ইডেনের সবুজ গালিচার উপর বসে মাঠকর্মীরা। অপেক্ষায় রয়েছেন কখন আসবে সেই ‘ডাক’। প্রতি বারই তো আসে। ম্যাচ শেষে দল নিয়ে বেরনোর আগে ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন কিছু বকশিশ দিয়ে যান তাঁদের। এ বারও তারই অপেক্ষায় খাকি পোশাকের মাঠকর্মীরা।
বাউন্ডারি লাইনের ওপারে ‘কিউরেটর’ লেখা ছোট্ট ডাগ আউটের মধ্যে বসে তাঁদের ‘বস্’ প্রবীর মুখোপাধ্যায়। বললেন, “ওরা অযথা বসে আছে। আমি জানি, এ বার আর সে ডাক আসবে না।” ভারতীয় ক্রিকেটাররা ইডেনে পা রাখার পর থেকেই যে ভাবে প্রবীরবাবু ও ধোনিদের মধ্যে ‘টম অ্যান্ড জেরি শো’ চলছে, তার পর যে ধোনি খুশি হয়ে ‘টিম প্রবীর’-কে কিছু দিয়ে যাবেন, এই ব্যাপারে মোটেই আশাবাদী ছিলেন না ২৪ বছর ধরে ইডেনের বাইশ গজের অভিভাবকত্ব করে আসা মানুষটি। শেষ পর্যন্ত তা-ই হল। ধোনিদের টিম বাস বেরোনোর সময় জনতার প্রবল উচ্ছ্বাসের শব্দ পাওয়া গেল মাঠের ভিতর থেকে। সঙ্গে হুটারের আওয়াজও। ইডেনের ভিতরে তখন একের পর এক দীর্ঘশ্বাস পড়ছে। এ বার তা হলে কিছুই জুটল না।
ভারতীয় দল যে উইকেট নিয়ে খুশি নয় সকালে ড্রেসিং রুমে রোহিত শর্মার উইকেট নিয়ে চেঁচামেচি করা তারই ইঙ্গিত। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন, “বেশ রেগে ছিল রোহিত। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সতীর্থদের বলছিল, ‘এ যা পিচ, তাতে আজই খেলা শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে’। কী আশ্চর্য দেখুন, হলও তাই।” কিন্তু উইকেটের ভাঙন ও ফাটল নিয়ে যে অভিযোগ এল ভারতীয় ড্রেসিংরুম থেকে, তাকে স্বভাবগত ভঙ্গিতেই উড়িয়ে দিয়ে প্রবীর মুখোপাধ্যায় তাঁর ডাগ আউটে বসে বললেন, “পিচে যদি এত ভাঙনই ধরত, যদি বিশাল বিশাল ফাটল দেখা দিত, তা হলে রোহিত সেঞ্চুরিটা পেল কী করে? আর যদি বলেন পিচ ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল, তা হলে আমাদের সামি এতগুলো উইকেট পেল কী করে? ওয়েস্ট ইন্ডিজের কুড়িটার মধ্যে বারোটা উইকেটই পেল পেসাররা। আসলে সব সময় উইকেটের দোহাই দিলে হয় না, পারফরম্যান্স দেখাতে জানতে হয়।” |
সচিনকে উপহার |
• মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিজের আঁকা ছবি।
• রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শেরওয়ানি, পাগড়ি এবং উত্তরীয়।
• সিএবি-র পক্ষ থেকে টসের জন্য তৈরি বিশেষ কয়েন ও ১৯৯টি পাতা-সহ সোনার জল করা রুপোর বটগাছ। প্রতি পাতায় সচিনের ১৯৯ টেস্টের স্থান ও তারিখ।
• কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে পিতলের দুর্গামূর্তি। |
|
টেস্ট শুরুর আগেই উইকেট দেখতে গিয়ে প্রবীরের তোপের মুখে পড়েছিলেন রোহিত। প্রবীরবাবুই জানাচ্ছেন, ওই ঘটনার পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোনও রকম কথাই হয়নি তাঁর। ব্যতিক্রম সচিন তেন্ডুলকর। সুনীল গাওস্কর, রাহুল দ্রাবিড়ও তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। কিন্তু ধোনি বা তাঁর দলের কেউ নন।
