ফের লাগাতার হরতালের পথই বেছে নিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ইতিমধ্যেই পর পর দু’সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা করে দু’টি হরতাল করেছে তারা। এ বার রবিবার থেকে তা বেড়ে ৭২ ঘণ্টা। হরতালের নামে বেপরোয়া ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে সরকারও এ বার কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রী মওদুদ আহমেদ-সহ বিএনপি-র সর্বোচ্চ নেতৃত্ব স্থায়ী কমিটির তিন নেতাকে রাতেই আটক করেছে পুলিশ। বেগতিক বুঝে বিএনপি-র অনেক নেতাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াকে আলোচনায় ডাকার পরে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির যে আশা দেখা গিয়েছিল, সরকার ও বিরোধী পক্ষের কড়া অবস্থানে তা এক রকম ভেস্তেই যেতে বসেছে।
বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী জামাতে ইসলামির ডাকা আগের দু’দফার হরতালে অন্তত ২৭ জন মারা গিয়েছেন। আহত প্রায় ৭০০। কিন্তু দু’বারই হরতালের আগের দিন থেকে দেশজুড়ে বেপরোয়া নাশকতা চালিয়েছে বিএনপি-জামাত কর্মীরা। সংবাদপত্র দফতর ও বিচারকদের বাড়ির সামনেও বোমাবাজি হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। মানুষ আতঙ্কে বাড়ির বাইরে বার হয়নি। প্রধানমন্ত্রী কালই জনসভায় জানান, ফের হরতাল ডাকা হলে সরকার কড়া হাতে তার মোকাবিলা করবে।
এ দিন স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরে বিএনপি নেতৃত্ব রবিবার থেকে ফের ৭২ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচিই ঘোষণা করেন। তার পরেই পুলিশ বিএনপি-র অফিস ঘিরে ফেলে। বিপদ বুঝে অনেক নেতাই দফতর ছেড়ে চলে যান। প্রাক্তন মন্ত্রী মওদুদ আহমেদ, এম কে আনোয়ার ও রফিকুল ইসলাম মিয়াকে সাদা পোশাকের পুলিশ একটি পাঁচতারা হোটেলের চত্বর থেকে আটক করে। তাঁরা একটি সংবাদপত্রের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন।
জানুয়ারিতে এই সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সরকারের এক শীর্ষ সূত্রের মতে, আলোচনা এড়িয়ে তত দিন পর্যন্ত দফায় দফায় হরতাল চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্ব। তাঁর দাবি সরকার ও দেশকে অচল করার অন্যতম লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করে দেওয়া। এর পরেই সরকার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক, কড়া হাতে হরতালকারীদের দমন করা এবং দুই, বিভিন্ন দলের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করা। তার প্রস্তুতি হিসেবে এ দিন ৩ মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর দফতরে তাঁদের পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। আগামী কয়েক দিনে আরও কয়েক জন মন্ত্রী ইস্তফা দিতে চলেছেন।
|