরিয়া তখন ক্লাব হাউসে। তাঁকেই ফোন করেন বিশ্বরূপবাবু। বলেন, “দেখুন না, এখনই যদি বিমান উড়িয়ে এনে পুষ্পবৃষ্টিটা করিয়ে দেওয়া যায়!”
কিন্তু আবেগের সামনে তো নিয়মের কাঁটা। পুষ্পবৃষ্টি নিয়ে সিএবি-র সঙ্গে কার্ট এয়ারের প্রথম যখন চুক্তি হয়েছিল, তখন তো আর তিন দিনে ৩০টা উইকেট পড়ার কথা ভাবা হয়নি! কলকাতায় কার্ট এয়ারের নিজস্ব বিমান নেই। তারা বেহালায় পাইলট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানো ট্রান্স-ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে। ঠিক হয়, টেস্টের শেষ দিন রবিবারই পুষ্পবৃষ্টি করা হবে। তবে সিএবি-র একটা আশঙ্কা ছিলই। তাই দিনক্ষণ বদলে ম্যাচের চতুর্থ দিন, শনিবার পুষ্পবৃষ্টির ব্যবস্থা রাখা হয়।
সেই মতো কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি), লালবাজার এবং ফোর্ট উইলিয়ামকে চিঠি দিয়ে অনুমতিও নিয়ে রাখা হয়েছিল। ঠিক ছিল, শনিবার অথবা রবিবার দুপুর-বিকেলের দিকে বেহালা থেকে আকাশে উড়বে দুই-আসনের তিনটি সেসনা বিমান। কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি-র অনুমতি নিয়ে গঙ্গার পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে উড়ে তারা চলে আসবে ইডেনের দিকে। গঙ্গার ওপরেই আকাশে চক্কর কাটতে থাকবে এটিসি-র সঙ্কেত পাওয়ার জন্য। সঙ্কেত পেলে ইডেনের আকাশে এক হাজার ফুট উপর থেকে ফুল ছড়িয়ে দিয়ে ফিরে যাবে বেহালায়।
কার্ট এয়ারের কর্তা সঞ্জয় আরিয়া তো রেগে লাল, “শনিবার পর্যন্ত খেলাটা টানা যেত না! চার দিনে টেস্ট শেষ হবে এমনটা তো ভেবেইছিলাম। তা বলে তিন দিন! কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। কলকাতায় ইডেনের উপর দিয়ে ছোট বিমান উড়ে যাবে আর সেই প্লেন থেকে লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়বে সচিনের মাথায়, ইডেনের সবুজ গালিচায়। কলকাতা তো এমন দৃশ্য দেখেনি! সামি তো কলকাতারই ছেলে? সে একাই সব শেষ করে দিল!” |