সুপার টাইফুনে টলমল ফিলিপিন্স
বহবিদদের সতর্কবার্তাকে সত্যি করে শুক্রবার ভোরেই ফিলিপিন্সে আছড়ে পড়ল সুপার টাইফুন হাইয়ান। শক্তির নিরিখে যা শীর্ষ স্থানে (ক্যাটিগরি-৫)। ঝড়ো হাওয়া, মুষল ধারে বৃষ্টি, সেই সঙ্গে ভূমিধস এই ত্রিফলা আক্রমণে রীতিমতো জেরবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। এখনও পর্যন্ত সেখানে চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ঝড়ের দাপটে বিদ্যুৎহীন বহু শহর। কোথাও রাস্তায় উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ, কোথাও আবার উড়ে গিয়েছে ঘরের চালা।
গত কাল আবহবিদরা সতর্ক করেছিলেন, আছড়ে পড়তে চলেছে ভয়ঙ্কর এক ঘূর্ণিঝড়। প্রতি বছরই গড়ে কুড়িটা ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী থাকে ফিলিপিন্স। কিন্তু এমন ঝড় আগে দেখেননি বাসিন্দারা। সকাল থেকেই হাওয়া বইছিল ঘণ্টায় ৩১৫ কিলোমিটার বেগে। ঝড়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে ছোটখাটো সব ঘরবাড়ি। দক্ষিণ লেইতের গভর্নর রোজার মের্কাডো জানিয়েছেন, “চোখ খুলেই দেখি কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছে চারদিক। পাল্লা দিয়ে চলছে ভারী বৃষ্টি। সকালেই যেন ঘনিয়ে এসেছে রাতের আঁধার।”
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে লেগাসপি শহরে জলোচ্ছ্বাস। শুক্রবার এএফপির ছবি।
হাইয়ানে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকা সমরের। রাজধানী ম্যানিলা থেকে ছ’শো কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে এই অঞ্চল। ধসে বিধ্বস্ত সমরে কাজ করছে না টেলিফোন লাইন। ফলে ক্ষয়ক্ষতির ছবিটা ঠিক কী, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। একই অবস্থা বোহলেরও। গত মাসে এই বোহলেই ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন দু’শোরও বেশি মানুষ। একটা বিপর্যয় কাটতে না কাটতেই ফের বিপত্তি সেখানে। তবে এই বার সতর্কবার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। সব মিলিয়ে মোট সাত লক্ষ কুড়ি হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া জেসা আলজিবার কথায়, “ঝড় শুরু হওয়ার পরই দেখলাম বাড়ির পাশের কলা বনটা আর আস্ত নেই।” লেইতে শহরের রাস্তায় জমে গিয়েছে হাঁটু জল। ধ্বংসস্তূপের টুকরো, বাড়ির টিনের চাল ভাসছে সেই জলে। রেড ক্রসের এক অফিসার জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকাতেই উদ্ধারকারী দল তাঁরা মজুত করে রেখেছেন। কিন্তু ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোঝা যাচ্ছে না। তার উপর গাছ পড়ে বন্ধ রাস্তাঘাট। যে চার জন মারা গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে দু’জেনর মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। গাছ পড়ে মারা যান এক জন। অন্য জনের মৃত্যু হয়েছে বাজ পড়ে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সারা দেশের অবস্থা এখনই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তবে সকলেরই আশঙ্কা, ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বহু গুণ। আবহবিদ জেফ মাস্টার্স জানিয়েছেন, হাইয়ান যে দাপট দেখাল তাতে ভয়ানক দুর্যোগেরই আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা ছাড়া এখনও দুর্বল হয়নি এই ঘূর্ণিঝড় হাইয়ান। ফিলিপিন্সে কোনও বড় পাহাড়ও নেই যাতে ধাক্কা খেয়ে শ্লথ হতে পারে এর গতি। আবহবিদেরা জানান, আজ দিনভর ফিলিপিন্সে তাণ্ডব চালানোর পর দক্ষিণ চিন সাগর ধরে ভিয়েতনামের দিকে এগোচ্ছে হাইয়ান।
সাইক্লোন-প্রবণ এই দ্বীপরাষ্ট্রে বছরে এত বার ঝড় হয় যে তা মোটামুটি গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে দেশবাসীর। এ বছরই যেমন ২৩টা বড়সড় ঝড় বয়ে গিয়েছে ফিলিপিন্সের উপর দিয়ে। তা বলে হাইয়ান যে সব দিক থেকে আলাদা, এক বাক্যে স্বীকার করছেন সকলেই। ফিলিপিন্স এমন ঝড় আগে দেখেনি তো বটেই, বিশ্বের চারটে সব চেয়ে শক্তিশালী ঝড়ের তালিকাতেও হাইয়ান ঢুকে পড়েছে, মত মার্কিন আবহাওয়া দফতরের এক কর্তার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.