আর্থিক সংস্থার সম্পত্তি বেচেই টাকা ফেরত
কোনও আর্থিক সংস্থা আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না-পারলে যে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সম্পত্তি বেচেই সেই টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশ সেই দিশা দেখিয়ে দিয়েছে।
টাওয়ার ইনফোটেক নামে একটি আর্থিক সংস্থার আমানতকারীদের টাকা ফেরত নিয়ে মামলা হয়েছে হাইকোর্টে। সেই মামলায় উচ্চ আদালত এ দিন নির্দেশ দিয়েছে, টাওয়ার ইনফোটেকের সম্পদ বিক্রি করেই আমানতকারীদের টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। এবং টাকা ফেরতের কাজটা হবে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানেই। রাজ্য সরকারকেও এই পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
সাম্প্রতিক কালের সব থেকে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটেছে সারদা সংস্থায়। সেই তছরুপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তোলপাড় চলছে। শেষ পর্যন্ত কমিশন গড়ে পুজোর আগে কিছু আমানতকারীর টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। কালীপুজোতেও কিছু আমানতকারীকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রাপকের তালিকা তৈরি না-হওয়ায় সেই কাজ আটকে আছে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি তহবিলের টাকা তো জনগণের টাকা। সেই তহবিল থেকে সারদার আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে কেন? বিরোধীদের বক্তব্য, জনগণের করের টাকা এ ভাবে খরচ না-করে সারদার সম্পত্তি বিক্রি করেই আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। এ দিন সারদা সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলায় চার্জ গঠন করা হয়েছে নিম্ন আদালতে। কিন্তু ওই সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা বা তা বেচে টাকা ফেরতের বন্দোবস্ত এখনও হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে এবং অন্যান্য রাজ্যে সারদার কত সম্পত্তি আছে, তার সামগ্রিক হিসেবও করে ওঠা যায়নি।
কী ভাবে সারদা সংস্থার আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া উচিত, তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এ দিন টাওয়ার ইনফোটেক সংস্থার সম্পদ বেচে টাকা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সেবি আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, টাওয়ার ইনফোটেককে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা তোলা বন্ধ করতে হবে এবং যাঁরা ইতিমধ্যে ওই সংস্থায় টাকা রেখেছেন, তা ফেরত দিতে হবে। সেবি-র সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ওই সংস্থাই হাইকোর্টে মামলা করে।
বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার টাওয়ার ইনফোটেককে নির্দেশ দেন, তাদের কোথায় কত সম্পত্তি আছে এবং আমানতকারীর সংখ্যা ও জমা টাকার পরিমাণ কত, দু’সপ্তাহের মধ্যে তা জানাতে হবে। এ দিন টাওয়ার গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, তাদের সম্পত্তির পরিমাণ ২৮০ কোটি টাকা। আর আমানতকারীদের জমা রাখা টাকার পরিমাণ ১৭০ কোটি টাকা।
টাওয়ার ইনফোটেক আপাতত তাদের কোনও সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবে না বলে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। হাইকোর্ট এ দিন সরকারকেও এই মামলায় যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। উচ্চ আদালত চায়, ওই আর্থিক সংস্থার সম্পত্তি বিক্রির সঙ্গে রাজ্য সরকারও যুক্ত থাকুক। হাইকোর্ট এই মামলায় আদালত-বান্ধব হিসেবে আইনজীবী এসএন মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করেছে।
টাওয়ার ইনফোটেকের মামলায় হাইকোর্টের এই নির্দেশের পাশাপাশি এ দিনই বিধাননগর এসিজেএম আদালতে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং ওই সংস্থার ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও মনোজ নাগেলের বিরুদ্ধে একটি মামলায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। ২৩ এপ্রিল সুদীপ্ত ও দেবযানী কাশ্মীরে ধরা পড়ার প্রায় সাত মাস পরে এই প্রথম সারদা কাণ্ডের কোনও মামলায় চার্জ গঠন করা হল। সারদা গোষ্ঠীর অধীন দু’টি সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা বেতন না-পেয়ে মামলা করেছিলেন। চার্জশিটে সারদা-প্রধান সুদীপ্ত-সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ, চক্রান্ত করার মতো এক গুচ্ছ অভিযোগ আনা হয়েছে। সারদার কর্ণধারের বিরুদ্ধে যে-সব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে আইনজীবীরা জানান। তবে দেবযানীর ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগ করা হয়নি। ৬ ডিসেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ শুরু হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.