আফসোসটা কিছুতেই যাচ্ছে না ক্রিস্টোফার গেইলের। যদি একটা সেঞ্চুরিও করতে পারতাম...!
শনিবার দুপুরে সল্টলেকের এক রেস্তোরাঁয় লাঞ্চের নেমন্তন্ন রক্ষা করতে যাওয়া ক্যারিবিয়ান তারকার কথায় মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে আসছিল আক্ষেপগুলো “৩৩৩ রান রোজ রোজ হয় না, এটা ঠিক। কিন্তু যদি একটা একশোও করতে পারতাম, তা হলে হয়তো আমাদের দলের এই দুর্দশা হত না।” শুনে মনে হল, টেস্টে জোড়া ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিক ইনিংস হারের লজ্জার জন্য এখনও নিজেকে কোথাও একটা দুষে চলেছেন। ভুবনেশ্বরকে ও রকম হঠকারী চালাতে গিয়ে মিস হিটের যন্ত্রণাটা চব্বিশ ঘণ্টা পরেও দগদগ করছে তাঁর। সম্ভবত যে জন্যই নিজের চেনা ইডেনে ব্যাট হাতে চেনা ঝড় তুলতে না পারার হতাশা গোপন করার চেষ্টাও করলেন না, “আপনারা দেখলেন তো আমরা কী রকম খেললাম? সত্যি বলছি, ম্যাচটা নিয়ে কথা বলতেই বিরক্ত লাগছে।”
ম্যাচ নিয়ে কথা বলায় যতটা বিরক্তি, ঠিক ততটাই উদ্ভাসিত দেখাল সচিন তেন্ডুলকর প্রসঙ্গটা উঠতেই। গেইলের সাফ কথা, সচিনই তাঁর দেখা সেরা ব্যাটসম্যান। “ব্র্যাডম্যানের খেলা আমি দেখিনি। কিন্তু দিনের পর দিন যে প্রত্যাশার চাপ নিয়ে সচিনকে খেলতে দেখেছি, আমার চোখে ওই সেরা।” সচিনের সেরা ইনিংস বেছে নিতে বললে, জবাব দিতে সময় নিলেন না এতটুকু। বললেন, “ওয়ান ডে-তে সচিনের ডাবল সেঞ্চুরিটাই আমার দেখা ওর সেরা ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কী অসাধারণ ব্যাটিংটাই না করেছিল সচিন!” |
ইডেনে রান না পাওয়ার খিদে কি চিংড়ি দিয়ে মেটাচ্ছেন ক্রিস গেইল।
শনিবার শহরের এক রেস্তোরাঁয়। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
|
এক কিংবদন্তির কথায় এসে পড়ল আর এক কিংবদন্তির কথাও। শনিবারই শহরে পা রেখেছেন ব্রায়ান লারা। এবং সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কিংবদন্তিকে দলের এমন বিপর্যয় দেখতে হল বলে গেইল বেশ অস্বস্তিতে। যে কারণে লারার সঙ্গে দেখা হওয়ায় কথা দিয়েছেন, ওয়াংখেড়েতে ঘুরে দাঁড়াবেনই। গেইল বলছিলেন, “ব্রায়ানের সঙ্গে টিম হোটেলে দেখা হল। বললাম পরের টেস্টে ঘুরে দাঁড়াব। খারাপ লাগছে যে ব্রায়ান এত দূর এসে খেলাটাই দেখতে পেল না।”
নেতিয়ে পড়া মেজাজটা অবশ্য ফুরফুরে হল চিংড়ির মালাইকারির প্রথম দর্শনেই! রীতিমতো কব্জি ডুবিয়ে চিংড়ির মালাইকারি, পাতুরি থেকে শেষ পাতে রসগোল্লা, মিষ্টি দইয়ে ইডেনে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আফসোসের তেতো স্বাদটা কিছুটা হয়তো কাটল।
অকপটে জানালেন, বাঙালির ভাত-মাছ-মিষ্টির সঙ্গে প্রেমটা ঠিক কতটা তাঁর। ‘কট অ্যান্ড বোল্ড’ রেস্তোরাঁয় এ দিন প্রথমে চিংড়ির মালাইকারি চাখতে যান কাঁটা চামচ আর ছুরি দিয়ে। তাতে ঠিক সুবিধে করতে পারছিলেন না। অনেকটা উপমহাদেশের পরিবেশে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা যে রকম ‘স্ট্রাগল’ করেন আর কী! পাশ থেকে কেউ একজন হাত লাগানোর পরামর্শ দিতেই স্ব-মূর্তিতে ক্যারিবিয়ান কিং। নিমেষে দুটো প্রমাণ সাইজের চিংড়ি চলে গেল পেটে।
এর রহস্য কী? আসলে শুধু কলকাতা নয়, ওপার বাংলায় টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে গিয়েও বাঙালি খাবার খেয়েছেন এবং বাঙালি রসনার প্রতি প্রেমটা ক্রমশ গভীরতর হয়েছে।
নানা রকম মাছের পদ চেটেপুটে সাফ করার পর এল মিষ্টির পালা। তাতেও সটান ছক্কা হাঁকানোর পর বলে দিলেন, “কলকাতাকে আমার ভীষণ ভাল লাগে। এখানেই তো আইপিএল শুরু করি। বাংলার মিষ্টির জন্যই বোধহয় এখানকার মানুষগুলোও এত মিষ্টি। কেকেআর আমাকে ছেড়ে না দিলেই বোধহয় ভাল হত!” শেষ পাতে এল মিষ্টি দই। বাটি নিঃশেষ করে গেইলের ঘোষণা, “উফ্! এত খেয়ে ফেললাম, মনে হচ্ছে আমার সিক্স প্যাক অ্যাবস গোল্লায় গেল!” |