বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে নষ্ট হতে বসা শিল্পকর্ম পরিদর্শন করলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের (এএসআই) পাঁচ সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ দল। শুক্রবার সকালে কলাভবনে এ নিয়ে এএসআই-এর বিশেষজ্ঞেরা একটি বৈঠকও করেন। তাতে উপস্থিত ছিলেন কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানা, ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান সুতনু চট্টোপাধ্যায় এবং অন্য শিক্ষকেরা।
এ দিন শিশিরবাবু বলেন, “এএসআই-এর বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে সবিস্তারে আলোচনা হয়েছে। শিল্পকর্মগুলির প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণ নিয়ে তাঁরা আমাদের পরামর্শ দেবেন। এএসআই-এর কাছ থেকে এ নিয়ে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।” বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বভারতীর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওই শিল্পকর্মগুলি কার্যত নষ্ট হতে বসেছে। সম্প্রতি উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের নির্দেশে নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট শিল্পীদের হাতে তৈরি ওই শিল্পকর্মগুলি সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে বিশ্বভারতী। ইতিমধ্যেই সুতনুবাবু এবং ভাস্কর্য বিভাগেরই দুই শিক্ষক অমিত ধাড়া ও মতিলাল কালাই প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ সেরেছেন রামকিঙ্করের তত্ত্বাবধানে শিল্পী সুরেন দে নির্মিত ‘ভিস্তিওয়ালা’ নামে পরিচিত ভাস্কর্যটি। |
শিল্পকর্ম পরিদর্শন করছেন বিশেষজ্ঞ দল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ এএসআই-এর কলকাতা বিভাগের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অশোক পটেলের নেতৃত্বে এএসআই-এর ওই বিশেষজ্ঞ দল শান্তিনিকেতনে পৌঁছে যান। পরে তাঁরা কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানা, ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান সুতনু চট্টোপাধ্যায়, ওই বিভাগেরই দুই শিক্ষক অমিত ধাড়া ও মতিলাল কালাইকে সঙ্গে কলাভবন ও সঙ্গীতভবন চত্বর ঘুরে দেখেন। দলে সিভিল ইঞ্জিনিয়র ছাড়াও শিল্পকর্ম সংরক্ষণের বিশেষজ্ঞ রসায়নবিদও ছিলেন। সংরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য প্রাথমিক ভাবে শিল্পকর্মগুলির মাথায় ছাউনি বানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে। শিল্পকর্ম ঘুরে দেখার পরে অশোকবাবুরা কলাভবনের নন্দনে বিশ্বভারতীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরে অশোক পটেল বলেন, “বিশ্বভারতীর ওই শিল্পকর্মগুলি আমরা খতিয়ে দেখেছি। সেগুলির সংরক্ষণ নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। কলকাতায় ফিরে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আর এক দফা আলোচনা করব। তারপরেই এ নিয়ে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”
এ দিকে বিশ্বভারতীর ভাস্কর্য বিভাগ বিশিষ্ট শিল্পীদের তৈরি ওই শিল্পকর্মগুলির সংরক্ষণ নিয়ে উপাচার্যকে কয়েকটি প্রস্তাব দিতে চলেছে। সুতনুবাবু বলেন, “যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণের পরে একটি খোলা জায়গায় মিউজিয়াম গড়ে মূল শিল্পকর্মগুলিকে রাখা হোক। আর একটি করে ব্রোঞ্জ প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) থাক প্রত্যেকটির আগের জায়গায়। আমরা শীঘ্রই উপাচার্যকে এই প্রস্তাব পাঠাবো।” এর ফলে রবীন্দ্র ভাবাদর্শকে আঘাত না করেই ওই সব মূল্যবান শিল্পকর্মগুলিকে ক্ষয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যাবে বলেই তাঁরা মনে করছেন।
|