ম্যাচ চলাকালীন সচিনের সঙ্গে কথাও হয়েছিল প্রবীরবাবুর। সচিনকে তিনি বলেন, “ভাগ্যিস আম্পায়ার তোমাকে ভুল আউট দিল। না হলে তো পুরো দোষটা আমার আর আমার উইকেটের ঘাড়ে এসে চাপত।” শুনে হেসে সচিন বলেন, “আরে ছোড়িয়ে না দাদা। জিসকো জো বোলনা হ্যায় বোলনে দিজিয়ে।” শুক্রবার সন্ধ্যায় বাউন্ডারি লাইনের বাইরে বসে নিজেই এই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ইডেনের কিউরেটর।
হতাশার দীর্ঘশ্বাস শুধু যে মাঠেই পড়ল, তা নয়। ইডেনের ক্লাব হাউসেও। সচিনকে গ্র্যান্ড ফেয়ারওয়েল দেওয়ার সুযোগ না পাওয়ার জন্য। গ্যালারিতে মুখোশ বিতরণের পর এ দিন চায়ের বিরতিতে সচিনের জন্য ১৯৯ বেলুন ওড়ানো হল। সৌরভ-সচিন দু’জনে মিলে বেলুন ওড়ালেন। কিন্তু শনিবার খেলা হলে দর্শকরা মাঠে সচিনের সঙ্গে দেখতে পেতেন ব্রায়ান লারা এবং শাহরুখ খানকেও। খেলার গতিপ্রকৃতি দেখে টিভি সম্প্রচার সংস্থা স্টার স্পোর্টস তাদের অতিথি ধারাভাষ্যকার হিসেবে স্টিভ ওয়-কে চতুর্থ দিন নিয়ে আসার পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। একেবারে মুম্বইয়ে আনা হবে তাঁকে। ফলে ইডেনের টিভি বক্সে আর সৌরভ-স্টিভের জুটি বাঁধা হল না। সিএবি-র মান বাঁচালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেল তিনটের একটু পরে ডারেন স্যামি আউট হতেই তাঁকে ইডেনে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। এক ডাকেই যে চলে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাতে অভিভূত সিএবি কর্তারা। কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলছিলেন, “সিএবি সচিনের মতো কিংবদন্তির জন্য কতটা উজাড় করে দিতে পারে, তা আর দেখানো গেল না। তবে দিদি যে এত কম সময়ে সচিনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন, এটাই আমাদের কাছে বিরাট প্রাপ্তি।” কিন্তু বাংলার পেসার মহম্মদ সামির জন্যই তো এই অকাল পরিণতি টেস্টের। সে জন্য অবশ্য মোটেই অখুশি নন কর্তারা। বরং গর্বে বুক ফুলে রয়েছে তাঁদের। যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় তো বলেই দিলেন, “ইডেনে এমন অসাধারণ অভিষেকের জন্য সামিকে আমরা বড় করে সংবর্ধনা দেব। ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নিশ্চয়ই যাবে। ওখান থেকে ফেরার পর সেটা হবে।” প্রাপ্তি অবশ্য আরও আছে। সচিন যে টি শার্ট গায়ে এবং যে গ্লাভস হাতে ইডেনে শেষ টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন, সেগুলি দিয়ে গেলেন সিএবি-র সংগ্রহশালার জন্য।
এ সবের মধ্যেই এক ফোঁটা চোনা। ক্লাব হাউসে সিএবি-র কর্মীর ঘর থেকে মোবাইল চুরি। সিসিটিভি ফুটেজে আবার সেই চুরির ঘটনা ধরাও পড়েছে। তার ক্লিপিং-সহ ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করে সিএবি। |