এক অভিযুক্তের গ্রেফতারিকে ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গেল কাঁকরতলা থানার বড়রা গ্রামে।
শুক্রবার সকালের ওই ঘটনায় অভিযুক্তকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে আসার পথে মারমুখী হয়ে ওঠে বাসিন্দাদের একাংশ। অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিতে তারা পুলিশকে তাড়াও করে। কোনও ক্রমে ধৃত যুবককে নিয়ে পুলিশের গাড়িটি ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও উত্তেজিত জনতার সামনে পড়ে যায় গ্রামের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশেরই অন্য একটি ভ্যান। বাবুইজোড়-পাঁচড়া রাজ্য সড়কে, কাঁকরতলার কৈথি মোড়ে থাকা ওই গাড়িটি তখন গ্রামের দিকেই মুখ করে ছিল। ঘোর বিপদে গাড়ি ঘোরাতে না পেরে ব্যাক গিয়ারে পিছোতে শুরু করেন গাড়ি চালক। আর সেই পিছোতে থাকা পুলিশ ভ্যানের ধাক্কাতেই মৃত্যু হল এক সাইকেল আরোহীর। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম লতিফ শেখ (৬৫)। বাড়ি কাঁকরতলা গ্রামে। ইসিএলের ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বড়রা থেকে বাজার সেরে বাড়ি ফিরছিলেন।
এ দিকে ঘটনার পরেই ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশ ভ্যানের উপর চড়াও হয়। দীর্ঘ ক্ষণ অবরোধ করে রাখা হয় স্থানীয় বড়রা মোড়। যার জেরে বাবুইজোড়-আসানসোল ও বাবুইজোড়-সিউড়ি দু’টি রুটেরই বাস বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষতিপূরণের দাবিতে ঘেরাও করা হয় কাঁকরতলা থানাও। বহু আলোচনার শেষে প্রায় চার ঘণ্টা পরে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “একটি ঘটনা ঘটেছে। মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারটি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।” |
ভাঙচুরের পরে। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে কাঁকরতলা থানার পুলিশ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় অভিযুক্ত আক্রম শেখকে গ্রেফতার করতে ওই গ্রামে ঢুকেছিল। তাকে গ্রেফতারির সময় ঘটনাস্থলে বহু গ্রামবাসী জড়ো হতে শুরু করেন। তাদের একটা বড় অংশই আক্রমকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তবে এ দিনের ঘটনা ওই এলাকায় নতুন কিছু নয়। এর আগেও ওই থানায় এলাকায় অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে একাধিকবার আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কয়লার চোরাচালানকে কেন্দ্র করে খুন এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা খয়রাশোল ব্লকে লেগেই আছে। গত জানুয়ারি মাসেই কাঁকরতলার সাহাপুর গ্রামে বেআইনি কয়লা পাচার ঠেকাতে অভিযান করতে এসে বহু পুলিশ কর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই দিন খয়রাশোল, কাঁকরতলা থানার ওসি এবং দুবরাজপুরের সিআইয়ের নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ জন পুলিশ কর্মী অভিযানে গিয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামে ঢুকতে না ঢুকতেই তাঁদের উপরে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। ইটের ঘায়ে জখম হন কয়েক জন পুলিশ কর্মী। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের একটি ভ্যানও। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পিছু হঠতে বাধ্য হয় পুলিশ।
কেন ওই এলাকায় বারবার পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছে?
এ নিয়ে পুলিশ সুপার কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশেরই এক কর্তা জানান, বর্ধমান ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা অবৈধ কয়লার রমরমা কারবার চলে খয়রাশোলে। কাঁকরতলার বিভিন্ন গ্রামে ওই কারবার রীতিমতো ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় বড়জোড়-কৃষ্ণপুরে বেসরকারি খোলামুখ কয়লাখনি থেকে উত্তোলিত কয়লার দখলদারি নিয়ে এলাকারই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে নিত্য লড়াই। তার উপর রয়েছে বেআইনি অস্ত্র মজুদেরও প্রতিযোগিতা। তাঁর দাবি, “কয়লার দখলের উপরেই এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ভাবে শক্তিশালী হওয়া নির্ভর করে। ফলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর এখানে সংঘর্ষ লেগেই থাকে।” গত এক বছরে খয়রাশোলে যত জন খুন হয়েছেন, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে নেপথ্যে রয়েছে কয়লা কারবার। এলাকাবাসীর আবার দাবি, সবটাই চলে পুলিশেরই একটি অংশের প্রচ্ছন্ন মদতে। ফলে নানা সময়ে ছাড় পেয়ে শক্তিশালী হয়ে যাওয়া সমাজবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় খোদ পুলিশকেই। এ দিনের ঘটনাও সেই অর্থে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই মনে করছেন এলাকার মানুষ। পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। |