ভিন্ রাজ্যের উপরে নির্ভরতা কমাতে এ বার বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দিয়েছিল রাজ্যের উদ্যানপালন দফতর। রাজ্যের তিনটি জেলায় মোটামুটি চাষ হলেও মাত্রাছাড়া বর্ষাই পেঁয়াজ চাষে জল ঢেলে দিয়েছে। তাই শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করেই আপাতত ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে রাজ্য।
সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া রাজ্যের প্রয়োজনীয় পেঁয়াজের সিংহ ভাগই আমদানি করা হত এত দিন। মূলত মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকেই পেঁয়াজ আসে। কিন্তু এ বার টানা বৃষ্টি সেখানকার পেঁয়াজ চাষেও প্রভাব ফেলেছে। ফলন কম হয়েছে। তার জেরে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশেই পেঁয়াজের জোগান কমেছে। দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
গত বছর থেকেই রাজ্যের উদ্যানপালন দফতর বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে রাজ্যের চাষিদের উৎসাহ দিতে শুরু করেছিল। গত বার হুগলি ও বাঁকুড়ায় বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু চাষ হয়। এ বার রীতিমত পরিকল্পনা করে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে চাষ শুরু করা হয়েছিল। হুগলি, বাঁকুড়া, বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা ও বর্ধমান এই আট জেলার মোট ৮০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। দফতরের তরফে চাষিদের উন্নত বীজ এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ২৪০০০ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বাদ সাধে মাত্রাছাড়া বৃষ্টি। হুগলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। শুধু বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় তুলনায় ভাল চাষ হয়েছে। হুগলির তারকেশ্বরে মাদপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান এক বিঘে জমিতে বর্ষার পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। তাঁর কথায়,“অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পেঁয়াজ অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।” উদ্যানপালন দফতরের তথ্য অনুয়ায়ী, সাকুল্যে ৯,৬০০ টন পেঁয়াজ পাওয়া গিয়েছে। নাসিকের ন্যাশনাল হর্টিকালচার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ওই পেঁয়াজের বীজ সরবরাহ করেছিল। জেলার উদ্যানপালন আধিকারিকেরা বৈঠকে জানিয়েছেন, ওই বীজ সে ভাবে কাজ করেনি। বীজে কোনও সমস্যা ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
সেই সঙ্গেই, এই শীতে নাসিক থেকে আনা ‘এগ্রিফাউন্ড লাইট রেড’ পেঁয়াজের চাষ চাইছে রাজ্য। রাজ্যের সব জেলা মিলিয়ে মোট ১৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষের জন্য চাষিদের বিনামূল্যে পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করা হবে। সম্প্রতি ১৭টি জেলার উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা একটি বৈঠক করেন। তাঁর কথায়, “আমরা চাই, রাজ্যের চাষিরা অর্থকরী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষ করুন। শুধু চাষের এলাকা বাড়ানো নয়, পেঁয়াজ চাষির সংখ্যা বাড়ানোও আমাদের লক্ষ্য।” |