জলপাইগুড়ির সিপিএম সাংসদ কেন পঞ্চায়েত ভোট দিতে পারেননি, রাজ্য পুলিশের কাছে তা জানতে চেয়েছেন লোকসভার স্পিকার। তিনি ভোট দিতে গেলে তৃণমূলের সমর্থকরা বাধা দিলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায়, গত পঞ্চায়েত ভোটে রাজগঞ্জের চাউলহাটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি বলে লোকসভার স্পিকারের কাছে অভিযোগ করেছিলেন সাংসদ মহেন্দ্র রায়। গত ২৫ জুলাই উত্তরবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট গ্রহণের পরে গত ৫ অগস্ট থেকে শুরু হওয়া লোকসভার বাদল অধিবেশনে সিপিএম সাংসদ স্পিকারকে লিখিত ভাবে ওই অভিযোগ করেন। সাংসদের অভিযোগ ছিল, তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা ভোট কেন্দ্রের দিকে এগোতেই এলাকার তৃণমূল সমর্থকরা তাঁদের বাধা দেন। প্ররোচনা দেওয়ার মিথ্যে অভিযোগ করে তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের ভোট দিতে দেবে না বলে দাবি করতে থাকে, সে সময়ে জেলার শীর্ষ পুলিশ অফিসার ও পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন ছিল বলে মহেন্দ্রবাবুর দাবি। লোকসভায় অভিযোগের পরেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন লোকসভার স্পিকার।
জলপাইগুড়ির সাংসদ মহেন্দ্রবাবু বলেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটের দিন সকাল থেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়ে সাধারণ বাসিন্দাদের ভয় দেখাতে থাকলে, টেলিফোন করে একাধিকবার পুলিশের সাহায্য চাই। দুপুরে আমি যখন ভোট দিতে যাই তখন রাস্তা থেকেই নানা কটূক্তি, হুমকি দেওয়া হয়। সে সব উপেক্ষা করে আমি এবং সঙ্গে থাকা এলাকার অনান্য বাসিন্দারা ভোট কেন্দ্রের সামনে পৌঁছে যাই। তারপরে লাঠি, বাশ নিয়ে আমাদের পথ আটকে দেওয়া হয়, ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। ঘটনার সময়ে চারপাশে পুলিশের পদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে প্রচুর বাহিনী থাকলেও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি।” ঘটনার সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও তাঁদের ব্যবহার করা হয়নি বলে লোকসভায় নালিশ জানিয়েছেন সাংসদ। যদিও পুলিশ-প্রশাসন এ প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বলতে চায়নি। জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি কোনও মন্তব্য করেননি। উত্তরবঙ্গের আইজি শশীকান্ত পূজারী বলেন, “মাননীয় স্পিকারকে করা কোনও অভিযোগ বা স্পিকারের নির্দেশ নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না।”
গত ২৫ জুলাই ভোটের দিন সকাল থেকেই সাংসদের বুথ চাউলহাটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে উত্তেজনা তৈরি হয়। পুলিশ জানিয়েছে, সিপিএম সাংসদ মহেন্দ্রবাবু ভোট কেন্দ্র লাগোয়া এলাকাতেই বসে ছিলেন। দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভোট কেন্দ্রের সামনে বসে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূল সমর্থকরা। রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় অবশ্য সাংসদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়ানো এবং হুমকির অভিযোগ তুলেছেন। খগেশ্বরবাবুর অভিযোগ, “সকাল থেকে সাংসদ বুথে বসেছিলেন। হঠাৎ সিপিএম সাংসদ গুজব রটান, তাঁদের ৭ জন কর্মী খুন হয়েছেন তাতে উত্তেজনা ছড়ায়। একটি টিভি চ্যানেলে সাংসদের বক্তব্য প্রচারিত হয়। এর পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন সাধারণ বাসিন্দারাই সাংসদকে ক্ষোভ দেখিয়েছেন। আর যতদূর জানি, পুলিশ সাংসদকে ভোট দিতে বলার অনুরোধ করলেও তিনিই নাকি রাজি হননি।” যদিও মহেন্দ্রবাবুর দাবি, তিনি কেউ খুন হওয়ার কথা বলেননি। তবে এলাকায় সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে বলে টিভি চ্যানেলে বিবৃতি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। জেলা তৃণমূল সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “ভোটের দিন পুলিশ-প্রশাসন এবং নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা সব অভিযোগের তদন্ত করেই পদক্ষেপ করেছেন। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে সাংসদ মিথ্যে অভিযোগ করছেন। জনভিত্তি দুর্বল হলেই এ ধরনের অভিযোগ করা সম্ভব।” |