শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিলিগুড়ির বিভিন্ন রেশন দোকান থেকে সরকার নির্ধারিত দরে আলু বিক্রি শুরু করতে সমর্থ হল জেলা প্রশাসন। তবে রেশন কার্ড লাগবে না কি উৎসাহী সকলেই রেশন দোকান থেকে ওই আলু কিনতে পারবেন তা নিয়ে ধন্দ দেখা দেয়। অধিকাংশ রেশন দোকানগুলি কার্ড ছাড়া আলু দেয়নি। তাতে অনেককে ফিরে যেতেও হয়েছে। যদিও প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে কার্ডের কোনও ব্যাপার নেই। বাসিন্দারা পরিবার পিছু ১ কেজি করে আলু পাবেন। দোকান মালিকদের একাংশের দাবি, কার্ড ছাড়া দিলে সেই হিসাব রাখা যাবে না। তাই তাঁরা কার্ড দেখে দিচ্ছেন। তবে প্রশাসন যেমন বলবে তারা সেই মতোই কাজ করবেন।
জেলাশাসক পুনীত যাদব বলেন, “সাধারণত আলু রেশনে সরবরাহের জিনিস নয়। পরিস্থিতির জন্য ওই ব্যবস্থা করা হয়েছে। রেশন কার্ড ছাড়াই বাসিন্দারা ওই আলু কিনতে পারবেন। কেবল মাত্র বিক্রির জায়গা হিসাবে রেশন দোকানগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্র।” বাজারে ১৩ টাকা কেজির আলু উধাও হওয়া এবং রেশন দোকানের মাধ্যমে তা সরবরাহের ব্যবস্থা করা, পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করতে জেলা প্রশাসনকে নিয়ে আজ, শুক্রবার বৈঠক ডেকেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “আলু সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার দফতরে বৈঠক ডাকা হয়েছে। জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিঙের জেলাশাসক, খাদ্য সরবরাহ দফতর, দুর্নীতি দমন শাখা, নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি, ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা থাকবেন। সেখানে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।” প্রয়োজনে মন্ত্রী নিজেও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। |
শিলিগুড়িতে রেশন দোকান থেকে আলু নিতে বাসিন্দাদের ভিড়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
এ দিন সকালে বিভিন্ন রেশন দোকানগুলি থেকে বাসিন্দারা আলু কিনেছেন। শিলিগুড়ি কলেজের সামনে গোপাল সরকারের রেশন দোকান থেকে আলু কিনতে গিয়েছিলেন বাবুল দত্ত। তবে তাঁর কাছে রেশন কার্ড ছিল না। সেই কারণে রেশন দোকান থেকে তাঁকে ফিরে যেতে হয়েছে। সুব্রত ঘোষ রায়, শ্যামল প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়রা অবশ্য রেশন কার্ড দেখিয়ে ১ কেজি করে আলু কিনেছেন। ১৩ টাকা কেজি দরে রেশন দোকান থেকে আলু কিনে খুশি শ্যামলবাবু বলেন, “প্রশাসনের এই ব্যবস্থায় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। আলু নিয়ে কালোবাজারি বন্ধ হবে।” গোপালবাবুর দোকান থেকে এ দিন সকালে ৫৫ জন আলু কিনেছেন। রাজা রামমোহন রায় রোডের রেশন দোকান থেকে আলু কেনেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ওই রেশন দোকানের মালিক প্রশান্ত ঘোষ জানান, রেশন কার্ড দেখেই তিনি এ দিন আলু বিক্রি করেছেন।
বিধান মার্কেট, ক্ষুদিরামপল্লি-সহ শহরের বিভিন্ন বাজারে অবশ্য যথারীতি ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, নিয়ন্ত্রিত বাজারের কমিশন এজেন্ট বিশ্বজিৎ সাহা এ দিন ২০০ বস্তা আলু ১১ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। যে সমস্ত খুচরো ব্যবসায়ী তা কিনছেন তাঁদের ১৩ টাকা দরেই বিক্রি করতে হবে। পাইকারি বাজারে ওই দরে আলু কেনাবেচা শুরু হলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। মহকুমা প্রশাসনের তরফে এ দিন, আরও ৪১০ বস্তা (৫০ কেজি) আলু আনা হয়েছে রেশন দোকানগুলির মাধ্যমে বিক্রির জন্য। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শুভাশিস ঘোষ জানান, শিলিগুড়ি মহকুমায় প্রতিদিন গড়ে ৪০০ বস্তা আলু প্রয়োজন হয়। জেলাশাসকের নির্দেশে সেই মতো আলু সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ দিন খড়িবাড়ির হিমঘর থেকে ৩৫০ বস্তা আলু কেনা হয়েছে। ময়নাগুড়ি থেকে আনা হয়েছে ৬০ বস্তা। রাতের মধ্যেই সেগুলি রেশন দোকানগুলিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে খাদ্য সরবরাহ দফতর। |