ইডেন যদি রোহিত শর্মা বনাম প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের ‘রাউন্ড ওয়ান’ দেখে থাকে, তা হলে ‘রাউন্ড টু’ শুরু হল রোহিত শহর ছাড়ার পর।
ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন মুম্বইকর যখন এ দিন কলকাতা ছাড়লেন, সকাল সাড়ে আটটা। টিমমেটদের সঙ্গে নয়। গেলেন আলাদা।
ইডেন কিউরেটরের যখন গোলাগুলি বর্ষণ শুরু হল, বিকেল সাড়ে পাঁচটা। একাকী ইডেনে বসে। মাঠে পা দিলে পুলিশ কর্তাদেরও প্রবল বকুনি খেতে হচ্ছে।
এবং রোহিতের প্রসঙ্গ ওঠামাত্র বিস্ফোরণ।
“কী জানতে চাইছেন? ইডেনের উইকেট নিয়ে রোহিত শর্মা যা বলছে, তার পাল্টা হিসেবে আমি কী বলব তো? শুনে রাখুন, রোহিত শর্মাকে নিয়ে আমি ভাববই না,” রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠলেন প্রবীরবাবু। ইডেনে মহাকাব্যিক ইনিংস খেলার পরেও রোহিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলে যান যে, এই পিচে ব্যাট করা কঠিন ছিল। প্রসঙ্গত, টেস্ট শুরুর আগে রোহিত পিচ দেখতে গেলে প্রবীর তাঁকে সেখান থেকে বার করে দেন। কারণ, তা ছিল নিয়মবিরোধী ব্যাপার। এবং ভারত তিন দিনে টেস্ট শেষ করে দেওয়ার পরেও সিএবি-র কোনও কোনও কর্তাকে রোহিত বলে দেন যে, উইকেট মোটেও ভাল ছিল না। তিন দিনে যে টেস্ট শেষ হবে, সেটা নাকি রোহিত আন্দাজ করেছিলেন। যা নিয়ে শনিবার আবার পাল্টা দিয়ে রাখলেন প্রবীর। |
“আমাকে গাওস্কর পিচ নিয়ে সার্টিফিকেট দিয়েছে। রবি শাস্ত্রী প্রশংসা করে গিয়েছে। সৌরভ প্রশংসা করে বলেছে প্রবীরদা, খুব ভাল টেস্ট উইকেট হয়েছে। সেখানে রোহিতকে নিয়ে ভাবব কেন? আমার মনে হয়, গাওস্কর, সৌরভের পর্যায়ে রোহিত বোধহয় এখনও পৌঁছয়নি। তাই ওর কথাবার্তাকে অত গুরুত্ব দেওয়ার দরকার আছে বলেও আমি মনে করি না,” বলে দিচ্ছেন ইডেন কিউরেটর। তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হল, শুধু রোহিত নন, বাংলার এক প্রখ্যাত অধিনায়কও ম্যাচ চলাকালীন বলে গিয়েছেন, উইকেট আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড। বল প্রথম দিন থেকে প্রবল টার্ন করছে, মাঝে মাঝে নিচু হয়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে ক্ষিপ্ত মেজাজে প্রবীর বলছেন, “ওই ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করে আসুন না আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড উইকেটের মানেটা কী? এই যে উইকেটের উপর শুয়ে ক্যাপ্টেনরা পিচ দেখে। দেখে কতদূর কী বোঝে খুব সন্দেহ আছে। আমার তো মনে হয়, কিছু বোঝে না।”
সিএবি কর্তাদের তরফে বলা হচ্ছে, তিন দিনে টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পিছনে যত না কিউরেটরের ভূমিকা, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব আছে ভারতীয় বোর্ডের। টেস্ট শুরু হওয়ার আগে নাকি বোর্ড মারফত বলা হয়, টার্নার চাই। যে কারণে পাঠানো হয় পূর্বাঞ্চলের চিফ কিউরেটর আশিস ভৌমিককে। আরও বলা হয়, প্রবীর গত বছরের ইংল্যান্ড টেস্ট পর্যন্ত বোর্ডের দাবিদাওয়া কোনও ভাবে মানতে চাননি। কিন্তু এ বার নাকি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন।
ইডেন কিউরেটর যে যুক্তি ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য খুব পরিষ্কার অতীতে প্রবীর মুখোপাধ্যায়কে কেউ আত্মসমর্পণ করাতে পারেনি, আজও পারে না। “কে বলছে এটা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উইকেট? আমি বলছি, এটা প্রবীর মুখার্জির উইকেট! উইকেট নিয়ে এত কথা বলার আগে একটা ব্যাপার বুঝতে হবে। নভেম্বরের গোড়ায় ইডেনে ম্যাচ হয় না। এ বার হল। যা উইকেট হয়েছে, তাতে আমি নিজে তো বলব গর্বিত। তবে হ্যাঁ, উইকেটে কিছুটা ভিজে ভাব ছিল। যে কারণে প্রথম দিন বিকেল থেকে বল অল্প নিচু হয়েছে। আর কিছু নয়,” বলে দিচ্ছেন তিনি। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আর ধোনি আমাকে বলতে এসেছিল গত বছর। বলে দিয়েছিলাম, ও সব অন্যায় আবদার আমার কাছে চলবে না। এ বার কিছু ও বলতে আসেনি। শুধু টেস্টের আগে আমাকে বলা হয়, উইকেটে যাতে রান থাকে সেটা একটু দেখে নিতে। যাতে সচিন রান পায় আর কী।” |
• টেস্ট শেষ ৩ দিনে • রান ৮৫৫ • উইকেট ৩০ • পেসাররা নিলেন ১৩ • স্পিনাররা ১৫ |
|
কিন্তু সচিন তো বিতর্কিত আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় বার সুযোগই পেলেন না আর ব্যাট করার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো রানটাই তুলতে পারল না। মরসুমে একটাও ম্যাচ না খেলা পিচে কী ভাবে টেস্ট হল, সেটা নিয়েও কথা চলছে। “তুলবে কী ভাবে? দু’টো ব্যাটসম্যান নিয়ে আর টেস্ট ক্রিকেট চলে? আর আমি বলেছিলাম, টেস্টের আগে এখানে ম্যাচ করো। বলা হল, বোর্ডের নাকি নিয়মে নেই টেস্টের পনেরো দিন আগে সেই উইকেটে ম্যাচ করার। পরে যদিও রঞ্জিটা দেওয়া হল, কিন্তু বৃষ্টিতে ভণ্ডুল হয়ে গেলে আমি কী করব?,” বলে প্রবীরের হুঙ্কার, “আর শুনুন, রোহিতকে জিজ্ঞেস করবেন, উইকেট যদি এতই খারাপ তা হলে ও নিজে একশো সাতাত্তর করল কী ভাবে? অশ্বিনের মতো একজন বোলার কাম ব্যাটসম্যান কী ভাবে সেঞ্চুরি করে গেল? আর একটা কথা। রোহিত একশো করুক, দু’শো করুক, পাঁচশো করুক, ও যদি আবার কোনও দিন নিয়ম ভেঙে ইডেনের উইকেটের ধারেকাছে ঘেঁষতে যায়, আমি ওকে আবার বার করে দেব!” |