হিমঘরে কড়া নজরদারির নির্দেশ মন্ত্রীর
শিলিগুড়ি মহকুমায় আলুর অপ্রতুলতা রুখতে হিমঘরগুলিতে ২৪ ঘন্টা কড়া নজরদারি করার নির্দেশ দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শুক্রবার সকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার পুলিশ-প্রশাসন, কৃষি বিপণন দফতরের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী। সেখানেই মন্ত্রী বলেন, “এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম পরিস্থিতি তৈরি করছেন। টাক্স ফোর্সকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। জলপাইগুড়ির ৬৬টি হিমঘরে যে পরিমাণ আলু তা যথেষ্ট। সরকারি সরবরাহ ছাড়াও রোজ হিমঘরগুলি থেকে আলু বার হচ্ছে। তাহলে আলু কোথায় যাচ্ছে। এটা রুখতে হিমঘরগুলিতে ২৪ ঘন্টা নজরদারি, কাগজপত্র পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি, যে কোনও হিমঘরে যে কোনও সময় তিনি গিয়ে আলুর স্টক, কাগজপত্র দেখতে পারেন বলে মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন।

আলু নিয়ে বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুচরো ব্যবসায়ীদের আলুর জোগান দিচ্ছে মালদহ জেলা প্রশাসন। খুচরো ব্যবসায়ীরা যাতে ১৩টাকা দরে আলু বিক্রি করতে পারে, তার জন্য এদিন ১১টাকা দরে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে আলু বিক্রি করেছে জেলা প্রশাসন। তবে যে ব্যবসায়ীরা আলু কিনেছেন, তাঁদের থেকে সরকার নির্ধারিত দরের বেশি দামে আলু বিক্রি না করার মুচলেকাও লিখিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। মালদহের সামসিতে ব্যবসায়ীদের থেকে মুচলেকা নিয়ে শুক্রবারে খুচরো ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি শুরু করেছে প্রশাসন। এদিন সামসি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি চত্ত্বর থেকে প্রশাসন আলু বিক্রি করে। সামসি থেকে ৯ হাজার বস্তা আলু ১১ টাকা কেজি দরে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও ওই দরে আলু কিনে স্থানীয় হাটে-বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচ যোগ করে ১৩ টাকা দরে আলু বিক্রি সম্ভব কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
চাঁচলের মহকুমা শাসক সঞ্জীব দে বলেন, “জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মেনেই খুচরো ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করার কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি কেউ যাতে দাম বেশি নিতে না পারে সেজন্য নজরদারিও চলবে।” মালদহের ইংরেজ বাজার, আট মাইল সহ চাঁচল মহকুমার সামসি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি থেকে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুচরো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি রেশন ডিলাররাও চাইলে ওই আলু কিনে বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে। ব্যবসায়ী পিছু ১০ বস্তা আলু দেওয়া হচ্ছে।
সামসি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সম্পাদক নীহার রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “সরকারি নির্দেশ মেনেই আলু বিক্রি করা হচ্ছে। বেশি দরে আলু বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ব্যবসায়ীদের সর্তক করে দেওয়া হয়েছে।”

সামসিতে ১১টাকা কোজি দরে খুচরো ব্যবসায়ীদের আলু
বিক্রি করল প্রশাসন। ছবিটি তুলেছেন বাপি মজুমদার।
মালদহ জেলার ৬ টি হিমঘরে থেকে আলু সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসন আলু বিক্রি শুরু করেছে। প্রথমদিন ইংরেজবাজার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি থেকে ৪৫০ বস্তা, সামসি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি থেকে ৩৫০ বস্তা ও ৮ মাইল হিমঘর থেকে ৩০০ বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “এক ব্যবসায়ীকে ৫ কুইন্ট্যাল বেশি আলু দেওয়া হয়নি।”
শুক্রবারে থেকে তুফানগঞ্জ,দিনহাটা এবং মাথাভাঙায় ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে প্রশাসন। শনিবার থেকে মেখলিগঞ্জেও নায্য মূল্যে আলু বিক্রি শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “মেখলিগঞ্জে হিমঘর না থাকায় এদিন ওই মহকুমায় আলু বিক্রি শুরু হয়নি। মাথাভাঙা থেকে আলু নিয়ে গিয়ে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।”
পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অসমে আলু পাচার বন্ধে নজর রাখা হচ্ছে। এদিনও বক্সিরহাট ও তুফানগঞ্জ এলাকা থেকে একাধিক আলুর ট্রাক ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
এদিন শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাহাড়ের বন্ধের সময় খাদ্য সরবরাহ দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে রেশনের দোকান থেকেই আলু বিক্রি করার কথা জানায়। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই দার্জিলিং জেলায় ১৪৬টি রেশন দোকান থেকে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, “শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় ১-২ কেজি করে আলু বিলি হচ্ছিল। পরিমাণ এদিন থেকে দ্বিগুণ করে ৪ কেজি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা জলপাইগুড়ি জেলা থেকে আলু আনছি। খড়িবাড়ির হিমঘরের সমস্ত আলু নিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন শিলিগুড়ির জন্য ৫০ মেট্রিক টন আলু প্রয়োজন। আর নতুন আলু বাজারে ওঠা শুরু করেছে এতে ধীরে ধীরে কয়েকদিন মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

সমবায়ের মাধ্যমে আলু বিক্রি হচ্ছে কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জলপাইগুড়ির হিমঘরে ৬৬ হাজার মেট্রিক টন এবং কোচবিহার জেলার হিমঘরগুলিতে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আলু রয়েছে বলে মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। আর সরকারি নির্দেশ অনুসারে বীজের আলু রেখে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হিমঘর থেকে সমস্ত আলু বার করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, “যে পরিমাণ আলু উত্তরবঙ্গে রয়েছে তাতে কোনও আকাল হওয়ার কথা নয়। ইতিমধ্যে শিলিগুড়িতে ৩ জন অসাধু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কোচবিহার জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারপার্সন কল্যাণী পোদ্দার বলেন, “মিড ডে মিলের খাবারে কী দেওয়া হচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হচ্ছে কিনা সেসব খতিয়ে দেখতে বুধবার ৮ টি স্কুলে গিয়েছিলাম। অন্য সব প্রায় ঠিক থাকলেও দাম বেড়ে যাওয়ায় সব স্কুলেই আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক আলু দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। বিকল্প হিসাবে সিম, বিন্স, মুলোর জোগান বেশি।”
জেলার বিভিন্ন হাইস্কুলেও প্রায় এক ছবি। নাটাবাড়ি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত সেন বলেন, “স্কুলে ১২০০ জন ছাত্রছাত্রী মিড ডে মিলের আওতায়। দাম দ্বিগুণ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে পরিমাণ কমিয়ে দিতে হচ্ছে।” জেলাশাসক জানিয়েছেন, প্রাথমিক স্কুলগুলিকে মিড ডি মিলের জন্য ১৩ টাকা কেজি দরে আলু সরবরাহ করা যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.