কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সুন্দরবন-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ২৭টি ব্লকে বিদ্যুদয়নের জন্য তিন ঠিকাদার সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সব এলাকায় বিদ্যুদয়নের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় ওই তিন ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চলেছে রাজ্য সরকার। গত ৪ নভেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা শাসকের দফতরে বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের সঙ্গে ঠিকাদারদের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে বৈঠকও হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়করাও।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ও সাগর বাদে সুন্দরবন এলাকার ২৭টি ব্লকে বিদ্যুদয়নের জন্য ১৭৭ কোটি ৭৫ লক্ষ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা প্রকল্পে ২৭টি ব্লকের বিপিএল তালিকাভুক্ত ও সাধারণ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য তিন ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের মাধ্যেমে বিপিএল ও সাধারণ গ্রাহকদের তালিকাও তৈরি করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্লকের মৌজা অনুযায়ী কাজ শুরু করার জন্য তিনটি ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ওই সব এলাকার বিধায়ক ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের অভিযোগ, ঠিকাদার সংস্থা বিভিন্ন ব্লকে শুধু বিদ্যুতের খুঁটি পুঁতেই দায় সেরেছে। কোনও গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করেনি। বিশেষত পাথরপ্রতিমা, বাসন্তী, ক্যানিং ও নামখানা এলাকার অধিকাংশ জায়গায় শুধু খুঁটি পোতা হয়েছে। অথচ ঠিকাদার সংস্থা খুঁটি পোতার হিসেব অনুযায়ী কাগজে-কলমে বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়েছে বলে হিসেব পেশ করেছে বলে বিধায়ক ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের অভিযোগ। বৈঠকে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের সামনেই কয়েক জন বিধায়ক নিজের এলাকার বিদ্যুদয়ন নিয়ে অভিযোগ করেন। গত চার বছরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় এখনও পর্যন্ত ৩৭ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে।
বিদ্যুৎমন্ত্রী জেলার ২৭টি ব্লকের বিদ্যুদয়নের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করার জন্য বিধায়ক ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ঠিকাদার সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী এলাকার বাস্তবিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি পুর্ণাঙ্গ রিপোট পেশ করা জন্যও বিধায়কদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বৈঠকে জেলায় লাগামছাড়া বিদ্যুৎ চুরির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টিও উঠে এসেছে। তবে রাজস্বের ঘাটতি পূরণে বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধি হলে বিদ্যুৎ চুরি আরও বাড়বে বলে বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিধায়কেরা।
২৭টি ব্লকে বিদ্যুদয়নে ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে যে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ঠিকাদার সংস্থার এক প্রতিনিধি বলেন, “লোকবল নয়। সুন্দরবনের দ্বীপ এলাকায় যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক কোন্দল ও জমিজটের কারণে অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা যাচ্ছে না। ট্রান্সফরমার বসানো নিয়েও জমির সমস্যা রয়েছে। সেই কারণে বহু এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা সত্ত্বেও সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। কাজ করতে গিয়ে এই সব প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়তে হচ্ছে। এ নিয়ে আমরাও রিপোর্টে সব জানাব।”
জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ অরবিন্দ প্রামাণিক বলেন, “অর্থ বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও ঠিকাদারদের গড়িমসির জন্য সুন্দরবন এলাকায় বিদ্যুদয়নের কাজ আটকে রয়েছে। বিষয়টি বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে জানিয়েছি। এ নিয়ে রিপোর্টও পেশ করা হবে।”
মণীশবাবু জানান, বিদ্যুদয়ন নিয়ে ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।
|